দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট দল মাঠে নামাতে পারেনি পূর্ণ শক্তির একাদশ। কাগিসো রাবাদা, মার্কো ইয়ানসেন, লুঙ্গি এনগিদি, আইনরিখ নরকিয়া, রাসি ফন ডার ডাসেন ও এইডেন মার্করামের মতো তারকারা ব্যস্ত আইপিএলে। তারপরও দুই টেস্টের সিরিজে তাদের কাছে রীতিমতো অসহায় আত্মসমর্পণ করে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। বাজেভাবে ব্যর্থ হওয়ায় প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন মুমিনুল হক। তবে দেশে ফিরে টাইগার টেস্ট অধিনায়ক জানালেন চাপের মাঝেও নির্ভার থাকার কথা। ঘটনাবহুল দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষ করে গতকাল দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ দলের প্রথম বহর। সকালে তাদেরকে বহনকারী বিমান অবতরণ করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। আরও দুই ভাগে ভাগ হয়ে বাকি সদস্যরা আসবেন আজ।
সফরের শুরুতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন দলকে লড়তে হয়েছিল পুরো শক্তির প্রোটিয়াদের বিপক্ষে। তবে টেস্ট সিরিজে সঙ্গী হয় একরাশ হতাশা। বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ড সফরে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ঐতিহাসিক জয় থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস ও নিয়মিত মুখদের ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা দল- দুইয়ে মিলে বাংলাদেশ দলকে ঘিরে ছিল ভালো কিছুর প্রত্যাশা। কিন্তু ছিটেফোঁটা প্রতিদানও দিতে পারেনি মুমিনুলবাহিনী। দুই টেস্টেই বাজেভাবে হেরেছে বাংলাদেশ। বড় কথা দুই টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ১০০-এর নিচে অল-আউট হয়েছে বাংলাদেশ। এমন হারের পর নতুন কোনো অজুহাত দিতে চাইলেন না মুমিনুল, ‘দেখুন অনেক সময় ক্রিকেটের ক্ষেত্রেই না সব ক্ষেত্রেই- আপনি যেটা আশা করবেন তার বিপরীতটাও হতে পারে। আপনার প্রতিপক্ষ এমন কিছু করবে যাতে আপনি সারপ্রাইজ হবেন। কিন্তু ওই লেভেলে গিয়ে আমি আশা করিনি এ কারণে এটা হয়েছে, এটা কোনো অজুহাত না। টপ লেভেলে খেলতে হলে অপ্রত্যাশিত ব্যাপারগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। আমার কাছে মনে হয় আমরা এটির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারিনি।’
মহারাজ, হার্মারের স্পিনের সামনে যেভাবে বাংলাদেশের ব্যাটাররা আত্মসমর্পণ করেছে তাঁতে কোয়ালিটি স্পিনারদের বিপক্ষে ব্যাটারদের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। যে কারণে মুমিনুল বললেন টেস্টে জয় কিংবা পরাজয়- দুটো থেকে শিক্ষা নেওয়ার ব্যাপার রয়েছে, ‘দুটো ম্যাচ হেরেছি- আপনি জেতেন বা হারেন, প্রতি সিরিজে শেখার অনেক কিছু থাকে। আপনি যদি শেখা বাদ দেন তাহলে উন্নতি করতে পারবেন না। আমার কাছে মনে হয় ব্যাটিংয়ে স্পিন কীভাবে হ্যান্ডেল করবেন। টেস্ট ক্রিকেটে কিছু সেশন থাকে যেখানে আপনি ডমিনেট করবেন আবার কোনো সেশন থাকবে ডমিনেট করবেন না। পেস বোলাররা নতুন ও পুরনো বলে কীভাবে বোলিং করবে। শেষ সেশনে কীভাবে বোলিং করবে, তো শেখার অনেক কিছুই আছে।’
মাঠে নেতৃত্ব দানের সক্ষমতা নিয়ে নানা মহল থেকে প্রশ্ন ওঠায় বেশ বিপাকে আছেন মুমিনুল। তবে এক প্রশ্নের জবাবে গণমাধ্যমকে তিনি বললেন, গায়ে মাখছেন না চাপ, ‘রেজাল্ট না করলে বিশ্বের যে কোনো অধিনায়কের কাছেই চাপ আসবে। যদি দেখেন, (ইংল্যান্ডের টেস্ট দলনেত জো) রুট এক বছরে ছয়-সাতটা সেঞ্চুরি করেছে, তারপরও তার কাছে চাপ আসে (দল ভালো না করায়)। অধিনায়কত্ব এমনটা একটা জিনিস, আপনি পারফরম্যান্স না করলে চাপ আসবেই। (ক্রিকেটের) এই (আন্তর্জাতিক) পর্যায়ে আপনাকে চাপ নিতে হবে। আর আমি এটা নিয়ে চিন্তিত নই। একটা দেশকে প্রতিনিধত্ব করবেন, একটা দেশের অধিনায়ক হবেন, আপনার কাছে চাপ আসবেই।’ প্রশ্নকর্তা সংবাদকর্মীকে এই বাঁহাতি অভিজ্ঞ ব্যাটারের পাল্টা জবাব, ‘চাপ নিতে না পারলে তো হবে না, যেটা আমি বিশ্বাস করি। আপনি বিশ্বাস করেন কিনা আমি জানি না।’
কেবল অধিনায়কত্বের চাপ নয়, ব্যাটিং নিয়েও বিপাকে আছেন মুমিনুল। তার দক্ষিণ আফ্রিকা সফর কেটেছে দুঃস্বপ্নের মতো। দুই টেস্টের চার ইনিংসের সবকটিতে দুই অঙ্কে যেতে ব্যর্থ হন তিনি। তার স্কোর যথাক্রমে ০, ২, ৬ ও ৫। দলের বিপর্যয়ে ত্রাতা হওয়া তো দ‚রে থাক, ন্যূনতম প্রতিরোধও দেখা যায়নি তার ব্যাটে। তবে পোর্ট এলিজাবেথে দ্বিতীয় টেস্টের পর তিনি জানিয়েছিলেন, নিজের বাজে ফর্ম নিয়ে উদ্বিগ্ন নন। বরং এবারের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে চান সামনে, ‘আমার কাছে যেটা গুরুত্বপ‚র্ণ, এই সিরিজে যে ভুল করেছি, পরের সিরিজে যেন না করি। পুনরাবৃত্তি হলে সেটা দেখার বিষয়।’
পরের সিরিজটি খুব দ‚রে নয়। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে আগামী ৮ মে ঢাকায় আসবে শ্রীলঙ্কা দল। মুমিনুলের বিশ্বাস, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে দল, ‘পরিকল্পনা তো অবশ্যই আছে (ঘুরে দাঁড়ানোর)। সবাই চিন্তা করে এসব নিয়ে। এমন না যে এই প্রথম আমরা এই পরিস্থিতিতে পড়েছি। আগেও অনেক পড়েছি। বেরও হয়েছি এখান থেকে। আমরা জানি কীভাবে এখান থেকে বের হতে হবে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন