চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দ‚রত্ব দেড়শ কিলোমিটারের মতো। তবে মুমিনুল হকের কাছে ঘুচে যায় একদমই। কক্সবাজারে নিজের বাড়িতে তিনি যতটা নিরাপদ, চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামের ২২ গজও যেন ঠিক ততটাই আপন আঙিনা। এই এক মাঠেই ৭টি টেস্ট সেঞ্চুরি তো সেই কথাই বলছে! এই মাঠের সঙ্গে মুমিনুলের সেই বন্ধনের কথা জানেন জেমি সিডন্সও। বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচের আশা, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সামনের টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি আসবে মুমিনুলের ব্যাট থেকে!
এমনিতে মুমিনুলের ফর্মের যা অবস্থা, তাতে সিডন্সের এই কথা হাসির খোরাকই জাগাতে পারে বেশি। সবশেষ ৭ টেস্ট ইনিংসে বাংলাদেশ অধিনায়কের সর্বোচ্চ ইনিংস ৩৭ রানের। সবশেষ ১২ ইনিংসে তার ফিফটি ¯্রফে একটি। এই ১২ ইনিংসের ৯টিতেই আউট হয়েছেন দু অঙ্ক ছোঁয়ার আগে।
মুমিনলের ফর্মের অবস্থা ফুটে উঠছে সংখ্যাতেই। তবু তাকে নিয়ে বড় আশা করতে পারছেন সিডন্স। চট্টগ্রামে অনুশীলনে মুমিনুলের ব্যাটিং নিয়ে বেশ কিছুটা সময় কাজ করতে দেখা গেল ব্যাটিং কোচকে। তবে সেই কাজ করার জন্য নয়, সিডন্স ভরসা রাখতে পারছেন খেলা চট্টগ্রামে বলেই, ‘আমি ওকে বলেই যাচ্ছি, সে চট্টগ্রামে ৯টি সেঞ্চুরি করেছে (আসলে ৭টি) এবং এবার আরেকটি সুযোগ আরও গোটা দুই সেঞ্চুরি করার। এই মাঠ সে ভালোবাসে। আমরা চেষ্টা করছি তাকে তৈরি করে তুলতে এবং সে দারুণ আত্মবিশ্বাসী।’
মুমিনুলের ১১ টেস্ট সেঞ্চুরির ৭টিই এই জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে। তার ক্যারিয়ার ব্যাটিং গড় ৩৯.৪৮, এই মাঠে সেই গড় ৬৬.৮৩। শুধু এই মাঠ নয়, মুমিনুল আত্মবিশ্বাসী হতে পারেন প্রতিপক্ষ দেখেও। যে ১০টি দেশের বিপক্ষে তিনি টেস্ট খেলেছন, সবচেয়ে বেশি ব্যাটিং গড় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই (৫৮.৯৩)। সবচেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই ৪টি। দেশের বাইরে তার একটিই টেস্ট সেঞ্চুরি, সেটিও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই।
এই মাঠ আর এই প্রতিপক্ষের আরেকটি মেলবন্ধনও তাকে উজ্জীবিত করতে পারে। ২০১৮ সালে এই মাঠে লঙ্কানদের বিপক্ষেই তিনি করেছিলেন এক ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরি। এবার তার কাছ থেকে সেটিরই পুনরাবৃত্তি দেখতে চান সিডন্স। সমস্যা হলো, অতীত পরিসংখ্যান যতটাই সমৃদ্ধ হোক, প্রতিটি ইনিংসের শুরুটা হয় শূন্য থেকেই। মুমিনুলের লড়াইটাও তাই হবে নতুনই।
ব্যাটিং যদিও সিনিয়রদের দায়িত্ব দিয়ে কিছুটা নির্বার থাকার সুযোগ আছে, বোলিং? নিয়মিত একাদশের তিন বোলার নেই। আরও একজনকে পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে আছে সংশয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নামার আগে সবচেয়ে বেশি চিন্তার নাম হতে যাচ্ছে বোধহয় বোলিং বিভাগ। চট্টগ্রাম এসে টানা দুদিন নিবিড় অনুশীলন করে শ্রান্ত বাংলাদেশ দল গতকাল দলের কোন কার্যক্রমই রাখেনি। করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় ক্রিকেটারদের নাগাল পেতে টিম হোটেলে গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকার ছিল। সেখানে দুপুর পর্যন্ত কারো দেখা নেই। হালকা জিম শেষে শরীরকে আরাম দিতে সবাই তখন নিজ নিজ কক্ষে বিশ্রামে। দুপুর বেলা লবিতে নেমে আসেন তরুণ পেসার রেজাউর রহমান রাজা।
চোটে পড়ে আগে থেকেই স্কোয়াডে নেই তাসকিন আহমেদ ও মেহেদী মিরাজ। সাকিব আল হাসান কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ায় নেই দলের সঙ্গে। দলে থাকা শরিফুল ইসলামও পুরো ফিট কিনা তা নিয়ে সামান্য সংশয় কাজ করছে। এতজন না থাকলেও রাজার একাদশে ঠাঁই পাওয়া কঠিন। ইবাদত হোসেন ও খালেদ আহমেদ সামলাবেন পেস আক্রমণের ভার। স্পিনে আছেন তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসানরা। তবে ঘরের মাঠে একটি বাড়তি স্পিন অপশনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে বড় হয়ে। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত খেললে তিনি বিবেচিত হন ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে। তবে পেসার রাজা জানালেন, মিরাজ-সাকিব-তাসকিনরা না থাকার ঘাটতি ইতিবাচকভাবেও মিটতে পারে, ‘যেহেতু তারা আমাদের সেরা খেলোয়াড়, তারা থাকলে আমাদের বাড়তি সুবিধা থাকত। যারা ওদের বদলে খেলবে মুখিয়ে থাকবে যে কীভাবে ভাল পারফরম্যান্স করে দলকে লম্বা সার্ভিস দেওয়া যায়।’
সবচেয়ে অভিজ্ঞ হিসেবে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুলকে নিতে হবে বড় দায়িত্ব। মিরাজের জায়গায় সুযোগ পেলে নাঈমকে লেট অর্ডারে ব্যাট হাতেও ভ‚মিকা নিতে হবে। বাকিদের হয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে রাজা জানালেন, ঘাটতি প‚রণে দলের সবাই প্রস্তুত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন