গুঞ্জনটা মাথা চাড়া দিয়েছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছিল তার ব্যাটিং, দলও পারফর্ম করছে না- এই অবস্থায় টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুমিনুল হক। নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। গতকাল বিকেলে বোর্ড সভাপতির গুলশানের বাসায় গিয়ে বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে এই খবর দেন মুমিনুল। বিসিবি প্রধান তাকে অধিনায়ক থাকতে অনুরোধ করলেও মুমিনুল নিজে তার ব্যাটিংয়ে মন দিতে চান। বিসিবি প্রধানের বাসা থেকে বেরিয়ে সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে মুমিনুল জানান, দলকে অনুপ্রেরণা দিতে না পেরে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি, ‘যখন আপনি ভাল খেলবেন দলের জন্য ফল নাও হয় তবু দলকে মোটিভেট করতে পারবেন। আমার কাছে মনে হয়, আমিও ভাল খেলতে পারছি না। দলও ফলাফল করতে পারছে না। এই অবস্থায় অধিনায়কত্ব করা খুব কঠিন। আমার কাছে মনে হয় এই সময় না করাই ভাল (অধিনায়কত্ব)।’
শ্রীলঙ্কা সিরিজ শেষ হওয়ার পর থেকেই অধিনায়কত্ব নিয়ে আলোচনায় ছিলেন মুমিনুল। টানা রান খরায় থাকায় তার নেতৃত্ব হয়ে পড়ে প্রশ্নবিদ্ধ। সোমবার ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস জানান, রান না পাওয়ায় অধিনায়কত্ব মুমিনুলের কাছে চাপ হয়ে গেছে। এই ব্যাপারে তাই মুমিনুলকেই নিতে হবে সিদ্ধান্ত। গতকাল বিকেলেও বোর্ড সভাপতি জানান, এই মুহ‚র্তে কোন বদলের পক্ষে নন তারা। মুমিনুলের অধিনায়কত্ব নিয়েও নন উদ্বিগ্ন। তবে মুমিনুলের সঙ্গে আলাপের পর বাকি সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। সেই আলাপেই মুমিনুল জানিয়ে দেন নিজের সিদ্ধান্তের কথা, ‘আমি অনুভব করি আমার ব্যাটিংয়ে যদি মনোযোগ দিতে পারি তাহলে ভাল। উনারা এখন সিদ্ধান্ত নেবেন।’
মুমিনুল ব্যক্তিগতভাবে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করলেও এ ব্যাপারে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিসিবি। মুমিনুল বলেছেন, বোর্ড সভাপতি তাঁকে অধিনায়কত্ব চালিয়ে যেতে বললেও ব্যক্তিগতভাবে তিনি সেটি চান না। আগামীকালের বোর্ড সভার পরই এ ব্যাপারে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেই টেস্ট দলে নতুন অধিনায়ক দেখা যাবে কি না, সেটি নিশ্চিত হয়নি এখনো। এরই মধ্যে মুমিনুলকে অধিনায়ক করেই দল ঘোষণা করেছে বিসিবি। মুমিনুল অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ায় টেস্টের নেতৃত্ব দেওয়া হতে পারে সাকিব আল হাসানকে। তার সঙ্গে নাকি প্রাথমিক আলোচনাও সেরে রেখেছে বিসিবি। মুমিনুলের ঘোষনার কিছু পরে বিসিবি মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ টিটু জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো শেষে যুক্তরাষ্ট্র হয়ে ক্যারিবিয়ায় দলের সঙ্গে যোগ দেবার কথা থাকলেও এরই মধ্যে দেশে ফিরেছেন দেশসেরা অলরাউন্ডার। তবে সেটি অধিনায়কত্ব নিয়ে আলোচনার জন্য কি-না সেটি নিশ্চিত করেননি তিনিও।
সাকিব টেস্ট দলের অধিনায়ক ছিলেন আগেও। তার ওপর আইসিসির বহিষ্কারাদেশের কারণে ২০১৯ সালের অক্টোবরে এই মুমিনুলকে টেস্ট দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগে দুই মেয়াদে বাংলাদেশ দলকে ১৪টি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব, জয় তিনটিতে ও হার ১১টিতে। ২০০৯ সালে মাশরাফি বিন মুর্তজার চোটের কারণে সিরিজের মধ্যেই আপৎকালীন অধিনায়ক করা হয় সাকিবকে। সেটাই তার প্রথম নেতৃত্বে আসা। সাকিবের দ্বিতীয় মেয়াদের অধিনায়কত্বের শুরু ২০১৮ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে। কে জানে, আরেকটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে হয়তো আরও একবার টেস্টের নেতৃত্ব উঠবে সাকিবের হাতে।
২০১৯ সালে এই সাকিবের ওপর আইসিসির নিষেধাজ্ঞার পর টেস্ট অধিনায়কত্ব দেওয়া হয়েছিল মুমিনুলকে। তার নেতৃত্বে ১৭টি টেস্ট খেলে বাংলাদেশ জিতেছে ৩টিতে। এর মধ্যে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়টিও আছে, বাকি দুইটি জয় এসেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তবে সা¤প্রতিক সময়ে ব্যাটসম্যান মুমিনুলের সময়টা একদমই ভালো যাচ্ছে না। সর্বশেষ ৯ ইনিংসে মাত্র একবার দুই অঙ্ক ছুঁয়েছেন তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ, তিন ইনিংসে মুমিনুলের রান-২, ৯ ও ০। মিরপুরে শ্রীলঙ্কা সিরিজের শেষ টেস্টের পর বিসিবি সভাপতির সঙ্গে টেস্ট নেতৃত্ব নিয়ে এক দফা আলোচনা হয়ে যায় মুমিনুলের। সেই আলোচনাতেও মুমিনুল বলেছিলেন, অধিনায়কত্বের চাপ হয়তো তার ব্যাটিংয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন