মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক জুম‘আয় মিম্বারে আরোহণকালে প্রথম সিঁড়িতে পা রেখে বললেন, ‘আমীন’। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সিঁড়িতেও পা রেখে বললেন, ‘আমীন’। জুম‘আ সালাত শেষে সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনি ব্যতিক্রম করলেন আজ! রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি মিম্বারে দাঁড়ানোর সময় জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম এসে আমাকে বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতামাতাকে বার্ধক্যে পেল অথচ তাদের খেদমত করে বেহেশত কিনে নিতে পারল না সে ধ্বংস হোক, আপনি বলুন আমীন। আমি বললাম, ‘আমীন’। দ্বিতীয় ধাপে পা রাখার মুহূর্তে বলা হল, যে ব্যক্তি রমজান পেল অথচ জীবনের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করিয়ে নিতে পারল না সে ধ্বংস হোক, বলুন আমীন। আমি বললাম, ‘আমীন’। তৃতীয় ধাপে পা রেখে জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম বললেন, যার সামনে আপনার নাম উচ্চারিত হয় অথচ আপনার ওপর দরূদ পড়ে না সে ধ্বংস হোক, আপনি বলুন আমীন। আমি বললাম, ‘আমীন’।
হাদীসটির একটি অংশ হচ্ছে- যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও নিজের জীবনের গুনাহ-খাত্বা ক্ষমা করিয়ে নিতে পারল না সে ধ্বংস হোক। রহমত, বরকত, মাগফিরাত তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তির এ মাসের শেষে সবারই আত্মসমালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন যে, আমি পূর্ণ সওয়াব প্রাপ্তির আশা নিয়ে রমজানের রোজা পালন করে জান্নাত ক্রয় করে নিতে পারলাম, নাকি হেলায়-খেলায় কোন মতে রমজান পার করে দিলাম, অথচ নাজাতের ব্যবস্থা হল না। আল্লাহর নবী (স.) বলেছেন, রোজা রেখেও যে মিথ্যা কথা, অন্যায়-অশ্লীলতা পরিত্যাগ করতে পারল না, আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই তার পানাহার ত্যাগের। পক্ষান্তরে হাদীসে কুদসীতে বলা হয়েছে, বনী আদমের সব আমলের সওয়াব সাত থেকে সত্তর গুণ পর্যন্ত প্রদান করা হয়। কিন্তু একমাত্র রোজা। বান্দা আল্লাহর জন্যই খাস করে রোজা রাখে এবং তার প্রতিদান আল্লাহ নিজ হাতে দেবেন বা নিজেই তার বদলা হয়ে যাবেন। এবার প্রতিটি মুসলিম রোজাদারের নিজেকে প্রশ্ন করার সময় এসেছে, আমরা কোন কাতারে দাঁড়ালাম। আল্লাহর হাত থেকে প্রতিদান প্রাপ্তির হক্বদার হলাম, নাকি জিবরীল আমীন আলাইহিস সালামের বদদোয়ার হক্বদার হলাম।
না, হতাশ হবার কোনো কারণই নেই। এখনও যে দু’দিন আমাদের হাতে রয়েছে, সকল প্রকার গুনাহ থেকে তাওবা করে যদি আল্লাহর কাছে একান্তভাবে আত্মসমর্পণ করা যায় তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তার নেক বান্দাদের মধ্যে শামিল করে নেবেন। রমজানের প্রায় শেষ মুহূর্তে আল্লাহ আমাদের সবার বড়-ছোট সব গুনাহ ক্ষমা করে দিন এবং পবিত্র ঈদের দিন আমাদের মাসুম হিসেবে কবুল করে নিন। আমীন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন