প্রশ্ন : ইসলামে ২ জন নারীর সাক্ষ্যের সমান ১ জন পুরুষের সাক্ষ্য। ইসলামের দৃস্টিতে কি তাহলে নারী ও পুরুষ সম মর্যাদার না?
উত্তর : পাশ্চাত্যের নারী পুরুষ সমতার ধারণা ভুল। অতএব, এ ধারণা থেকে চিন্তা করলে ইসলামের সমতার দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা যাবে না। চিন্তাটি করতে হবে মানুষের স্রষ্টা ও বিধাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নীতি অনুযায়ী। ইসলামে নারী ও পুরুষের মর্যাদা অবশ্যই সমান। এমনকি নানা পর্যায়ে নারীর মর্যাদা পুরুষের চেয়ে বহুগুণ বেশি। তবে মানবজীবনে কেবল মর্যাদা দিয়ে জীবনের সবকিছু চলে না। এখানে মর্যাদা, ক্ষমতা, অধিকার ও দায়িত্ব নিয়ে মানুষে ব্যক্তিত্ব গঠিত হয়। নারীর মর্যাদা ক্ষমতা ও অধিকার পুরুষের চেয়ে বেশি। কিন্তু দায়িত্ব কম। আবার নারীর একটি দায়িত্ব আছে যা শত পুরুষের দায়িত্বের চেয়ে বড় ও ভারি। এর নাম মাতৃত্ব। এটি কোনো পুরুষ পালন করতে পারবে না। মর্যাদাও এমনই। নবী করিম সা. কে এক লোক প্রশ্ন করলো, হযরত আমি কার সেবা করবো, নবীজি উত্তরে বললেন, তোমার মায়ের। লোকটি আবার জিজ্ঞাসা করলো, এরপর কার? হযরত জবাব দিলেন, তোমার মায়ের। লোকটি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলো, হে রাসুল এরপর কার? প্রিয় নবী আবারও জবাব দিলেন, তোমার মায়ের। লোকটি ফের প্রশ্ন করলো, হে আল্লাহর রাসুল এরপর কার? তখন চতুর্থবারের মতো জবাব দিতে গিয়ে নবী করিম সা. বললেন, তোমার বাবার। আল হাদীস। এ প্রশ্নোত্তরে নারীর মর্যাদা যে পুরুষের চেয়ে তিনগুণ বেশি তা কি স্পষ্ট নয়? এরপর ধরা যাক, নারীর জীবন জীবিকার কথা। পৃথিবীর সব নারী ও তাদের শিশুরা পুরুষদের কাঁধেই আমানত হয়ে আছে। এটি আল্লাহর প্রাকৃতিক বিধান। শরীয়তও প্রকৃতি অনুযায়ীই তৈরি। এরপরও নারীর মালিকানা ও নিজ অঙ্গনে কর্তৃত্ব ইসলামে স্বীকৃত। তবে, নারীর মাতৃত্ব, নারীত্ব, সতিত্ব, ঈমান ও সম্মান রক্ষার্থে তাদের সেফটির ওপর জোর দিয়েছে। পুরুষের চালচলন, জীবিকার কঠোর বোঝা, কঠিন দৈহিক শ্রম, অনিরাপদ চলাচল ইত্যাদি থেকে নারীকে দূরে রেখেছে। এটি তার প্রতি অবহেলা নয় বরং তার বিকল্পহীন দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের জন্যই করেছে। কেননা, মানব শিশুর জন্ম, ধারণ-লালন, সংসারের পরিচালনা, পুরুষের শান্তিময় আশ্রয় সবই নারীর কাজ। এ হিসাবে নারীকে সুখি, নিরাপদ, নির্ঝঞ্জাট, পবিত্র ও সুরক্ষিত রাখা ইসলামের অভিপ্রায়। তবে, নারীর মাতৃত্বের প্রয়োজনেই প্রকৃতি তাকে যে বৈশিষ্ট্য, নিয়মিত অসুস্থতা, শারীরিক গঠন, স্বভাবগত মায়াময়তা ইত্যাদি দিয়েছে, সেসব অস্বীকার করে বা বিকৃত করে পুরুষের সংগে নারীর নিঃশর্ত অংশগ্রহণ ইসলাম সম্মত নয়। যে জন্য নারী পুরুষে অবাধ মেলামেশা শরীয়তে হারাম। তবে, প্রয়োজনে শরীয়তের শর্ত পালন সাপেক্ষে, পর্দা, দৃষ্টি সংযম ইত্যাদি পালন করে আর্থ সামাজিক লেনাদেনা বৈধও রেখেছে। কেবল ইসলামী উম্মাহর ইমারত (খেলাফতের প্রধান) ও মুসলিম জামাতের ইমামত (পুরুষের জামাতের ইমামতি) ছাড়া নারী অন্য সবকিছুতেই ভূমিকা রাখতে পারে। এটি নারীর প্রতি অবজ্ঞা নয় বরং মাতৃত্বের বৈশিষ্ট্যের প্রতি পরম শ্রদ্ধা। তবে, অধিক স্নেহ, নম্রতা ও কোমলতা এবং ক্ষেত্র বিশেষে ভীরুতা, অমনোযোগিতা, পরিবেশ জ্ঞানের সল্পতা দরুণ বোধের সীমাবদ্ধতার জন্য (অল্প ব্যতিক্রম ছাড়া) সাধারণত নারীরা সব সময় সবক্ষেত্রে স্বাভাবিক মন-মানসিকতা ধরে রাখতে পারে না। কিসে তাদের মঙ্গল, তা তিনি ছাড়া আর কে বুঝবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন