শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাহিত্য

খারাপ

অয়েজুল হক | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

পাজেরো গাড়ীতে ওঠার সময় শফিককে এক পলক দেখেই হতবিহ্বল প্রত্যক্ষদর্শীর মতো থমকে দাঁড়িয়ে যায় মাসুদ। এত্তো দামী গাড়িতে শফিক! পোশাক আশাকে বিরাট ভদ্রলোক। ভদ্রলোকদের তলা থাকলে বলা যেত দশ তলা ভদ্রলোক। উচ্চতা পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্যে ভদ্রলোক মাপা যায়না বলেই হয়তো বলা যায়না তিনি এভারেস্ট টাইপ ভদ্রলোক, তিনি উড়ে চলা মেঘের মতো ভদ্রলোক, আকাশের মতো ভদ্রলোক। মুহুর্তেই ভাবেন, বাড়িটা চেনা দরকার। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রিকশাওয়ালা কে বলেন,দ যাবে নাকি?

- কই যাইবেন?
- ওই পাজেরো গাড়ী যেদিক যায় সেদিকে।
রিকশাচালক বড় বড় চোখে তাকায়। এইডা তো প্লেন না, রিকশা; বুঝলেন। রিকশা নিয়ে পাজেরো গাড়ী ধরবে! পাগল একখান। বাজে কথা বল কেন? আমি হলাম গ্রামের স্কুলের মাস্টার। আফনে গ্রামের মাস্টার হন না লন্ডনের মাস্টার হন তা দিয়ে আমার কোন কাম আছে। ‹ কথা শেষ করেই লোকটা সিগারেট জ্বালায়। সিগারেটে কষে টান মেরে বলে, ‹ওনাকে তো চিনেন না। এলাকার কিং। বয়স হইছে তাতে কী? কথা কইলে পিশাব করে দেবেন।
তাতে সমস্যা নেই। ব্যাগে আরেক সেট কাপড় আছে। পঞ্চাশ সেট থাকলেও লাভ হবেনা। ওনার নাম খান শফিকুর রহমান সাহেব! আগে ছিলেন কিং ভাই, এখন হইলো রিং ভাই।
রিং ভাই মনে! ওনার কথা, কাজে ঝামেলা পাকালে সোজা রিংয়ে ঝুলায় দেন।
ছোট বেলার বন্ধু মাসুদ বুঝে উঠতে পারেনা মন্দ স্বভাবের কারণে লোকজন যাকে বাটপার শফি না বললে চিনত না সেই লোক কিভাবে ঢাকা শহরে এসে খান শফিকুর রহমান সাহেব হয়ে গেল! যার যা ইচ্ছা তাই হোক। মাথা থেকে চিন্তা ঝেড়ে নিজের কাজে মনোযোগী হন। তিনি এসেছেন আন্তর্জাতিক দূর্নীতি বিরোধী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগদান করতে। সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠানের কার্ড পান। অনুষ্ঠানে শফিকের নাম দেখে আরেকবার চমকে ওঠেন। মূর্খ, বাটপার এখন সমাজ সেবক! শক্ত হাতে কার্ড রাস্তায় ছুড়ে ফেলে বিড়বিড় করে বলেন, রাতের গাড়িতেই বাড়ি ফিরছি লিলা। হ্যাঁ হ্যাঁ আসছি। এইতো এখনই টিকেট কাটব। চোরের মুখে ধর্মের কাহিনী শিখতে এসেছি। লিলা মাসুদ মাস্টারের স্ত্রী। কথার স্টাইল- যেন মোবাইলে কথা বলছেন, অপর প্রান্তে লিলা তার কথা শুনতে পাচ্ছে।
মাসুদ সাহেব একবুক কষ্ট নিয়ে গ্রামে ফিরে গেলেও শফিক সাহেবের বুকের ভেতর আনন্দ কিলবিল করে। ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বিশেষ অতিথি। গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, নেতাদের কাতারে তিনিও বসবেন , খায় খাতির হবে। তার ইনকামের পথ , নিরাপত্তা হবে সুদূর প্রসারিত। মনে মনে ঠিক করে রেখেছেন, দুর্নীতিবিরোধী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হবে, দূর্নীতি বিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়া! এই হোক দূর্নীতি বিরোধী দিবসের প্রত্যাশা।
বুক ভরা খুশি নিয়ে বাড়ি ফেরা। বাড়িতে স্ত্রী কেয়া আর একমাত্র ছেলে নজরুল। আদুরে ছেলে , বয়স পঁচিশ। তার মাথায় কোন সমস্যা ছিলনা। ইদানীং শফিক সাহেবের মনে হচ্ছে তার মাথায় সমস্যা। ডাক্তার দেখানো দরকার। সারাক্ষণ বিড়বিড় করে। মাঝেমাঝে চিতকার। মাঝরাতে শোনা যাবে, অশ্রাব্য ভাষার গালিগালাজ। তার রুমে সে একাই। ঝনঝন শব্দে কখনো গ্য­াস- প্লেট, কখনো শোকেসের কাচ ভেঙে চুরমার করবে। ছুটে গিয়ে দেখা যাবে, ঘামে ভেজা শরীর। ভাঙাচোরা গ্য­াস- প্লেটের ভেতর নির্ভীক ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝরাতে কী শুরু করেছিস? প্রশ্নের জবাবে সে সহজ ভাবে বলবে, শুটিং প্রাকটিস করছি। সামনে অডিশন। সে নায়ক। নায়িকার সাথে তার বিরাট এক চরিত্র আছে। সেই চরিত্রে অভিনয় করতে হবে। ছেলেকে ডাক্তার দেখানোর আগের কাজটা হল , তাকে কে বা কারা টেলিফিল্মের নায়কের জন্য মনোনীত করার কথা বলে প্রতারণা করছে তাদের খুঁজে বের করা। নজরুল যে নায়কের মতো নয়, ভিলেনের মতোও নয় বলা হয়েছে। তার উত্তরে সে জানতে চেয়েছিল তাহলে সে কিসের মতো?
শফিক সাহেব কিছুটা রেগেই বলেন, হিজড়া টাইপ।
হিজড়া চরিত্রেও তো অভিনয় হয়।
সেই ছেলে আজ পথ আগলে দাঁড়িয়ে বলে, এই.... বাবা আর এক পা সামনে এগোবে না। তোমার দূর্নীতির প্রাসাদ ভেঙে আমি তামান্না কে নিয়ে কুড়ে ঘর বানাব। শফিক সাহেবের মাথায় রাগ ওঠে। ওরে তামান্না। এক পা এগুব না! আমার বন্দুক টা কই। আজ তোকে গুলি করে মারব বদমাশ।
নজরুল বলে, লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন।
চিতকার শুনে কেয়া ছুটে আসে। ছেলেকে বুকে আগলে বলে,› শাক সবজি দিয়ে শুরু, তারপর বিদেশে মানব পাচার। টেন্ডার বাজি। এখন শিল্পপতি। চাঁদাবাজির ব্যাবসা। ছেলে আর কী হবে? তোমাদের মতো মানুষের জন্য ডেংগু রুগী লাখ ছাড়িয়েছে। সামনে কী হয় কে জানে!
স্ত্রী বাধা হয়ে দাড়ানোতে শফিক সাহেব আর বেশিদূর এগোতে পারেন না। মিনমিন করে বলেন, ‘ আমি খারাপ।’
- খারাপ তবু ভাল, তুমি তার চাইতেও খারাপ।
- খারাপ হলে মানুষ আমাকে দূর্নীতি বিরোধী দিবসের অতিথি করতো?
কেয়া বিজ্ঞাপনের মত হাসে। বয়স হয়েছে এই যা। সামনে বাধাই করা দুটো দাঁতের হাসি, ‹ নীতি! তোমাকে ফেলে সেই কবেই অনেক দূর চলে গেছে।
-নীতি চলে গেছে!আমি কী নিয়ে আছি?
- তুমি আছ দূর্নীতি নিয়ে।মনে হয় আর বেশিদিন পারবে না। শফিক সাহেব উত্তেজিত কন্ঠে বলে, রাখ তোমার নীতি। ধুর নীতি।
নজরুল আছে শুটিং নিয়ে, সে পিতা-মাতার উত্তেজিত কন্ঠের চিতকার শুনে বলে,› লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন