বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি আধা স্বায়ত্তশাসিত সরকারি সংস্থা। এটি দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের প্রাণকেন্দ্র। এখানে এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। ১৯৫৯ সাল থেকে এফডিসি থেকে চলচ্চিত্র নির্মিত হতে থাকে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের প্রথম চেয়ারম্যান এবং নির্বাহী পরিচালক ছিলেন যথাক্রমে আবুল খায়ের (১৯৫৭-৫৮) এবং নাজির আহমেদ (১৯৫৭-৬২)। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এই সংস্থার নাম বদল করে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন’ নামকরণ করা হয়। একসময়ের ব্যস্ততম এই চলচ্চিত্র কারখানা এখন নিশ্চল ও অলস পড়ে আছে। চলচ্চিত্রের শুটিং-ডাবিং নেই বললেই চলে। ফাঁকা এফডিসি এখন যেন অনেকটা অরক্ষিত। সাধারণ মানুষ ও ইউটিউবারদের অবাধ যাতায়াত। যখনই কোনো তারকা এফডিসিতে আসেন তাদের ভিড়ে এক বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হন। এর মধ্যে ঘটে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। এর ফলে অনেক শিল্পীই এখন এফডিসিতে আসতে চান না। বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াতের কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে অনেকেই এফডিসি আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া এফডিসিতে আসেন না। গত ১৮ আগস্ট এফডিসিতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হন অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস। তার ব্যাগে থাকা মূল্যবান মোবাইল, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রসহ ব্যাগটি চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কেপিআই ভুক্ত এলাকা এফডিসির ভেতরে ইউটিউবার ও সাধারণের অবাধ যাতায়াতের কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি। এফডিসিতে চুরির ঘটনা ও সাধারণের অবাধ যাতায়াতের বিষয়টি নিয়ে এফডিসির গণসংযোগ কর্মকর্তা হিমাদ্রী বড়–য়াকে অফিসে পাওয়া যায়নি। তার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, চুরির ঘটনা তিনি জানেন এবং সেইদিন ওই অনুষ্ঠানে তিনি নিজেও উপস্থিত ছিলেন। এই চুরি ঘটনার সাথে কারা জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই চুরির ঘটনায় বাহিরের মানুষ নয়। এটা ভিতরের লোকই করেছে। পুলিশ এটা নিয়ে খোঁজ করছে। যারা এইসব চুরির ঘটনা ঘটিয়ে থাকে পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এখনো কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। সাধারন মানুষ ও ইউটিউবারদের প্রবেশাধিকারে আরও সতর্কতার দরকার আছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে হিমাদ্রী বড়–য়া বলেন, আমরা যথেষ্ট সতর্ক এই ব্যাপারে। ভিতরে প্রবেশকালে প্রত্যেককেই চেক করা হচ্ছে। তারপরও কেউ কেউ ঢুকে পড়ছে। কত আটকানো যায়! জীবনজীবিকার কারণে অনেকেই চলে আসে এখানে। এদিকে, এফডিসিতে ভবন নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় বন্ধ রয়েছে প্রবেশের মূল ফটক। প্রবেশের সুবিধার্থে খোলা হয়েছে অস্থায়ী প্রবেশদ্বার। সেখান দিয়েই সাধারণ মানুষ অবাধে যাতায়াত করছে। গেটে নিরাপত্তারক্ষী থাকলেও তাদের উদাসীনতা কাজে লাগিয়ে অনেকেই প্রবেশ করছে। এফডিসির মতো কেপিআইভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যদি সাধারণ মানুষ ও ইউটিউবারদের অবাধ যাতায়াত না ঠেকানো যায়, তাহলে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে পারে বলে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন