শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

কোটি কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে ব্যবসায়ীরা মানবেতর জীবন-যাপন করছে হাজারো শ্রমিক

৩ বছরেও আশুগঞ্জ নৌ বন্দরের আইসিটি অফিস স্থাপন হয়নি

| প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোঃ হুমায়ূন কবির আশুগঞ্জ (ব্রাক্ষণবাড়িয়া) থেকে : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নদীবন্দরের আভ্যন্তরীন কন্টিনাল টার্রমিনাল আইসিটি গত তিন বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। এতে জমির অধিগ্রহণকৃত জটিলতার কারণে বিপাকে পড়েছে জায়গার মালিকরা। প্রস্তাবিত স্থানে রাইছ মিলসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা
প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় ব্যবসায়িরা। এতে কোটি কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে তারা। এর সাথে জড়িত হাজারো শ্রমিক মানবেতর জীবন-যাপন করছে বলে জানা যায়। এদিকে আশুগঞ্জ নদীবন্দরের আভ্যন্তরীন কন্টিনাল টার্রমিনাল আইসিটি নির্মাণের জন্য দ্রæত জমির অধিগ্রহণকৃত জটিলতার নিরসণে সরকার কাজ করছে বলে জানান নৌ-বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ২০১৩ সালের মার্চে আশুগঞ্জে নদী বন্দরের আভ্যন্তরীন কন্টিনাল টার্রমিলার নির্মাণে বিআইডবিøউটি ও ভারতের একটি কর্নসাটেল টিম সরকারি ও ব্যাক্তি মালিকানাধীন কিছু জায়গা নির্ধারণ করেন। পরে জমি অধিগ্রহণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রাংশের ক্ষতিপুরণে দুই দফা নোটিশ দেয়া হয়। এর পর থেকে বন্ধ রয়েছে চাতালকলসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠিান। এদিকে গত তিন বছরে বাস্তবায়ন হয়নি আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল। কোটি কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। মানবেতর জীবন-যাপন করছেন হাজারো শ্রমিক। জায়গা নিয়ে জটিলতার কারণে নতুন করে ২৬ একর জায়গার মূল্য নির্ধারণ করে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ। নতুন করে জরিপের কাজ চলছে। এছাড়া নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি নিয়ে আতঙ্কে আছেন অনেকেই। অধিগ্রহণকৃত জায়গা কবে নিয়ে যায়, এই আশংকায় স্থায়ী স্থাপনাও করতে পারছে না তারা। এদিকে টাকা না পাওয়ায় অন্যস্থানে বাড়ি করাও সম্ভাব হয়নি তাদের।
আশুগঞ্জ উপজেলা নিবাহী অফিসার আমিরুল কায়ছার জানান, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধিনে আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরের আইসিটি টার্রমিনাল নিমাণ করার বিষয়ে ২০১৩ সালে একটি প্রস্তাব দাখিল করা হয়েছিল। কিন্তু প্রস্তাবটি ৬ ধারার পর্যায়ে যখন ইন্সট্রুম্যান্ট দাখিল করা হয়। প্রত্যাশী সংস্থা যথা সময়ে টাকা জমা দিতে না পারার কারণে প্রথম দফা প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যায়। তবে বর্তমানে নতুন করে এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে এবং ২৬ একর জায়গার মূল্যনির্ধারণ করে নৌ-মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে এই কর্মকর্তা জানান।
বিআইডবিøউটিএ আশুগঞ্জ নৌ-ট্রাফিক পরিদর্শক মো. শাহ আলম জানান, সরকারের জমি নিয়ে কিছু জটিলতার কারণে আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরের আইসিটি অফিস বাস্তবায়নে সময় লাগছে। নতুন করে জরিপের কাজ চলছে। জায়গার জটিলতা নিরসণে নতুন করে ২৬ একর জায়গার মূল্য ৩শ’ ২৫কোটি টাকা নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরের এই কর্মকর্তা জানান।
জানা যায়, ১৯৭২ সালের নৌপ্রটোকল চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিদ্যমান নৌ-বাণিজ্য প্রটোকলের অধীনে গত বছরের ৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এর উপস্থিতিতে যৌথ উদ্দ্যোগে প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড (পিআইডবিøউটিটি) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এদিকে চলতি বছরের গত ১৬ জুন নৌ-মন্ত্রী শাজাহান খান বাংলাদেশ- ভারত ট্রান্সশিপমেন্টর শুভ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দু‘দেশের মধ্যে নৌ-প্রটোকল চুক্তির আওতায় ট্রাজিটের আনুষ্ঠানিক ভাবে পণ্য পরিবহন কার্যত্রæম শুরু হয়। ইতিমধ্যে ট্রানজিটের আওতায় আশুগঞ্জ নদী বন্দর ব্যবহার করে ভারত পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল, খাদ্যশস্য, লৌহজাত পণ্যসহ দফায় দফায় পণ্য পরিবহন করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানান, বাংলাদেশ- ভারত পুরোদমে ট্রানজিট চালু করার আগে আশুগঞ্জ নৌবন্দর ও আখাউড়া স্থলবন্দরসহ রাস্তা-ঘাটের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং নৌপথের নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য নৌ-পথে প্রায় ৯‘শ কিঃ মিঃ নদী পথ খনন করা হবে। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহার করে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় এসব পণ্য পরিবহন করা হয়েছে তা থেকে প্রতি টনে ১৯২ টাকা ২২ পয়সা হারে মাশুল আদায় করা হয়েছে ।এছাড়া ভয়েজ পারমিশন ফি, পাইলট ফি, বার্দিং (অবস্থান) ফি, ল্যান্ডিং ফি, চ্যানেল চার্জ ও লেবার হোলিং চার্জসহ জাহাজটি থেকে অতিরিুক্ত আরো অর্থ আদায় করা হয়েছে বলেও আরো জানা যায়।এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহার করে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ট্রঙ্কলড়ি ও খোলা ট্রাকে করে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে এ পণ্য পরিবহন করেছে। ইতিপুর্বে বিশেষ মানবিক কারনে দু’দফায় ফি ছাড়াই আশুগঞ্জ নদী বন্দর ব্যবহার করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল এবং খাদ্যশস্য ট্রানজিট করেছিল ভারত।
এদিকে বাংলাদেশ- ভারত নিয়মিত ট্রানজিট চালু হলে এখানে আইসিটি অফিস, ওয়ার হাউজ স্থাপন, রাস্তা- ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট নিমাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামো বাস্থবায়ন করার কথা থাকলেও তা আজও বাস্তবায়ন করা হয়নি। নৌ-পথে প্রায় ৯শ’ কি. মি. নদী পথ খনন করার কথা থাকলেও আলোর মুখ দেখেনি এখনো।তবে কর্তৃপক্ষ বলছে দ্রæত বাস্তবায়ন হবে। বাংলাদেশের নৌপথ ও স্থলপথ ব্যবহার করে বার বার ভারতীয় পণ্য ত্রিপুরা রাজ্যে ট্রান্সশিপমেন্ট করা হলেও অবকাঠামো বাস্তবায়ন এবং রাস্তা-ঘাটের সংস্কারসহ জমি সংক্রান্ত জটিলতা সমাধান না হওয়ায় এই নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়িক ও জমির মালিকরা চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হতাশা হয়ে পড়েছে তারা ।
বাংলাদেশ- ভারত পুরোদমে ট্রানজিট চালু করার আগে আশুগঞ্জ নৌবন্দর ও আখাউড়া স্থলবন্দরসহ রাস্তা-ঘাটের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং নৌপথের নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য নদীপথ খননের দাবিসহ জমির মালিক ও ব্যবসায়িদের কথা চিন্তা করে আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরের আইসিটি অফিস নির্মাণে জমির জটিলতা দ্রæত সমাধান করে বিআইডবিøউটিএ‘কে কার্যকরী প্রদক্ষেপ নেয়ার জন্য দাবি করেন সংশ্লিষ্ঠমহল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন