প্রশ্ন : আমাদের দেশে পশু কোরবানি দেয়া হয় মূলত জবাই করে; এতে প্রাণীর অনেক কষ্ট হয়। এটা খুব নিষ্ঠুরতা মনে হয়। এক কোপে যদি মাথা থেকে পশুর দেহ আলাদা করা হতো তাহলে পশুর কষ্ট কম হতো। আল্লাহর নাম নিয়ে এক কোপে যদি মাথা থেকে পশুর দেহ আলাদা করা হয়, তাহলে কোরবানি হবে কি?
উত্তর : আমাদের দেশে শুধু নয়, পৃথিবীর সব দেশেই মুসলমানরা পশুকে এভাবেই জবাই করেন। মুসলমানরা নিজের ইচ্ছায় করেন না, এভাবে আল্লাহ ও রাসূল (সা.) করতে বলেছেন বলেই করেন। আপনার কাছে জবাই করাটা কষ্টের কিংবা নিষ্ঠুরতা মনে হলেও পশুর স্রষ্টা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এভাবেই প্রয়োজনে পশু জবাইয়ের হুকুম দিয়েছেন। বিজ্ঞানেও প্রমাণিত আছে যে, মাথায় ধরে পশুকে মাটিতে শুইয়ে দিলে কিংবা তার গলদেশে অবস্থিত প্রধান তিনটি রগ কেটে দিলে সাথে সাথেই পশুটির মস্তিষ্ক বোধ ও অনুভূতি শক্তি হারিয়ে ফেলে। তখন দেখতে যেমনই মনে হোক, পশুর মারাত্মক কোনো কষ্ট বা যন্ত্রণা হয় না। এ সময়টিতে তার দেহের প্রবাহিত রক্ত (যা হারাম) সজোরে নির্গত হয়ে শেষ হয়। কয়েক মিনিট তার দেহ আন্দোলিত হওয়ার সুযোগ শরিয়ত এ জন্য রেখেছে যে, তার দেহের প্রতিটি শীরা-উপশীরা ও কোটি কোটি কোষ থেকে মানুষের জন্য ক্ষতিকর পদার্থ রক্তের সাথে যেন নিঙড়ে বের হয়ে যেতে পারে। এক কোপে মাথা আলাদা করা বা বলি দেওয়ার পদ্ধতি ইসলামী শরিয়ত সমর্থন করে না। এতে জবাইয়ের উদ্দেশ্য ও রহস্য কোনোটাই পূরণ হয় না। জবাই করাই ইসলামের পদ্ধতি। এ পদ্ধতি ছাড়া কোরবানি আদায় হবে না। এভাবেই হালাল পশু জবাই করতে হবে। উটের ক্ষেত্রে নহর পদ্ধতিও স্বীকৃত। জেনে রাখা উচিত, তিনটি রগ কাটার পর পশুকে রক্ত প্রবাহিত হয়ে সে নিস্পন্দন হওয়া পর্যন্ত সময় দেয়া ওয়াজিব। এর আগে ছোট ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে গলার হাঁড়ের মধ্যকার রগগুলো কেটে দিয়ে দ্রুত মেরে ফেললে, যদি যথেষ্ট পরিমাণ প্রবাহিত রক্ত নিঙড়ে বের হওয়ার আগেই পশুটি মারা যায়, তাহলে তার গোশত হালাল হওয়া নিয়েও যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। সুতরাং ইলেকট্র্রিক শক কিংবা কোপ মাথা আলাদা করে ফেলা জায়েজ নয়। পশুদের প্রতি দয়ার বিধান হিসেবে নবী করিম (সা.) কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এক পশুকে আরেক পশুর সামনে জবাই না করা। বেশি সময় বেঁধে ফেলে না রাখা। তীক্ষ্ম ধারালো ছুরি ব্যবহার করা। তার প্রাণ বের হয়ে থিতু হওয়ার আগেই চামড়া ছোলা শুরু না করা ইত্যাদি শরিয়তে রয়েছে।
প্রশ্ন : শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মিথ্যা বলার অনুমতি রয়েছে?
উত্তর : মিথ্যা বলা কোনো ক্ষেত্রেই অনুমোদিত নয়। শরিয়তে সত্যকে সর্বত্রই উৎসাহিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সত্য মুক্তি দেয়, মিথ্যা ধ্বংস আনে। সামাজিক আচরণবিধি সম্পর্কিত মাসয়ালা পাওয়া যায় যে, বিবদমান দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং নির্দোষ ব্যক্তির প্রাণ রক্ষার লক্ষ্যে কখনো অপ্রিয় সত্যটি গোপন করা বা অসত্যকে তুলে ধরার অনুমতি রয়েছে। কোনো বৈধ বিষয়কে প্রতিষ্ঠিত করতে বা অধিকার সুরক্ষার জন্য দ্ব্যর্থবোধক বা অস্পষ্ট কথা বলার অনুমতি শরিয়তে রয়েছে। তবে যে কোনো পরিস্থিতিতে সত্য বলাই শরিয়তের মৌল দর্শনের দাবি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন