অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের টার্গেট করে লাখ লাখ টাকা প্রতারণার অভিযোগে ৪ প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ।
পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তাররা কেউ ইঞ্জিনিয়ার আবার কেউ বড় ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেদেরকে স্মার্টলি উপস্থাপন করেন। তাদের সুমিষ্ট কথায় প্রলোভিত হয়ে অনেক বড় বড় কর্মকর্তারাও তাদের ফাঁদে ফেঁসে যান। তারা দীর্ঘদিন ধরে এ প্রতারণার জাল বিস্তৃত করলেও একই অফিসে দু’একটির বেশি প্রতারণা করে না।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের নাম- মো. হায়দার আলী, মো. রেজাউল করিম, মো. নাসির উদ্দিন ও মো. আব্দুল কাদের।
শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) মোহাম্মদপুরের পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি ও কলাবাগান থানার বশিরউদ্দিন রোড এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবি মিরপুর বিভাগের মিরপুর জোনাল টিম।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মুঠোফোন ও প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া ২০ লাখ ৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
রোববার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, চলতি মাসের শুরুতে অবসরপ্রাপ্ত একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রতারক চক্রের একজন ফোন করে বাংলাদেশ নেদারল্যান্ড রিসাইক্লিং পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্পের কর্মচারি হিসেবে পরিচয় দেন। কথাবার্তার এক পর্যায়ে তিনি অতিরিক্ত সচিবকে তাদের প্রজেক্টে কনসালটেন্ট পদে চাকরির প্রস্তাব দেন। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য ভিকটিম গত ১৬ অক্টোবর প্রতারকদের দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী মিরপুর মডেল থানার পীরেরবাগে একটি অফিসে যান।
সেখানে ভিকটিমের সাথে গ্রেপ্তার হায়দার আলীর পরিচয় হয় এবং কনসালটেন্ট পদে নিয়োগ সংক্রান্ত আলোচনা হয়। পরের দিন তিনি বায়োডাটা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সেই অফিসে প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের সাথে দেখা করেন। এ সময়ে প্রতারক চক্রের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে ব্যবসা সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা করেন।
চক্রের ১ সদস্য নিজেকে ইমপোর্টারের ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দেন। সে অন্যান্য সদস্যদের জানায়, তার ভারতীয় বস ১৬ কোটি টাকার চশমা, হাতঘড়ি, ক্যামেরা কিনবে। এসব পণ্য ইমপোর্ট করে ভারতীয় বসকে সরবরাহ করলে ৩০% লাভ হবে। এসব মালের নমুনা সংগ্রহ করে ভারতীয় বসকে দেখাতে হবে যার জন্য ৭৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। প্রতারক চক্রের সদস্যরা ভিকটিমকে উক্ত ব্যবসায় শেয়ারে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়। ভিকটিম প্রথমে রাজী না হলেও প্রতারকদের প্রলোভনের কারণে এক পর্যায়ে তিনি ব্যবসায় বিনিয়োগে আগ্রহী হন। এজন্য তিনি ১৯ অক্টোবর প্রতারকদের কথা মতো ৫ লাখ টাকা দেন।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তী সময়ে প্রতারক চক্রের সদস্যরা ভিকটিমকে জানায় নমুনা সংগ্রহ করে ভারতীয় বসকে দেখানো হয়েছে এবং নমুনা তিনি পছন্দ করেছেন। এরপর গত ২০ অক্টোবর ভিকটিম প্রতারকদের অফিসে যান এবং দেখতে পান ভারতীয় বস তাদেরকে ৩০% অগ্রিম বাবদ ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার চেক প্রদান করেছেন। প্রতারকরা ভিকটিমকে জানায় তারা আমদানিকারককে ৩০% অর্থাৎ ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা দিতে চাইলে ইমপোর্টার পুরো টাকা ১৬ কোটি টাকা পরিশোধ না করলে মালামাল দিবেন না। উল্লেখিত মালামাল কেনার জন্য প্রতারকরা ভিকটিমকে আরও ৫০ লাখ টাকা দিতে বলেন। একপর্যায়ে ভিকটিম তাদের প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন। তখন তিনি ডিবি পুলিশের সহায়তা নেন।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে গোয়েন্দা প্রধান আরও বলেন, তারা একইভাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তাকে প্রতারিত করে ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
গ্রেপ্তাররা স্বল্প শিক্ষিত হলেও তারা কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার আবার কেউ বড় ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেদেরকে স্মার্টলি উপস্থাপন করেন। তাদের সুমিষ্ট কথায় প্রলোভিত হয়ে অনেক বড় বড় কর্মকর্তারাও তাদের ফাঁদে ফেঁসে যান। তারা দীর্ঘদিন ধরে এ প্রতারণার জাল বিস্তৃত করলেও একই অফিসে দু’একটির বেশি প্রতারণা করে না। এদের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক প্রতারণার মামলা রয়েছে। তারা গ্রেপ্তারর হচ্ছেন, জামিন পাচ্ছেন আবার একই কাজে লিপ্ত হচ্ছেন, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি প্রতারণা মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে আছে এবং প্রতারক চক্রের অন্যান্য পলাতক সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
অপরিচিত লোকের সাথে পরিচিত হয়েই অতিলোভে নগদ লেনদেন না করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেয়ার পরামর্শ দেন গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন