মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

ছাত্রলীগ নেতা শান্ত কুমার নবীনগরে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৩:২০ পিএম | আপডেট : ৩:২৮ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ব্যবসা করার কথা বলে কোটি কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যাওয়া ছাত্রলীগ নেতা শান্ত কুমার রায়ের খোঁজ মেলেনি গত ৫ দিনেও। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা গত তিনদিনে নবীনগর থানায় ১২টি অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ জানায়, তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন। পুলিশের ধারনা শান্ত কুমার রায় দেশত্যাগ করেছে।

অভিযুক্ত শান্ত কুমার রায়-(২৮) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের নির্মল রায়ের ছেলে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। গত শনিবার রাত থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।

অভিযোগকারীরা জানান, শান্ত কুমার রায় স্বর্ণ, সিগারেট ও স্টক ব্যবসা ( মজুদ ব্যবসা) করার কথা বলে ও তাদেরকে ব্যবসার লভ্যাংশ দেয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে গত শনিবার রাত থেকে উধাও হয়ে গেছেন।

এই ঘটনায় ভুক্তভোগীরা গত তিনদিনে নবীনগর থানায় পৃথক পৃথক ১২টি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার ৭টি, বুধবার ৩টি এবং বৃহস্পতিবার ২টি অভিযোগ দায়ের করা হয়।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, শান্ত কুমার রায় তাদেরকে চট্টগ্রামে তার একাধিক স্বর্ণের দোকান থাকার কথা, ডলার ও স্বর্ণের দাম বেড়েছে, পুরাতন স্বর্ণ কিনে স্টক করে বেশি লাভে বিক্রি করবে এবং সবাইকে টাকার অনুপাত হারে লভ্যাংশ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।
শান্ত কুমার রায়ের অভিনব কৌশল ছিলো, তিনি সবাইকে বলতেন লেনদেনের বিষয়টি যাতে অন্য কেউ না জানে।

অভিযোগকারীরা জানান, প্রথম দিকে শান্ত কুমার রায় তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে লাভসহ ফেরত দিয়ে আস্থা অর্জন করেছেন। এলাকায় তার অফিস ছিলো, সে গাড়ি ব্যবহার করতো। এসব দেখে তার প্রতি সবার বিশ্বাস জন্মেছিলো।

গত মঙ্গলবার রাতে শান্ত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে নবীনগর থানায় প্রতারণার অভিযোগ করেছেন নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড়াইল গ্রামের শ্যামল চন্দ্র দাস, হক সাব, আব্বাস উদ্দিন, সুজন মিয়া, অক্লান্ত দেবনাথ ও নিখলী গ্রামের খোরশেদ আলম এবং বড়িকান্দি গ্রামের ছগির আহমেদ।

শান্ত কুমার রায় এই ৭জনের কাছ থেকে ১ কোটি ৯ লাখ টাকা ধার নিয়েছেন। গত বুধবার সন্ধ্যায় ও বৃহস্পতিবার তার বিরুদ্ধে আরো পাঁচজন ব্যবসায়ী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শান্ত কুমার রায় বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা, একই গ্রামের আতিকুর রহমানের কাছ থেকে ৩ লাখ ৮ হাজার টাকা, বড়িকান্দি ইউনিয়নের মুক্তারপুর গ্রামের শাহ জালালের কাছ থেকে ৫৩ লাখ, ধরাভাঙ্গা গ্রামের বাবলু মিয়ার কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা, বাড়াইল গ্রামের মাহফুজুর রহমানের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা ও নরসিংদী জেলার মুরাদনগরের বাদল মিয়ার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৭ লাখ ৮ হাজার টাকা ধার নিয়েছেন।

সলিমগঞ্জ বাজারের রনি বিকাশ দোকানের সত্ত্বাধিকারী আতিকুর রহমান বলেন, শান্ত কুমার রায় স্বর্ণের ব্যবসার কথা বলে গত পাঁচ-ছয় মাস ধরে আমার বিকাশের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করে আসছিল। স্বর্ণের পাশাপাশি স্বর্ণের বার কিনবে বলে টাকা পাঠাত। এলাকার পরিচিত মানুষ হিসেবে আমিও তাকে টাকা দিতাম। টাকা পাঠানোর পরদিন বা সপ্তাহের মধ্যে টাকা ফেরত দিয়ে দিত। গত বৃহস্পতিবার রাতে ২ লাখ টাকা এবং শনিবার রাতে ১ লাখ ৮ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে নিয়েছে। বলেছিলো রোববার দিয়ে দিবে। কিন্তু রোববার থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ। এ ঘটনায় মঙ্গলবার এলাকার সাতজন থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমিও থানায় অভিযোগ দিবো। তিনি বলেন, এমন প্রতারণা স্বপ্নেও ভাবিনি।

একই বাজারের মা টেলিকমের সত্ত্বাধিকারী আতিকুর রহমান বলেন, শান্তর সাথে তার বাবাও জড়িত। বাবা-ছেলে মিলে বলেছে চট্টগ্রামে তাদের তিন-চারটি স্বর্ণের দোকান রয়েছে। তারা জানিয়েছে, নবীনগরের সলিমগঞ্জ বাজার থেকে পুরাতন স্বর্ণ কিনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে নিয়ে বিক্রি করে। গত এক বছর ধরে আমার সাথে শান্ত লেনদেন করে আসছিলো। লেনদেনের সময় শান্ত বলেছিল বিষয়টি যেন অন্য কোনো ব্যবসায়ী না জানে। ব্যবসার লাভ থেকে আমাকে লভ্যাংশ দিবে বলে প্রলোভন দেখিয়েছে। তিনি বলেন, প্রথমদিকে টাকা নিয়ে ১০-১৫দিনের ভেতর দিয়ে দিত। ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা করে নিত। এক পর্যায়ে পরিমানটা ৩০ লাখে গিয়ে দাঁড়ায়। তখন আমি আর টাকা দিতে চাইনি। সে সময় শান্ত জনতা ব্যাংকে তার একটি হিসাবে ৯৫ লাখ টাকা এবং অন্য ব্যাংকের আরেকটি হিসাবে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা আছে বলে জানিয়েছে। ডলার ও স্বর্ণের দাম বাড়ছে তাই স্বর্ণ স্টক করছে। পরে বিক্রি করবে এবং আমাকে লভ্যাংশ দিবে বলে জানায়। পরে আমি আমার এক বোনের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা এনে তাকে দিয়েছি। সর্বশেষ তাকে ৫৩ লাখ টাকা দিয়েছি। বিনিময়ে ৫৩ লাখ টাকার একটি চেক শান্ত আমাকে দিয়েছে। তিনি বলেন, এনজিও ও কিস্তি থেকে এনেছি ১৮লাখ টাকা। বর্তমানে আমি ৩৫লাখ টাকা ঋণ আছি। পরে টাকা আরও টাকা চেয়েছিল। কিন্তু আমি আর দেইনি। তখন সে আমাকে ৫০-৬০ হাজার টাকা করে কয়েক দফায় লভ্যাংশ দিয়েছে। স্বর্ণ বিক্রি করে পুজি ৫৩ লাখ টাকাসহ লাভও দিবে বলে প্রলোভন দেখিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা চট্টগ্রামে শান্তর বাবার সাথে দেখা করতে যাব। আদালতে মামলাও করব ।

ভাই ভাই মেশিনারি ষ্টোরের সত্ত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শান্ত আর আমি ছোটবেলায় প্রাইমারীতে এক সাথে পড়াশোনা করেছি। পরে আমি ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়ে যাই। শান্ত এলাকায় বাড়ি, গাড়ি, অফিস নিয়ে মানুষের মধ্যে আস্থার জন্ম দিয়েছে। বন্ধু হওয়ার কারনে প্রথমে আমার কাছ থেকে বিকাশে এক লাখ টাকা নিয়েছে। বিশ্বাস থেকে আমিও দিয়েছি। দেড় থেকে দুই বছর ধরে লেনদেন করে আসছিলাম। নিত, দিত এভাবেই চলছিল। এক পর্যায়ে আমার কাছ থেকে নেওয়া টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০ লাখ টাকা। গত রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় আমাকে টাকা দেওয়ার কথা ছিল। বেলা ১১টা থেকে তার সকল নাম্বার বন্ধ। রোববার তার সর্বশেষ অবস্থান কুমিল্লা জেলার শশীদল এলাকায় দেখিয়েছে। তিনি বলেন, শান্ত টাকা নেয়ার সময় বলতো বিষয়টি যেন অন্য কোনো ব্যবসায়ীকে না জানাই। বিষয়টি সবাই জানত না। পরে জানাজানি হয়েছে।

সলিমগঞ্জ বাজারের ঢাকা কনফেকশানারীর সত্ত্বাধিকারী বাবলু মিয়া বলেন, আমার বিকাশের ব্যবসা আছে। শান্ত কয়েক দফায় ১১লাখ নিয়েছেন। দোকান বাকি পাওনা ২০ হাজার টাকা। গত শনিবার আমার বোন জামাই বাদল মিয়ার কাছ থেকে নেন ৫ লাখ টাকা। তিনি বলেন, আমরা থানায় অভিযোগ দিবো।

এ ব্যাপারে শান্তের সাথে কথা বলার জন্য সাংবাদিকরা তার মোবাইল ফোনে কয়েকদফা চেষ্টা করলেও মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফু উদ্দিন আনোয়ার বলেন, এ পর্যন্ত শান্ত’র বিরুদ্ধে নবীনগর থানার ১২টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। আমরা ধারনা করছি তিনি দেশত্যাগ করেছেন।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) সিরাজুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগ নেতা শান্তর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত নবীনগর থানায় ১২টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে। তবে তিনি দেশের বাইরে চলে গিয়ে থাকতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
jack ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৫:২৮ পিএম says : 0
এই ব্যাটাদের শ্বশুরবাড়িতে ইন্ডিয়া>>>>>>>>>> ইন্ডিয়াতে খুঁজলেই পাওয়া যাবে><><><
Total Reply(0)
hassan ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৫:২৩ পিএম says : 0
মানুষ কি জানেনা আওয়ামী লীগ মিথ্যাবাদী যারা ওকে টাকা দিয়েছে তারা হচ্ছে লোভী কোথায় আছে লোভে পাপ পাপে মৃত্যু ভালোই হয়েছে
Total Reply(0)
Md. Altaf Hossain ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৭:৩৮ পিএম says : 0
যারা টাকা দিচ্ছে তাদের ও মনে হয় অবৈধ টাকা । বাচ বিচার না করেই টাকা দিযা দিচ্ছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন