শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাহিত্য

শতবছরের সাহিত্যের পালাবদল

উৎপলেন্দু পাল | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০২২, ১:২২ এএম

সাহিত্য নদীর অপ্রতিরোধ্য গতিপথে এখন নতুন ধারা যোগ হইছে। দিন দিন এই ধারার প্রবাহের গতি বাড়তাছে। রোজ নতুন নতুন লেখক যোগ দিতাছেন এই ধারায়। তারা এই ধারার ইস্তেহার পইড়া এই ধারায় সামিল হইছেন নতুন ধারার প্রতি একটা ভালোবাসা গইড়া উঠছে আমাগো মধ্যে। ঘোষিত ইস্তেহারের (২০২১) দেখানো পথে বাংলাদেশ-ভারতের সবাই মিলে আমরা সামিল হইছি সব জাইন্যা বুইঝাই। এই ধারায় রেশম লতা কবির আহমেদ রুমী, মিয়্রমান মুকুল, আশিফ আলতাফ, আমিন সাদিক, উত্তম কুমার দাশ, মুকুল হোসেন সহ বিশিষ্ট কবিরা নিয়মিত লেখতাছেন। অনেক তরুণেরাও এই মধূভান্ডের খোঁজ পেয়েছেন। একদিন হয়তো এমনও হইতে পারে যে এই ধারাই একটা নতুন নদীর সৃষ্টি করবে।
তবুও কারো কারো মনে এই ধারা লইয়া সংশয় থাইক্যা গেছে। সংশয় থাকতেই পারে , তবে যদি ভালো কইরা ইস্তেহার পড়েন তবে মনে হয় সংশয় দূর হইয়া যাবে । ইস্তেহারে জলবৎ তরলম্ ভাবে সব বুঝাইয়া দেওয়া আছে ।কেউ কেউ বলছেন , এত নিয়ম বাইন্ধা কি সাহিত্য হয় ? ৩০ দশকের আধুনিক কবিতার ইস্তেহার মেনেই কবিরা কবিতার চর্চা করে গেছেন আমি বলি , নিয়ম ছাড়া জগতের কোন কামডা হয় বলেন তো ? নিয়ম না থাকলে পথভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল । যদি আলাদা বৈশিষ্ট্য না থাকে তবে তো সব খিচুড়ি হইয়া যাইবো। খিচুড়ি সুস্বাদু বটে , তবে তা রোজ খাওয়া চলে না । তাতে রন্ধণের বৈচিত্র্যপূর্ণ স্বাদ সমূহ আস্বাদনে বঞ্চিত থাকতে হয়।
যদি আমি কিছু লেখি , সেটা গদ্য না পদ্য, বুঝবেন কি কইরা ? অবশ্যই বৈশিষ্ট্য দেইখ্যা । লিমেরিক চিনবেন কিভাবে , বৈশিষ্ট্য ছাড়া ? কবিতা আর অণুকবিতায় তফাৎ নিশ্চয়ই আছে । ছড়াট্টা , হাইকু তাদের নিজস্ব চরিত্রে বিরাজমান । পদ্য আর গদ্য কবিতায় বৈশিষ্ট্েযর কারিগরী । ছড়া আর কবিতায় যেটুকু তফাৎ তা কেবল বৈশিষ্ট্যগত নয় কি ? কোনটা আধুনিক কবিতা তা বোঝার নিশ্চয়ই উপায় আছে যেটা আপনারা ভালো জানেন । সেরকমই আধুনিক কবিতার বৈশিষ্ট্েযর সাথে নতুন ধারার কবিতার কিছুটা তফাৎ । এই তফাৎটা বুঝানোর জন্যই এই ইস্তেহার । সময়ের সাথে সাথে যদি আমরা পরিবর্তিত না হই তাইলে একদিন কালের অতলে হারাইয়া যাবো।
নতুন ধারার ইস্তেহার প্রকাশিত হইছে তা তো আপনেরা জানেনই। ইস্তেহারটা হইলো একটা কাঠামো। যেমন কুমারেরা প্রতিমা বানানের সময় বাঁশ , খড় , দড়ি দিয়া কাঠামো বানায় তেমন । তার উপর মাটির লেপ দিয়া , নকশা কাইট্যা , নাক মুখ চোখ ফুটাইয়া , রঙ কইরা মৃন্ময় মূর্ত্তি বানায় । তেমনই নতুন ধারার কাঠামোর ওপর আপনারা শব্দ , রূপক , অলঙ্কার লাগাইয়া , ছন্দের কারিগরি দেখাইয়া , উত্তম সাহিত্য সৃষ্টি করবেন। এতে সংশয়ের কী আছে ! আপনার কবিতায় পাওয়া যাইবো মাটির সোঁদা সুবাস , প্রকৃতির রঙ , রূপ , রস , নগর সভ্যতার অকৃত্রিম চালচিত্র । আপনার কবিতায় উইঠ্যা আইবো জীবনের জটিলতা , সম্পর্কের কথকতা , আধ্যাত্মিকতার চন্দনবাস , স¤প্রীতির উদার হাওয়া , পুরুষ নারীর সম্পর্কের টানাপোড়েন , প্রেম , বিরহ , নবরস । যৌনতাও আসতে পারে তবে যেন শালিনতার মাত্রা অতিক্রম না করে। ধর্ম আসতে পারে তবে ধর্মীয় গোঁড়ামি বা বিদ্বেষ নয় । রাজনীতি আসতে পারে তবে রাজনৈতিক নোংরামো বা রাষ্ট্রদ্রোহ নয়। যেসব লেখায় ধর্মীয় বা সা¤প্রদায়িক সুড়সুড়ি , নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বার্তা, তা বর্জনীয়। ইস্তেহার পইড়া একজন মন্তব্য করছে , এইখানে স্বাধীনতা নাই। উনি ইস্তেহারটা কতটুক বুঝতে পারছেন তাতে আমার সন্দেহ রইছে । কে কয় এখানে স্বাধীনতা নাই ? আপনি সাহিত্য রচনায় সম্পূর্ণ স্বাধীন । একটা স্বাধীন দেশে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যেমন সংবিধান থাকে , যাকে মান্য কইরাই আমরা চলি , তেমনই ইস্তেহারটাও নতুন ধারার সংবিধান । সংবিধান আমাদের স্বাধীনতাকে সুনিশ্চিত করে । রক্ষা করে মৌলিক অধিকার । এটা মান্য করা কখনোই স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয় । বরং এতে স্বাধীনতা গৌরবান্বিত হয় । মুক্ত চিন্তার বিকাশের পথ প্রশস্ত হয় । সংবিধান অমান্য করা মানেই নৈরাজ্েযর সৃষ্টি । যা কখনো কেউ বরদাস্ত করবে না।
তাহলে আসেন আমরা সব সংশয় ছুইড়া ফেলাইয়া নতুন ধারায় সামিল হই। যদি আপনাদের এবিষয়ে কোনো সুপরামর্শ থাকে তবে তা অবশ্যই বিবেচনা করা হবে বইলা আমার বিশ্বাস। এই কর্মযোয়ারে আপনেও একজন সহযোদ্ধা। আপনারাই এই ধারাকে আগামীর পথে সচল কইরা রাখবেন। আপনারাই পারেন সাহিত্যে নতুন বিপ্লব আনবার। আপনাদের যোগদান এই নতুন ধারার প্রবাহে নতুন গতি সঞ্চার করবো বইলাই আমার বিশ্বাস। আপনারাই বাংলা সাহিত্েযর অগ্রগতির অশ্বমেধের ঘোড়া। আশার কথা বাংলাদেশ ভারতের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজে ইতোমধ্যে নতুন ধারার বিষয়ক অনেক লেখা ছাঁপা হয়ে গেছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন