সকালেও ম্যাচের সমীকরণ ছিল এমন- জিতলেও সেটি যথেষ্ট না-ও হতে পারে বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের জন্য। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত খেলবে আগে-পরে, যেখানে তুলনামূলক ‘সহজ’ প্রতিপক্ষ দুই দলের জন্যই। ওই দুই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত জিতলেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত তাদের, মাঝে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচের ফল কোনো প্রভাবই ফেলবে না। তবে অ্যাডিলেডে দিনের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডস ঘটাল বিশ্বকাপের অন্যতম বড় অঘটন। দক্ষিণ আফ্রিকার হারে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সমীকরণটা হয়ে গেল সরল- জিতলেই সেমিফাইনাল!
তবে এমন সূবর্ণ সুযোগও হেলায় হারাল বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের দলকে কাঁদিয়ে শেষ চারের টিকিট কাটল বাবর আজমের দল। গতকাল অ্যাডিলেডে সুপার টুয়েলভের ম্যাচে ৫ উইকেটে জিতেছে পাকিস্তান। টস জিতে আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ১২৭ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে ১১ বল বাকি থাকতে জয়ের বন্দরে নোঙর করে বাবরের দল। একই দিন গ্রুপের শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে সেমিফাইনালের লাইনআপু চূড়ান্ত করেছে ভারত। ৭১ রানের বড় জয়ে রোহিত শর্মার দল ১০ নভেম্বরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ডের। তার আগের দিন প্রথম সেমিফাইনালের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশকে হারানো পাকিস্তান।
তবে অ্যাডিলেড ওভালে এদিন বাংলাদেশের বোলারদের চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে বেশ কিছু অতিরিক্ত রান দিয়ে ফেলে তারা। তাছাড়া, ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংও ছিল হতাশাজনক। ক্যাচের সঙ্গে রানআউটের সুযোগও হাতছাড়া করে তারা। আরও ছিল বেশ কয়েকটি মিস ফিল্ডিং। ইনিংসের তৃতীয় বলেই পাকিস্তানের উইকেট তুলে নেওয়ার সুযোগ হারায় বাংলাদেশ। বিশ্বকাপজুড়ে আলো ছড়ানো পেসার তাসকিন আহমেদের অফ স্ট্যাম্পের বাইরে পিচড হয়ে বেরিয়ে যাওয়া বল লেগেছিল রিজওয়ানের ব্যাটে। সুবিধাজনক উচ্চতায় থাকলেও তা গ্লাভসবন্দি করতে পারেননি উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান।
পরের বলেই সোহানের ভুলের ক্ষতকে গভীর করে আক্ষেপ বাড়ান রিজওয়ান। টপ এজে তিনি ছক্কা পেয়ে যান ফাইন লেগ দিয়ে। তাসকিনের পরের ওভারে ফ্লিক করে চার মারেন বাবর। সাকিব আক্রমণে এসে খরুচে বল করেন। পরপর দুই বলে বাউন্ডারি আদায় করেন রিজওয়ান। পাওয়ার প্লে শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৩৫ রান। রান রেট ছয়ের নিচে থাকলেও দুই ওপেনারের ওপর চাপ জেঁকে বসেনি। কারণ, সামনে থাকা বল ও রানের সমীকরণে ছিল না বেশি ব্যবধান। বাউন্ডারির চাহিদা না থাকায় হাত খোলার তাড়া দেখা যায়নি বাবর ও রিজওয়ানের মধ্যে। তারা সিঙ্গেল-ডাবল নিয়ে এগোতে থাকেন। একাদশ ওভারে ৫৭ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন নাসুম আহমেদ। প্রথমবারের মতো এবারের আসরে খেলতে নামা বাঁহাতি স্পিনার বিদায় করেন বাবরকে। টপ এজ হয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের তালুবন্দি হন বাবর। ৩৩ বলে ২ চারে তার রান ২৫।
পরের ওভারে আক্রমণে ফিরে উইকেট তুলে নেন পেসার ইবাদত হোসেন। তিনিও এই বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচে নেমেছিলেন। পয়েন্টে রিজওয়ানের ক্যাচ লুফে নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। রিজওয়ান ২ চার ও ১ ছয়ে ৩২ বলে ৩২ রান করেন। এক বলের ব্যবধানে ফের উল্লাসে মাততে পারত বাংলাদেশ। মাত্রই নামা মোহাম্মদ নওয়াজ ভুল বোঝাবুঝিতে হতে পারতেন রানআউট। কিন্তু শান্তর থ্রো স্টাম্প খুঁজে পায়নি। বরং ওভারথ্রোতে বাউন্ডারি পেয়ে যায় পাকিস্তান। বাংলাদেশের জেগে ওঠা ক্ষীণ আশা টেকেনি বেশিক্ষণ। চতুর্দশ ওভারে ইবাদতের ওপর চড়াও হন হারিস। কাভার ড্রাইভে চার মারার পর পুল করে পেয়ে যান ছক্কা। কমে আসে প্রয়োজনীয় রান ও বলের মধ্যকার ব্যবধান। লিটন দাসের সরাসরি থ্রোতে থামে নওয়াজের ইনিংস। ধুঁকতে থাকা বাঁহাতি ব্যাটার ৪ রান করেন ১১ বল খেলে। তবে জমে যায় হারিস ও শানের জুটি। চতুর্থ উইকেটে ১৪ বলে ২৯ রান যোগ করেন তারা।
তাসকিনের করা ইনিংসের ১৬তম ওভারে ১৬ রান তুলে ম্যাচের পাল্লা নিজেদের দিকে নেয় পাকিস্তান। ওই ওভারে ফ্রি-হিটে ছক্কা মারেন হারিস। পরের ওভারে সাকিবকে দুবার সীমানাছাড়া করেন শান। ১৮ বলে ১ চার ও ২ ছয়ে ৩১ রান করা হারিস সাকিবের শিকার হন। পয়েন্টে দারুণ ক্যাচ নেন নাসুম। এরপর ইফতিখারকে দ্রুত বিদায় করেন বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজ। ততক্ষণে অবশ্য ম্যাচের ফল প্রায় নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। ইবাদতের লো ফুল টস ডিপ স্কয়ার লেগে ঠেলে ডাবল নিয়ে পাকিস্তানের জয়ের লক্ষ্য মিলিয়ে ফেলেন শান। তিনি ১৪ বলে ২৪ রানে অপরাজিত থাকেন। অন্যপ্রান্তে থাকা শাদাব খানকে কোনো বল মোকাবিলা করতে হয়নি। তাসকিনের সঙ্গে বোলিংয়ের উদ্বোধন করা নাসুম ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় পান ১ উইকেট। একই স্বাদ নিতে সাকিব, মুস্তাফিজ ও ইবাদত দেন যথাক্রমে ৩৫, ২১ ও ২৫ রান।
এর আগে ইনিংসের মাঝপথে ভালো সংগ্রহের দিকে এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু একাদশ ওভারে সৌম্য সরকার ও আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে সাকিবের বিদায়ে খেই হারায় তারা। অন্য ব্যাটারদের ব্যর্থতার ভিড়ে উজ্জ্বল হয়ে থাকে ওপেনার শান্তর ফিফটি। শান্ত বলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৪ রান করেন। ৪৮ বলের ইনিংসে তিনি মারেন ৭ চার। তার বাইরে দুই অঙ্কের রানে পৌঁছাতে পারেন কেবল তিন ব্যাটার। পাকিস্তানের জার্সিতে দারুণ বোলিংয়ে আলো কাড়েন পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি। ২২ রান খরচায় তিনি পান ৪ উইকেট। ২ উইকেট নিতে লেগ স্পিনার শাদাব দেন ৩০ রান। ১০.৩ ওভারে টাইগারদের রান ছিল ১ উইকেটে ৭৩। পরের ৫৭ বলে ৭ উইকেট হারিয়ে কেবল ৫৪ রান আনতে পারে তারা। মোসাদ্দেক হোসেন ও সোহানের ব্যাটিং জাগায় তীব্র হতাশা। আফিফ ২০ বলে ২৪ রানে অপরাজিত থাকলেও চ্যালেঞ্জিং পুঁজি আর পাওয়া হয়নি বাংলাদেশের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন