বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

পাকিস্তানের স্মৃতিতে ’৯২

জাহেদ খোকন | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে চোখ পাকিস্তানের। একই লক্ষ্য গত আসরের রানার্সআপ নিউজিল্যান্ডেরও। এবারের আসরে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আজ মুখোমুখি হচ্ছে দু’দল। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এসসিজি) পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম সেমিফাইনালটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা ২টায়। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বে অনেক নাটকীয়তার পর গ্রুপ-২ এর দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিফাইনালে জায়গা পায় পাকিস্তান। এই টুর্নামেন্টের দুইবারের ফাইনালিস্ট তারা। ২০০৭ সালে প্রথম আসরে ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ হলেও ২০০৯ সালে দ্বিতীয় আসরে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পাকিস্তানিরা। তাদের সামনে তৃতীয়বার ফাইনালে খেলার হাতছানি। সুযোগটা ভালোভাবেই কাজে লাগাতে চান বাবর আজমরা। অন্যদিকে বিশ্বকাপে এবার শুরু থেকেই দূর্দান্ত খেলা নিউজিল্যান্ড গ্রুপ-১ এ সেরা হয়েই শেষ চারের টিকিট কাটে। গত আসরের ফাইনালিস্ট তারা। তবে ওই আসরে শিরোপার লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ঘরে তুলতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। সেই ক্ষত মুছতে এবার পাকিস্তানকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালের টিকিট কাটতে বদ্ধপরিকর কেন উইলিয়ামসনরা।

এ ম্যাচে পাকিস্তানের অনুপ্রেরণা হতে পারে ১৯৯২ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ওই আসরে অনেকটা খোঁড়াতে খোঁড়াতেই সেমিফাইনালে উঠেছিল পাকিস্তান। টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়তে পড়তে ভাগ্যের সহায়তায় কোনোরকমে শেষ চারে জায়গা পেয়ে কিউইদের ৪ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে উঠে বাজিমাত করেছিলেন ইমরান খানরা। ইমরানের বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্বে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ’৯২ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২২ রানে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলেছিল পাকিস্তান। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও একই চিত্র। তাই তো ম্যাচের আগে গতকাল পাকিস্তানের কোচ ম্যাথু হেইডেন বলেন, ‘এটি (১৯৯২ বিশ্বকাপ) সরাসরি প্রভাব ফেলছে না। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মিডিয়ার কল্যাণে ক্রিকেটভক্তদের একটি অংশ, খেলোয়াড়, সাপোর্ট স্টাফ, আমরা সবাই এই মিশনের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য বুঝতে পারি। ‘৯২ ওয়ানডে বিশ্বকাপ পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য স্মরণীয় একটি আসর ছিল।’ তিনি আরো বলেন, ‘ওই টুর্নামেন্টেও সেমির আগ পর্যন্ত পাকিস্তান দল ছিল অগোছালো। আহামরি কোনো পারফরম্যান্স ছিল না তাদের। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে হঠাৎ করে ঘুরেই দাঁড়ায় পাকিস্তান। তারা বিপজ্জনক এবং শক্তিশালী হয়ে উঠে। পাকিস্তানের জন্য ওই আসরটিও ছিল এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসরের মতোই।’ হেইডেন যোগ করেন, ‘মূলত একজন ভক্ত এবং অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার হিসেবে আমি এতটুকু বলতে পারি, পাকিস্তান ক্রিকেটের পেস বোলিং আক্রমণ এবং ব্যাটিং লাইনআপে আমাদের সত্যিই কিছু দেখার আছে।’
অস্ট্রেলিয়ায় এবার জয়ের অবস্থায় থেকেও নিজেদের প্রথম ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে ১ রানে হারতে হয়েছিল পাকিস্তানকে। পরের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও ছিল একই চিত্র। ম্যাচের শেষ ওভারে ১ রানে হেরে শেষ চারের পথ কঠিন করে তোলেন বাবর আজমরা। টানা দুই ম্যাচ হেরে ব্যাকফুটে গেলেও পরের দুই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সেমির লড়াইয়ে ফিরে আসে পাকিস্তান। গ্রুপের শেষ ম্যাচে ডাচদের কাছে প্রোটিয়ারা হেরে গেলে দারুণ সুযোগ আসে পাকিস্তানের সামনে। তারা নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়ে জায়গা পায় সেমিফাইনালে। এ প্রসঙ্গে হেইডেন বলেন, ‘যে কোনো দিন যে কোনো কিছু ঘটতে পারে। নির্দিষ্ট দিনেই নেদারল্যান্ডস হারিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এটি আমাদের জন্য এই টুর্নামেন্টে একটি উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত ছিল এবং সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোটা আমাদের দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে ছেলেরা জয় পেয়ে সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়েছে।’ তিনি যোগ করেন, ‘তবে নিউজিল্যান্ড কেন টুর্নামেন্টের সেরা দল ইতোমধ্যেই তারা তা প্রমাণ করেছে। যদিও গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের কাছে ম্যাচ হেরেছিল তারা। সকল পজিশনে সামর্থ্যবান ক্রিকেটার রয়েছে তাদের। কেন উইলিয়ামসনের মতো একজন সত্যিকারের শান্ত এবং ভদ্রলোকের নেতৃত্বে ক্রিকেট খেলছে কিউইরা।’

আসলে নিউজিল্যান্ড জানে কিভাবে ফাইনালে যেতে হয়। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বাদে আইসিসির প্রতিটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছে কিউইরা। ২০১৫ এবং ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেললেও দুর্ভাগ্যবশত চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি তারা। ২০২১ সালে প্রথম টেস্ট বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে আইসিসি ট্রফি জয়ের খড়া কাটিয়েছে নিউজিল্যান্ড। তবে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে ফের ব্যর্থ তারা। এবার সেই ব্যর্থতা কাটাতে চায় নিউজিল্যান্ড। পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে খেলাই তাদের লক্ষ্য। আর ফাইনাল জিতে গত বিশ্বকাপের ক্ষত মুছতে চায় তারা। তবে নিউজিল্যান্ডের অভিজ্ঞ পেসার টিম সাউদি জানান, তাদের ভাবনায় আপাতত পাকিস্তান ম্যাচ। তিনি বলেন, ‘ওই পর্যায়ে (ফাইনালে) যাওয়ার আগে আমাদের এখনও অনেক ক্রিকেট খেলতে হবে। পাকিস্তান মানসম্মত একটি দল এবং বুধবার (আজ) তাদের টপকে যেতে নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে হবে আমাদের। সেমিফাইনাল রোমাঞ্চকর ম্যাচ। এই ম্যাচের জন্য আপনি উন্মুখ থাকবেন, শেষ দুই ম্যাচে লড়াই করতে চাইবেন। আশা করি আমরা যেভাবে খেলছি সেভাবেই চালিয়ে যেতে পারব এবং সেমিতে আরেকটি ভালো পারফরম্যান্স করতে পারব।’

পাকিস্তানকে সমীহই করে সাউদি আরো বলেন, ‘পাকিস্তান যে ভয়ঙ্কর দল তা ভালো করেই জানা আছে আমাদের। শেষ চারে জায়গা করে নেয়া সব দলেরই সুযোগ থাকে (শিরোপা জেতার)। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরা অনেক খেলেছি এবং আমরা জানি, তারা খুবই ভয়ানক দল। কৃতিত্ব তাদের দিতে হবে। তারা সম্ভবত এটা ভেবে নিয়েছিল যে, তাদের খুব বেশি সুযোগ নেই। কিন্তু তারা আরেকটি ভালো পারফরম্যান্স করেছে। সেমিফাইনালে তারা হবে বিশাল এক হুমকি।’

টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের রেকর্ড ভালো নয়। এখন পর্যন্ত ২৮ মোকাবেলায় পাকিস্তান জিতেছে ১৭ ম্যাচ আর নিউজিল্যান্ডের জয় ১১ ম্যাচে। আর বিশ্বকাপের ছয়বারের দেখায় পাকিস্তান জিতেছে চার ম্যাচ ও নিউজিল্যান্ড দুই।

আজকের খেলা, ১ম সেমিফাইনাল
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড, বেলা ২টা

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন