টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিততে আজ টুর্নামেন্টের ফাইনালে মাঠে নামছে পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহাসিক মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) বাংলদেশ সময় বেলা ২টায় শুরু হবে ম্যাচটি। এ ম্যাচ জিতে পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম কি পারবেন সাবেক অধিনায়ক ইমরান খান হতে? আজ থেকে ৩০ বছর আগে ১৯৯২ ওয়ানডে বিশ্বকাপে অনেকটা খোড়াতে খোড়াতেই ফাইনালে উঠে বাজিমাত করেছিল ইমরানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান। এই মেলবোর্নেই ৯২’ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২২ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইমরান বাহিনী। ওই আসরের চিত্রও ছিল অনেকটা এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতই। এবার অস্ট্রেলিয়ায় সুপার টুয়েলভে পর্বে টানা দুই ম্যাচ হেরে অনেকটাই ব্যাকফুটে ছিল পাকিস্তান। তবে তৃতীয় ম্যাচে এসে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশকে হারিয়ে টানা তিন জয়ে শেষ চার নিশ্চিত করেন বাবর আজমরা। ফলে ৯২’ ওয়ানডে বিশ্বকাপের মতই সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে পায় পাকিস্তান। সেমিতে কিউইদের গুঁড়িয়ে ফাইনালের টিকিট কাটেন শাহিন শাহ আফ্রিদিরা। তাই বলা যায় খাদের কিনারা থেকে উঠে এসে শিরোপা জয়ের স্বপ্নে এখন বিভোর পাকিস্তান। তারা প্রমাণ করতে চায় যে, গর্ত থেকে উঠে শিরোপাও জয় করা যায়।
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ায় এবার শুরু থেকেই দুর্দান্ত ছিল ইংল্যান্ড। সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে আসর শুরু করলেও পরের ম্যাচেই পুঁচকে আয়ারল্যান্ডের সামনে হোঁচট খায় ইংলিশরা। দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ড বৃষ্টি আইনে আইরিশদের কাছে হেরে যায়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যাক্ত হলে পরের দুই ম্যাচে যথাক্রমে নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সেমিতে জায়গা পায় ইংল্যান্ড। আর শেষ চারের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতকে ১০ উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে পাকিস্তানের সঙ্গী হয় তারা। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচেও ভালো খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আসরের দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুলতে প্রত্যয়ী ইংলিশরা। বলা যায়, অনেক কিছু অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনাল মঞ্চে পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতার পর নিজেদের শোকেসে সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ট্রফিটাও সাজাতে মরিয়া ইংলিশরা। এর আগে ২০০৯ সালে পাকিস্তান ও ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফি জিতেছিল ইংল্যান্ড। মজার ব্যাপার হলোÑ ২০১০ বিশ্বকাপের পর এবারই প্রথম দেখা হচ্ছে দু’দলের। ২০০৯ এবং ২০১০ আসরে দু’বার একে অপরের বিপক্ষে খেলেছিল তারা। দুই ম্যাচেই জিতেছিল ইংল্যান্ড। টি-টোয়েন্টিতে দু’দলের লড়াইয়ে এগিয়ে আছে ইংল্যান্ডই। এখন পর্যন্ত ২৮টি ম্যাচের মধ্যে ইংলিশরা জিতেছে ১৮ বার। পাকিস্তানের জয় ৯ ম্যাচে। অন্য ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বাপের আগে নিজ মাঠে ইংল্যান্ডের কাছে সাত ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৪-৩ ব্যবধানে হেরেছিল পাকিস্তান। তবে পরিসংখ্যান যাই বলুক না কেন ফাইনালে পাকিস্তান যে ইংল্যান্ডকে ছেড়ে কথা বলবে না তা সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড ম্যাচই তার প্রমাণ।
দলের অধিনায়কত্ব পাওয়ার প্রথম বছরেই একটি বড় ট্রফি জিতে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানোর দ্বারপ্রান্তে জস বাটলার। তাই তো ফাইনালের আগে কাল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বললেন, ‘আমি আগের মতো আবারো বলছি, সত্যিই আমরা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ আশা করছি। অতি সম্প্রতি তাদের সঙ্গে আমরা বেশ কয়েকবার মুখোমুখি হয়েছি এবং তাদের বিপক্ষে আমরা দুর্দান্ত কিছু ম্যাচ খেলেছি। আমাদের খেলায় দুর্দান্ত স্পিরিট ছিল। আমি নিশ্চিত আগামীকালও (আজ) এর ব্যতিক্রম হবে না।’ তিনি জানান, পাকিস্তানি পেসারদের শক্ত হাতে মোকাবিলা করাটাই হবে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। শাহিন শাহ আফ্রিদির নেতৃত্বাধীন পেস আক্রমণের দলটি নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত এবং ছোট দল জিম্বাবুয়ের কাছে হারের পরও দারুণভাবে ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাটলার বলেন, ‘পাকিস্তান দুর্দান্ত একটি দল। আমি মনে করি, তাদের দুর্দান্ত ফাস্ট বোলার তৈরির অনেক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং আমি যে দলটি দেখছি, আমরা যাদের বিপক্ষে খেলতে নামছি তারাও আলাদা নয়।’
ইংল্যান্ডের নিজস্ব কিছু দুঃখও আছে। তবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে জয়সহ অন্যান্য বড় দলের বিপক্ষে ভলো খেলেছে ইংলিশরা। কিন্তু গ্রুপ পর্বে আয়ারল্যান্ডের কাছে হার এই বিশ্বকাপে তাদের বড় কলঙ্ক। এ হার নিয়ে বাটলার বলেন, ‘এই টুর্নামেন্টজুড়ে দল হিসাবে অবশ্যই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি আমাদের জন্য বড় হতাশার। অবশ্য এটি অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। আমি মনে করি, ম্যাচটি থেকে আমরা অনেক কিছুই শিখেছি এবং সব কিছু পেছনে ফেলেই বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছি।’
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মেলবোর্নের ফাইনালে অনেকটা হোম কন্ডিশনের মতো দর্শকদের বড় সমর্থন পাবে পাকিস্তান। এটা সবাই জানেন। তাই দর্শক সমর্থন পেয়ে ম্যাচে যে বাবর আজমরা এগিয়ে থাকবেন তা বলাই যায়। ফাইনাল নিয়ে পাকিস্তান অধিনায়কের কথা, ‘এবারের বিশ্বকাপে আমরা নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচ হেরেছি এবং এজন্য আমাদের মূল্য দিতে হয়েছিল। কিন্তু আমাদের দল গ্রুপ পর্বে তিন ও সেমিফাইনালের একটিসহ শেষ চার ম্যাচে লড়াই করে ফিরে এসেছে। সতীর্থরা খুব ভালো পারফর্ম করেছে। আমরা শেষ চার ম্যাচে সত্যিকারার্থেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। যার ফলও পেয়েছি ফাইনালে উঠে।’ বাবর আজম যোগ করেন, ‘হ্যাঁ, ফাইনালেও আমরা ভালো খেলার ধারাবাহিকতায় থাকতে চাই। চেষ্টা করব ভালো খেলে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলতে।’
আজকের খেলা, ফাইনাল
পাকিস্তান-ইংল্যান্ড, বেলা ২টা
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন