শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

সেই পাকিস্তানই ফাইনালে

জাহেদ খোকন | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নিলো সেই পাকিস্তানই। যাদের টুর্নামেন্টের শেষ চারে খেলা নিয়ে এক সময় শঙ্কা জেগেছিল। গতকাল অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে পাকিস্তান ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারায় নিউজিল্যান্ডকে। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে কিউইরা নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে করে ১৫২ রান। জবাবে জয়ের জন্য ১৫৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান এবং অধিনায়ক বাবর আজমের দারুণ হাফসেঞ্চুরিতে ৫ বল হাতে রেখেই বড় জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। এই জয়ে ২০০৭ ও ২০০৯ সালের পর তৃতীয়বারের মতো টুর্নামেন্টের ফাইনালে নাম লেখালেন বাবর আজমরা। অন্যদিকে শেষ চারের প্রথম ম্যাচে হেরে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে খেলার স্বপ্নভঙ্গ হলো কেন উইলিয়ামসনদের। তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিলেন তারা। এর আগে ২০০৭ ও ২০১৬ সালে সেমিতেই বিশ্বকাপ মিশন শেষ করেছিল কিউইরা।

কাল সিডনিতে ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড। বাউন্ডারি দিয়ে তারা ইনিংস শুরু করলেও প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই এলবিডাব্লিউ হয়ে পাকিস্তানি পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির শিকারে পরিণত হন কিউই ওপেনার ফিন অ্যালেন। ফেরার আগে ৩ বল খেলে এক চারের মারে তিনি করেন মাত্র ৪ রান। শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে পাওয়ার প্লে’র শেষ বলে বিদায় নেন আরেক ওপেনার ডেভন কনওয়ে। ৬ ওভারে দলীয় ৩৮ রানে ২০ বলে ২১ রান করে রান আউট হন তিনি। তার ইনিংসে ছিল ৩টি চারের মার। তিন নম্বরে নেমে সেমিতে সুবিধা করতে পারেননি চলতি আসরের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিয়ান গ্লেন ফিলিপস। অষ্টম ওভারের শেষ বলে স্পিনার মোহাম্মদ নাওয়াজকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ৮ বলে এক চারের মারে ৬ রানে থামেন ফিলিপস। ফলে ৮ ওভারে ৪৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দারুণ চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড।

দলকে চাপমুক্ত করতে বড় জুটি গড়তে মনোযোগী হন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও ড্যারিল মিচেল। রানের গতি বাড়াতে পাকিস্তানের বোলারদের ওপর চড়াও হন তারা। ইনিংসের ১৫তম ওভারে ১০০’তে পা রাখে নিউজিল্যান্ড। ১৭তম ওভারে উইলিয়ামসনকে বোল্ড করে পাকিস্তানকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন আফ্রিদি। দলীয় ১১৭ রানে আউট হওয়ার আগে ১টি করে চার ও ছক্কায় ৪২ বল খেলে ৪৬ রান করেন উইলিয়ামসন। চতুর্থ উইকেটে মিচেলকে সঙ্গে নিয়ে ৫০ বলে ৬৮ রানের জুটি গড়েন কিউই অধিনায়ক। উইলিয়ামসন আউট হওয়ার পর মারমুখী মেজাজে থাকা মিচেল ইনিংসের ১৯তম ওভারে ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন। ৩২ বলে হাফসেঞ্চুরি করা মিচেল ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত খেলে নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে ১৫২ রানের লড়াকু পুঁজি এনে দেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ৩৫ বল খেলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত ৫৩ রান করেন। ১২ বলে এক চারের মারে ১৬ রান করে অপরাজিত থাকেন জেমস নিশাম। আফ্রিদি ২৪ রানে ২টি ও নাওয়াজ ১২ রানে ১ উইকেট পান।

স্মৃতিতে ১৯৯২ ওয়ানডে বিশ্বকাপকে প্রেরণা হিসেবে রেখে জয়ের জন্য ১৫৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে পাকিস্তানকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান ও অধিনায়ক বাবর আজম। অবশ্য ট্রেন্ট বোল্টের করা ইনিংসের চতুর্থ বলেই বাবরের ক্যাচ ফেলেন কনওয়ে। পাওয়ার প্লে’তে ৫৫ রান তুলে নেন রিজওয়ান-বাবর। শূন্যতে জীবন পেয়ে ১১তম ওভারে টি-টোয়েন্টিতে ৩০তম হাফসেঞ্চুরি করেন পাকিস্তান অধিনায়ক। এজন্য ৩৮ বল খেলেন তিনি। ১২তম ওভারে জুটিতে সেঞ্চুরি করেন বাবর-রিজওয়ান। এবারের আসরে প্রথম উইকেটে একমাত্র ও চতুর্থ ১০০ রানের জুটি এটি। এই নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে রেকর্ড নবমবারের মতো জুটিতে সেঞ্চুরি করলেন তারা। সবগুলোই উদ্বোধনী জুটিতে। ১৩তম ওভারের চতুর্থ বলে ১০৫ রানের জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন রিজওয়ান-বাবর। ৩২ বলে সাত বাউন্ডারিতে ৫৩ রান করে বোল্টের শিকারে পরিণত হন বাবর আজম। ইনিংসের ১৪তম ওভারে ৩৬ বল খেলে ক্যারিয়ারের ২৩তম হাফসেঞ্চুরির দেখা পান রিজওয়ান। ১৭তম ওভারে দলীয় ১৩২ রানে আউট হন এই ওপেনার। ৪৩ বলে ৫ চারের মারে ৫৭ রান করে বোল্টের বলে ফিলিপসকে ক্যাচ দেন তিনি। এরপর জয় থেকে মাত্র ২ রান দূরে থাকতে আউট হন মোহাম্মদ হারিস। ১৯তম ওভারে দলীয় ১৫১ রানে স্যান্টনার বলে আউট হওয়ার আগে ২৬ বলে ৩০ রান করেন হারিস। তার ইনিংসে ছিল ২ চার ও ১টি ছয়ের মার। শেষ ওভারের প্রথম বলেই পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত করেনÑ শান মাসুদ ও ইফতেখার আহমেদ। মাসুদ ৩ ও ইফতেখার শূন্য রানে অপরাজিত থাকেন। বোল্ট ২টি ও স্যান্টনার ১টি উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন রিজওয়ান।

১৯৯২ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও ঠিকই একই অবস্থায় থেকে ফাইনালে উঠেছিল পাকিস্তান। ইমরানের বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্বে এ অস্ট্রেলিয়াতেই মেলবোর্নের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২২ রানে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলেছিল পাকিস্তান। এবার সেপথেই আগামী রোববারের ফাইনালের অপেক্ষায় পাকিস্তান। আজ দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি ভারত-ইংল্যান্ড। কাকতালীয়ভাবে ভারতকে হারিয়ে ইংলিশরা ফাইনালে উঠলেই দুইয়ে দুইয়ে হবে চার। তাতে বাবরের সামনে যে থাকবে ইমরান খান হয়ে উঠার সম্ভাবনা!

আজকের খেলা, ২য় সেমিফাইনাল
ভারত-ইংল্যান্ড, বেলা ২টা

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন