বিশ্বকাপ মানেই ক্রীড়ামোদীদের দীর্ঘ সময়ব্যাপী উৎসব। আর তা যদি ফুটবল বিশ্বকাপ হয়, তবে সেই উৎসবে যোগ হয় বাড়তি উন্মাদনা।
মাঠের ৯০ মিনিটের উত্তেজনায় দিনভর ডুবে থাকেন ফুটবলপ্রেমীরা। জনপ্রিয় খেলার সবচেয়ে বড় আসর নিয়ে হই হুল্লোড়টা বেশি হবে- এটিই স্বাভাবিক। তার পরও মেগা ইভেন্টটি আসে চার বছর পর পর।
ইতোমধ্যে ৯ দশক পেরিয়েছে ফিফা বিশ্বকাপ। দীর্ঘ এ যাত্রায় প্রতিবারই এসেছে কোনো না কোনো নতুনত্ব। এবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে হতে যাচ্ছে দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থখ্যাত ইভেন্টটি, যা ফিফ বিশ্বকাপের ২২তম আসর। আগামী ২০ নভেম্বর পর্দা উঠলেই ৮ নতুনত্ব যুক্ত হবে ফুটবল বিশ্বকাপে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কী কী নতুন থাকছে ফুটবল বিশ্বকাপে কাতার ভেন্যুতে-
১. মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম বিশ্বকাপ: মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ ধনকুবের ছোট্ট দেশ কাতার। এবারের বিশ্বকাপ আয়োজন করছে তারা। সে হিসাবে মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ আয়োজকের গৌরব অর্জন করতে যাচ্ছে কাতার। শুধু তাই নয়; আরব বিশ্বেও প্রথম এবং এশিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। এর আগে ২০০২ সালে যৌথভাবে আয়োজন করেছিল দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান।
২. প্রথম টেকনো বল: এবারের বিশ্বকাপে যে বল দিয়ে খেলবেন মেসি-নেইমাররা তার নাম ‘আল রিহলা’। পাকিস্তানের তৈরি বলটিতে যুক্ত করা হয়েছে দুর্দান্ত সব প্রযুক্তি। বলা হচ্ছে- বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো টেকনো বল ব্যবহার হচ্ছে। চামড়ায় তৈরি বলটির নিখুঁত গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য এর ভেতরে ৫০০ হার্জ আইএমইউ সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
৩. শীতকালে প্রথম বিশ্বকাপ: ফিফার ইতিহাসে এবারই প্রথম নভেম্বর-ডিসেম্বরে বিশ্বকাপ আয়োজিত হচ্ছে। অর্থাৎ শীতকালে। এর আগের সব আসরই অনুষ্ঠিত হয়েছিল জুন-জুলাইয়ে। অর্থাৎ গ্রীষ্মে। মূলত কাতারের আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই এই শীত মৌসুমকে বেছে নিয়েছে ফিফা কর্তৃপক্ষ। কারণ মরুর দেশে জুন-জুলাইয়ে সূর্যের প্রখর রোদে বাইরে বের হওয়াই দায়। তাপমাত্রা ৪০-৪৫ ডিগ্রির নিচে নামে না। তাই বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য নভেম্বর তথা শীতকালকে বেছে নিয়েছে কাতার ও ফিফা।
৪. অল্প জায়গায় সব ভেন্যু: এটিই প্রথম ‘আঁটসাঁট’ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে। কাতার ছোট্ট দেশ। রাজধানী দোহাতেই সব। তাই বিশ্বকাপের জন্য নির্মিত ৮ স্টেডিয়াম একে অপরের খুব কাছাকাছি। মাত্র ৫৫ কিলোমিটার জায়গার মধ্যে আটটি স্টেডিয়ামের অবস্থান। ইতিহাসে কখনো অল্প জায়গায় সবকটি ভেন্যু দেখা যায়নি। সে হিসাবে ভৌগোলিকভাবে এটিই সবচেয়ে ‘আঁটসাঁট’ জায়গার বিশ্বকাপ।
৫. প্রথম পরিবেশবান্ধব যানবাহন ব্যবস্থা: কাতার বিশ্বকাপে পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক বাসের ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। কার্বন-নিরপেক্ষ বিশ্বকাপ আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছিলেন দেশটির সুপ্রিম কমিটি ফর ডেলিভারি অ্যান্ড লিগ্যাসি। আদালতের সেই নির্দেশ মেনে সবুজ যানবাহনের ব্যবস্থা করেছে কাতার কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, ইলেকট্রিক বাসগুলো ৪৪টি মেট্রোলিংক এবং ৪৮টি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট রুটে চালানো হবে।
৬. প্রথম সেমি-অটো অফসাইড প্রযুক্তি: অফসাইডের সিদ্ধান্ত নিয়ে সবসময়ই বিতর্ক চলে। ২০১৮ বিশ্বকাপে ভিএআর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। তাতেও সমাধান মেলেনি। কাতার বিশ্বকাপে সে সমস্যার সমাধান করবে আরও উন্নত প্রযুক্তি। অফসাইড আরও নিখুঁত করতে কাতারে প্রথম চালু হচ্ছে সেমি অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি। প্রতিটি স্টেডিয়ামের ছাদের নিচের অংশে ১২টি ট্র্যাকিং ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। কোনো খেলোয়াড় অফসাইড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও ম্যাচ অফিশিয়ালদের কাছে অফসাইড সংকেত চলে যাবে।
৭. ফুটবলারদের জন্য ডেটা অ্যাপ: ফুটবলারদের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করবে এই ডেটা অ্যাপ, যা আগে ব্যবহার করা হয়নি। কাতার বিশ্বকাপে এই অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে ফুটবলারদের পারফরম্যান্সের বিশ্লেষণ ও নিখুঁত তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। এতে প্রতিটি ফুটবলার ম্যাচের পর নিজের খেলার তথ্য দেখতে পারবেন। ডেটার মধ্যে থাকবে ম্যাচে বল পায়ে কেমন ছিলেন, কতটুকু কী প্রচেষ্টা ছিল এবং গুরুত্বপূর্ণ কোনো মুহূর্তে তিনি কেমন খেলেছেন।
৮. প্রথম নারী রেফারি: এবারই প্রথম ছেলেদের বিশ্বকাপে জাপানের ইয়োশিমি ইয়ামাশিতা, ফ্রান্সের স্টিফানি ফ্রাপার্ট ও রুয়ান্ডার সালিমা মুকানসাঙ্গা নারী রেফারি হিসেবে ম্যাচ পরিচালনা করবেন। ৬৪ ম্যাচের জন্য মোট ৩৬ জন প্রধান রেফারির মধ্যে আছেন এ ৩ নারী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন