বড় আসরে চমকে দেওয়াটা নিয়মে পরিণত করেছেন নেদারল্যান্ডস ম্যানেজার লুই ফন গাল। ব্রাজিল বিশ্বকাপের স্পেনের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে দীর্ঘদিনের ছকই বদলে দিয়েছিলেন বর্ষীয়ান ম্যানেজার। আর গতরাতে তিনি নিয়মিত একাদশের গুরুত্বপূর্ণ ৩ ফুটবলারকে বেঞ্চে রেখে আবারও অপ্রস্তুত করলেন প্রতিপক্ষকে। বিশ্বকাপে গ্রুপ-‘এ’র ম্যাচে আল থুমামা স্টেডিয়ামে সেনেগালের বিপক্ষে সেই চমক অন্তত প্রথমার্ধে কাজ করেনি। বিরতির আগে বরং এগিয়ে ছিল আলিউ সিসের সেনেগাল। তবে দলের মূল স্তম্ভ সাদিও মানের অনুপস্থিতিতে সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় তারা। খেলা যখন নিশ্চিত ড্র দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, সেই সময় বিশাল এক ভুল করে বসেন সেনেগালিস গোলরক্ষক। সেনেগালকে সেই ভুলের মাশুল শেষ পর্যন্ত দিতে হলো ২-০ ব্যবধানে ম্যাচে খুইয়ে।
প্রথমার্ধে সেনেগালের পাওয়ারফুল ফুটবল কৌশলের সামনে ছন্দহীন হয়ে যায় ডাচদের টোটাল ফুটবল। তবে এখানে কমলা কোচের দায়ও আছে খানিকটা। একজন সেন্টার মিডফিল্ডার নিয়ে একাদশ সাজান ফন গাল। পাশে আরেকজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার না থাকলে ফ্রাঙ্কি ডি ইংয় তার সেরাটা দিতে পারেন না। তবে এতোকিছুর পরও এই ২৫ বছর বয়সী মিডফিল্ডার বিরতির আগে ডাচদের সেরা পারফর্মার ছিল। ম্যাচের ১৯তম মিনিটে এই বার্সা ফুটবলার পরিষ্কার গোলের সুযোগ পান। বার্গউইনের পা থাকে বল পেয়ে বডি ডামিতে প্রতিপক্ষে এক ডিফেন্ডারকে ছিটকে ফেলন, কিন্তু এরপর দেরি করে ফেলেন শট নিতে।
ডাচরা ২৫ মিনিটে উল্টো বিপদ পড়তে পারতো ইসমাইল সারের শটে, তবে কাপ্তান ভার্জিল ভ্যান ডাইক সেই যাত্রায় কর্ণারের বিনিময়ে বাঁচিয়ে দেন। বিরতিতে যাওয়ার আগে, বলের দখল বেশি রেখেও বার কয়েক প্রতি আক্রমণের শিকার ফন গালের দল। তবে দক্ষ পাস ও ফিনিশিংয়ের অভাবে গোল পায়নি সেনেগাল। প্রথমার্ধে ৫ শটের একটিও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি নেদারল্যান্ডস। সেনেগালের ছয় শটের একটি ছিল লক্ষ্যে, তবে সেটি ভাবাতে পারেনি অভিষিক্ত ডাচ গোলরক্ষক আন্ড্রিস নোপার্টকে।
দ্বিতিয়ার্ধে আক্রমণের ধার অনেক বাড়ায় দাচরা। তবে সেনেগালের প্রতি আক্রমনও থেমে থাকেনি। ম্যাচের ৬২ মিনিটে সেনেগালের তারকা লেফটব্যাক দিয়ালো চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন। ঠিকতার ১১ মিনিট পর, ম্যাচে তাদের সেরা পারফর্মার কুয়াতাও মাঠ ছাড়েন ডি-ইয়ংয়ের বাজেভাবে দেওয়া ধাক্কার শিকার হয়ে। ম্যাচের ৭৩ তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে সেনেগালের ইদ্রিসা গাইয়া কার্ভ শট নেওয়ার পরিবর্তে, নপার্টের নাগালে মারেন দেন শট। নষ্ট হয় এগিয়ে যাওয়ার দারুণ সুযোগ। ম্যাচের ৭৯ মিনিটে দুই সেন্ট্রাল মিদফিল্ডার ক্লাসেন ও কুপমাইরেসকে মাঠে নামান ফন গাল। আর তখনই ডি-ইয়ং তার স্বাধীনতা পান সামনে গিয়ে খেলার।
নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হওয়ার যখন মিনিট ছয়েক বাকি, ডি ইয়ং তখন ডি বক্সের বাহির থেকে দুর্দান্ত এক ক্রস করেন। সেনেগালের ডিফেন্স ভেঙ্গে সামনে এগিয়ে দুর্বল হেডে করেন রুডি গাকপো। বল জালে জড়ালে স্টেডিয়ামে কমলাদের উৎসব শুরু হয়। তবে এই গোলে সেনেগালের গোলরক্ষক এদুয়া মোদির বাচ্চাসুলভ ভুলটাই দায়ী। মোদি যদি সামনে এসে রিফ্লেক্ট করতে ভুল না করতেন, তাহলে গাকপোর হেড জালে পোয়ছাতো না। কারণ হেড করার সময়, বলটি ডাচ মিডফিল্ডারের মাথার অনেক উপরে ছিল। বদলি ফিটবলার ক্লাসেন যোগকরা সমইয়ের ৯ মিনিটে গোল করে ডাচদের ৩ পয়েন্ট নিশ্চিত করেন।
এই ম্যাচে নামার সময় ফন গালের বয়স ছিল ৭১বছর ৩১৭ দিন। ফলে তিনি বিশ্বকাপের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রবীণ ম্যানেজারে পরিণত হলেন। পেছনে ফেললেন উরুগুয়ের অসাক তাভারেজকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন