বিখ্যাত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, ফুটবল বিশ্বকাপ এমন একটা আয়োজন তাকে সত্যিকারের বিশ্ব উৎসবের অনুভূতি দেয়। আসলেই তাই। দুনিয়াজুড়ে যত বড় আয়োজন হোক না কেনো, ফুটবল বিশ্বকাপের উত্তেজনা আর রোমাঞ্চ কেউ ছাপিয়ে যেতে পারে না। এ কেবল বিশ্বের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই নয়, ফুটবল বিশ্বকাপ মানে হরেক রকমের গল্প, হরেক রকমের কাব্য এবং হরেক রকমের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির লড়াই।
ফুটবল বিশ্বকাপ এলেই তাই তর্ক শুরু হয়-কে সেরা, কার নাম এই ট্রফির ইতিহাসের পরতে পরতে লেখা রয়েছে। এসব তর্কের কোনো শেষ নেই। তবে কিছু ব্যাপার ধ্রুব সত্য। বিশ্বকাপ এলে কিছু নাম মনে না পড়বেই। কিছু দল, কিছু খেলোয়াড় এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে নিজেদের নাম সোনার অক্ষরে লিখে রেখে গেছেন। তাদের ছাড়া বিশ্বকাপের সব আলোচনা অর্থহীন। তেমনই একটি দল ব্রাজিল। যেই দলটি নিঃসন্দেহে ফুটবল বিশ্বকাপটাকে নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে রেখেছে দক্ষিণ আমেরিকান জায়ান্টরা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল কেবল নয়, সবচেয়ে নিয়মিত দলও এই ব্রাজিল। ১৯৫৮ সালে প্রথম ট্রফি জেতার পর থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ৫টি ট্রফি জিতেছে তারা। বলাবাহুল্য, ব্রাজিলের চেয়ে বেশি বা তার সমান সংখ্যক ট্রফি আর কেউ জিততে পারেনি।
বলাবাহুল্য, ব্রাজিলের চেয়ে বেশি বা তার সমান সংখ্যক ট্রফি আর কেউ জিততে পারেনি। কেবল এই ট্রফি জয়ের গল্প দিয়ে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ-প্রেম ব্যাপারটা ঠিক বোঝা যাবে না। একটা জিনিস জেনে রাখুন, ব্রাজিল খেলেনি, এমন বিশ্বকাপের আসর কখনো বসেনি এই পৃথিবীতে। সেই শুরু থেকে এবারের আগ পর্যন্ত ২২টি বিশ্বকাপের আসর বসেছে। আর দুনিয়ার একমাত্র দল হিসেবে সবগুলো আসরে অংশ নিয়েছে ব্রাজিল। কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশ সময় রাত একটায় সার্বিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামবে বিশ্বসেরা দলটি। কাতার বিশ্বকাপে এই ম্যাচ দিয়েই ‘হেক্সা’ জয়ের অভিযাত্রা শুরু করবে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
ব্রাজিল কোচ তিতের আক্রমণভাগ নিয়ে শুধু সার্বিয়া নয়, এবার দুশ্চিন্তা করতেই হবে প্রতিপক্ষ দলগুলোর। এবার ইউরোপিয়ান ক্লাব মৌসুম শুরুর পর থেকে বিশ্বকাপের আগপর্যন্ত ব্রাজিলের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়েরাই সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন। এমনকি এ সময় সবচেয়ে বেশি গোল করা খেলোয়াড়টিও ব্রাজিলের। আক্রমণভাগে ৯ ফরোয়ার্ড রেখে বিশ্বকাপ স্কোয়াড গড়েছেন ব্রাজিল কোচ তিতে। ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবো’ জানিয়েছে, এই ৯ ফরোয়ার্ড মিলে ক্লাব ফুটবলে মোট ৭২ গোল করেছেন, যা বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া বাকি দেশগুলোর খেলোয়াড়দের সঙ্গে তুলনায় সর্বোচ্চ।
বিশ্বকাপের আগে এই মৌসুমে ব্রাজিলের যে পাঁচ খেলোয়াড় সর্বোচ্চ গোল করেছেন, তাদের গোলগুলো যোগ করলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৫৮। ফ্রান্স এই তালিকায় ৫৫ গোল নিয়ে দুইয়ে। ৪৪ গোল নিয়ে তিনে নেদারল্যান্ডস এবং ৪১ গোল নিয়ে চারে আর্জেন্টিনা। তবে এই মৌসুমে পোল্যান্ডের পাঁচ খেলোয়াড় মিলেও ক্লাব ফুটবলে ৪১ গোল করেছেন। ফ্লামেঙ্গোর ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার পেদ্রো করেছেন ২১ গোল। ১৫ গোল নিয়ে দুইয়ে নেইমার, ১০ গোল নিয়ে তিনে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও ৭ গোল নিয়ে চারে রদ্রিগো। ব্রাজিলের শীর্ষ পাঁচ গোলদাতার এই তালিকায় পঞ্চম স্থানে আন্তোনি, গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি ও গ্যাব্রিয়েল জেসুসের মধ্যে যেকোনো একজনকে রাখতে হবে। তিনজনই সমান ৫টি করে গোল করেছেন। এই হিসেবে ব্রাজিলের গোলসংখ্যা ৫৮। তবে ফ্লামেঙ্গো স্ট্রাইকার পেদ্রোর গোলসংখ্যা হিসাব করা হয়েছে জুলাই থেকে। ব্রাজিলের এক ক্যালেন্ডার মৌসুম ধরলে সেটি ২৯ হবে।
অর্থাৎ ক্লাব ফুটবলে গোলের মহড়া দিয়ে এবার কাতার বিশ্বকাপে গোলের পর গোল করতে প্রস্তুত ব্রাজিলের আক্রমণভাগ। উইঙ্গার রাফিনিয়া জানিয়েছেন, গোলের পর উদযাপন কেমন হবে, সেসবও ঠিক করে রাখা আছে, ‘সত্যি বলতে, আমরা প্রতি ম্যাচের জন্য অন্তত ১০টি করে নাচ ঠিক করে রেখেছি। প্রথম গোলে এই নাচ, পরেরটায় ওটা, তার পরেরটায় আরেকটি নাচ-এভাবে ১০টি গোল হওয়া পর্যন্ত নাচ ঠিক করা আছে। ১০টির বেশি হয়ে গেলে নতুন কিছু ভাবতে হবে।’ তাইতে ম্যাচ শুরুর আগেই সার্বিয়ার কোচের কানে আওয়াজ ভেসে আসা অমূলক নয়, ‘সাবধান, প্রতিপক্ষ ব্রাজিল।’
আজকের খেলা
সুইজারল্যান্ড-ক্যামেরুন, বিকাল ৪টা
উরুগুয়ে-দক্ষিণ কোরিয়া, সন্ধ্যা ৭টা
পর্তুগাল-ঘানা, রাত ১০টা
ব্রাজিল-সার্বিয়া, রাত ১টা
সরাসরি : বিটিভি/জিটিভি/টি স্পোর্টস
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন