শুরুতে সাম্বার ছন্দ ছিল না। তবে খুব দ্রুতই সেই তালটা ধরে ফেললো ব্রাজিল। আর তাতেই দেখা মিললো সেই পুরনো সেলেসাওদের। জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ২০০৬ সালের বিশ্ব আসরে সর্বশেষ এমন ফুটবল মুগ্ধতা ছড়িয়েছিল ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। হেক্সার (৬ বার) লক্ষে চলমান বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে নেইমার-কাসেমিরোরা নেমেছিলেন পরশু মধ্যরাতে। লুসাইল স্টেডিয়ামের ৮৮ হাজার দর্শককে জাদুকরী ফুটবলে বিমহিত করে রাখল তিতের দল। বর্তমানে ইউরোপে উল্লেখযোগ্য ভাবে পাওয়ার ফুটবলের প্র্যাকটিস করে সার্বিয়া। এয়ার বলে বিশ্বে সবচেয়ে ক্ষুরধার এই দলটির বিপক্ষেই ব্রাজিলের জয়টা বেশ দাপুটে। সেলেসাওদের আক্রমণের ফুলঝুড়ির পরও গোলশূন্য থাকে প্রথমার্ধ। তবে বিরতির পর গোটা ম্যাচের লাগাম নিয়ে রিচার্লিসনের জোড়া গোলে ২-০ ব্যবধানে সার্বিয়াকে হারায় নেইমাররা।
আচ্ছা ব্রাজিলের বিখ্যাত স্ট্রাইকারদের কথা মনে আছে? তোস্তাও, কারেকা বা রোনালল্ডো নাজারিও? অবশ্যই মনে থাকার কথা। এই তিন স্ট্রাইকারদের মিলটা হচ্ছে নয় নম্বর জার্সি পরে বিশ্ব মাতানো। চোট থেকে ফিরে নয় নম্বর জার্সির সঙ্গে স্বতন্ত্র চুলের ছাঁটে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে ব্যালন ডি-অর নিজের করে নিয়েছিলেন রোনালল্ডো। সময়টা ২০০২, এই এশিয়ায় অনুষ্ঠিত আগের বিশ্বকাপের মাধ্যমে বিশ্ব মাতান নাজারিও। কিন্তু তারপর? দীর্ঘ সময় ধরে বলার মতো কোন স্ট্রাইকার পেল না ব্রাজিল। রোনাল্ডোর উত্তরসসূরী হয়ে ব্রাজিল দলে জায়গা করে নেওয়ার মত আর কোন নাম্বার নাইন, রিও দে জানেইরোর রাস্তা থেকে উঠে আসেননি। ভ্যাগনার লাভ, আদ্রিয়ানো, লুই ফাবিয়ানো, আলেকসান্দার পাতো, গ্রাফিতেরা শুধু আক্ষেপই বাড়িয়েছেন।
অবশেষে দুইজন এলেন, গ্যাব্রিইল জেসুস ও রিচার্লিসন। তবে পরের জন প্রথাগত স্ট্রাইকার নন। অথচ অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে জেসুস দলে থাকার পরও, নয় নম্বর জার্সি পেয়েছেন রিচার্লিসন! রোনাল্ডোকে মনে করিয়ে দেওয়ার মতো আগে কিছু করতে পারেননি রিচার্লিসন, কেবল টুকটাক আলোচনায় ছিলেন। তাকে নিয়ে সেলসেসাও ফ্যানরা বেশিরভাগই ছিলেন সংশয়ে। কিন্তু সেসব সংশয়বাদীদের চুপ করতে এক ম্যাচের বেশি সময় নিলেন না টটেনহামের এই স্ট্রাইকার। জোড়া গোল করে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সার্বিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকে জানিয়ে দিলেন, ‘ব্রাজিলিয়ান নয় নম্বর জার্সির যোগ্য উত্তরসূরি আমিই’।
চার ফরোয়ার্ড নিয়ে নামা ব্রাজিল শুরু থেকেই একের পর এক আক্রমণ করে যাচ্ছিল সার্বিয়ার রক্ষণভাগে, লাভ হয়নি। নেইমার, ভিনিসিয়ুস, রাফিনিয়াদের ঝলক দেখা গেলেও নয় নম্বর জার্সি পরা রিচার্লিসন শুরুতে ছিলেন একেবারেই নিষ্প্রভ। তা দেখে মাঝ বিরতিতে কোচ তিতে কোন অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন কিনা তা বলা দায়! তবে কিছু একটা ঘটেছিল রিচার্লিসনের ভেতরে। নয়তো পরের অর্ধে এমন বিধ্বংসী কীভাবে হয়ে উঠলেন তিনি?
প্রথম গোলটা পেয়েছেন নিখাদ সুযোগসন্ধানী স্ট্রাইকারের মতো। ৬২ মিনিটে ভিনিসিয়ুসের বাঁকানো মাটিকামড়ানো শট সার্বিয়ান গোলকিপার সাভিচ আটকে দিলে সামনে থাকা রিচার্লিসন পা ঠেকিয়েই বল জালে জড়ান। মনে হচ্ছিল গোলরক্ষকের এই ভুলের জন্যই তার অপেক্ষা ছিল সেখানটাই। তবে এরপর যা করলেন, তা শব্দে বর্ণনা করতে গেলে শব্দ খুঁজে পাওয়া দায়! সেই মুহূর্ত কেবল দেখার আর অনুভবের ব্যাপার। এবারও সেই ভিনিসিয়ুসের ক্রস। তবে এ যাত্রায় যেভাবে ওভারহেড কিক করে জালে জড়ালেন রিচার্লিসন, তা দেখে বিশ্বজোড়া কোটি কোটি ব্রাজিল সমর্থক ভাবতে বাধ্য, রিচার্লিসনের রূপ ধরে খোদ ২০০২ বিশ্বকাপের রোনাল্ডোই মাঠে নেমে পড়েছেন বুঝি! কিংবা এ গোলের বর্ননায় উঠে আসে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নামও। এমন গোল যে ‘ইউরোপের ব্রাজিল’-এর সবচেয়ে বড় তারকা অহরহই করেছেন এককালে!
তবে সেটা অন্য প্রসঙ্গ। সব মিলিয়ে এ জয়টা ব্রাজিলকে এনে দিল স্বস্তি। সার্বিয়ার মতো শরীরনির্ভর ফুটবল খেলা দলকেও যে লাতিন-ছন্দে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলা যায়, রিচার্লিসন-ভিনিসিয়ুসরা দেখালেন সেটাই। তাতে জি গ্রুপের শীর্ষে আছে ব্রাজিল। তবে ম্যাচে তিতের দলের সবচেয়ে বড় তারকা নেইমার পান গোড়ালিতে চোট। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার গোরালির যে ছবিটি ছড়িয়ে পরেছে, তা দেখে রীতিমত আঁতকে উঠতে হবে। সেলেসাও বস তিতে অবশ্য শংকার কিছু দেখছেন না, বা সেটা স্বীকার করছেন না, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী, নেইমার খেলবে। সে বিশ্বকাপে খেলা চালিয়ে যাবে। আমি দেখিনি সে আঘাত পেয়েছে। ব্যথা সয়েও খেলে যাওয়ার সামর্থ্য তার ছিল। এমনকি সে আমার চোখও ফাঁকি দিয়েছে।’ আগামী পরশু রাতে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ সুজাইল্যান্ড। এই ম্যাচের আগেই যে সুন্থ হয়ে উঠতে হবে ব্রাজিলের প্রাণভোমরাকে!
আজকের খেলা
তিউনিশিয়া-অস্ট্রেলিয়া, বিকাল ৪টা
পোল্যান্ড-সউদী আরব, সন্ধ্যা ৭টা
ফ্রান্স-ডেনমার্ক, রাত ১০টা
আর্জেন্টিনা-মেক্সিকো, রাত ১টা
সরাসরি : বিটিভি/জিটিভি/টি স্পোর্টস
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন