ইউক্রেনের বিপক্ষে ওয়েলস ২৫ জুন প্লে-অফ ম্যাচে খেলার আগে, ওয়েলসের বিখ্যাত সঙ্গীতশিলী ডেভিড ইভান হাজির হয়েছিল মাঠে। ম্যাচের আগে গেয়েছিল ‘ইমা ও হিদ’ (যার অর্থ এখনো টিকে আছি ) গানটি। দেশটিতে কথিত আছে যে এই গান শুনে গ্যারেথ বেলরা হারেন না। একদম তাই হলো। আত্মবিশ্বাসে টগবগ করা ওয়েলস ৬৪ বছর পরে জায়গা করে নিল বিশ্বকাপে। আন্তর্জাতিক ফুটবল ১৪৬ বছর ধরে খেলা দেশটির জন্য কাতার বিশ্বকাপ তাদের ইতিহাসেই মাত্র দ্বিতীয় বিশ্বকাপ আসর। সেখানে খেলতে নেমে প্রথম ম্যচে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ১-১ ব্যবধানে ড্র করাটা খুব একটা খারাপ ফলাফল ছিল না বর পেজের দলের জন্য। তবে অপ্রত্যাশিতভাবেই পরের ম্যাচে হেরে যায় ইরানের কাছে। তাই দীর্ঘদিন পরে বিশ্বমঞ্চে ফিরে আসা দলটিকে যদি শেষ ষোলতে উঠতে হয় তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই। গ্যারেথ সাউথগেটের ইংল্যান্ড প্রথম দুই ম্যাচে দেখিয়েছে দুই ধরনের চরিত্র। সমীকরণ জটিল করতে না চাইলে থ্রি লায়ন্সরা ম্যাচটি জিততেই চাইবে। অসম্ভব শক্তিশালী আক্রমণভাগই সাউথগেটের বর অস্ত্র। সেই শক্তির প্রদর্শনী কি আজকের ম্যাচে করবেন রক্ষণশীল ম্যানেজার সাউথগেট? উত্তর মিলবে বাংলাদেশ সময় আজ মধ্যরাতে আহমদ বিন আলী স্টেডিয়ামে।
এই দুই দেশ একসময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ ছিল বলে, ওয়েল অংশ নিতে পারেনি প্রথম তিন বিশ্বকাপ। কারণ ব্রিটেনের অনাগ্রহ। এরপর ১৯৫৮ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার খেলা ওয়েলস ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে বাছাইপর্বে পল বদিনের পেনাল্টি মিসের খেসারত হিসেবে। ইয়ান রাশ বা রায়ান গিগসরা কখনো দেশকে ইউরো বা বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার কাজটি করতে পারেননি। তবে সেই কাজটা করে দেখিয়েছিলেন বেল। সাবেক এই রিয়াল ফরোয়ার্দের কাঁধে চড়েই এবারের বিশ্বকাপে এসেছে ওয়েলস। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ড্র হওয়া ম্যাচেও গোলটি করেছিলেন বেল। রক্ষণাত্মক ইরানের বিপক্ষে গোলরক্ষক ওয়েন হেনেসি দায়িত্ব জ্ঞাণহীন লাল কার্ড না দেখলে, একটা পয়েন্ট হয়তো পেত ওয়েলস। হেনস্যার স্থানে আজ ওয়েলস দলে খেলবে ড্যানি ওয়ার্ড। তবে সমীকরণ অবশ্য একই থাকতো। যেকোন মূল্যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়। ঘুরেফিরে আজকের ম্যাচেও জয় ছাড়া বিকল্প নেই বেল-রামসিদের। জো অয়ালেন চোট থেকে ফিরে শেষ ম্যাচে নেমেছিলেন মাঠে, তবে খুব একটা ভালো খেলেননি। রামসিও খেলেছেন আশাতীত বাজে। তবে ইংল্যান্দের মত বড় ম্যাচে বড় নামগুলোকে ম্যানেজার পেজ বেঞ্চে রাখবেন না বলেই ধারণা। তবে মুরের স্থানে ফিরে আসবেন ড্যানিয়েল জেমস।
নিজেদের দেশে অনুষ্ঠিত ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ জয়ী দলটিকে নিয়ে সবশেষ বিশ্বকাপ ও ইউরোতে বৃটিশ মিডিয়ার দাবি ছিল বিশ্বকাপ ঘরে ফিরছে বলে। তবে বিশ্বকাপে সেমি ও ইউরোতে ফাইনালের বড় মঞ্চে হোচট খায় থ্রি লায়ন্সরা। তাই এবার দেশটির গণমাধ্যম আর সেই আশার বাণি শুনাচ্ছে না। বরং তারা ব্যস্ত ভকাতারে কেন বিশ্বকাপ হচ্ছে তার প্রতিবাদ নিয়েই। এই ব্যাপারটি চাপমুক্তি হিসেবে কাজ করছে থ্রি লায়ন্সদের জন্য। এদিকে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মত কোন বৃটিশ দলের বিপক্ষে লড়তে যাচ্ছে ইংল্যান্ড।
এদিকে ইংল্যান্ড দলে আসবে পরিবর্তন। বিষ্ময়বালক জুড বেলিংহ্যামের পরিবর্তে একাদশে ফিরবেন জর্ডান হেন্ডারসন। তাছাড়া কাই ওয়াকার ফিরে আসায় সাউথেগেট ফিরে যেতে পারেন তার পছন্দের ৩-৫-৩ ফর্মেশনে। তবে ইংলিশ ফুটবল বিশেষজ্ঞদের মতামত, মিডফিল্ডার ম্যাসন মাউন্টের পরিবর্তে ফিল ফোডেন মাঠে নামলে দল আরও ভালো ফলাফল পাবে। তবে আগের আসরের গোল্ডেন বুট জইয়ী কাপ্তান হ্যারি কেইনের দিকে সাউথগেট তাকিয়ে থাকবেন গোলের আশায়।
ওয়েলসকে নক-আউটে যাওয়ার জন্য একটি অলৌকিক ঘটনাই ঘটাতে হবে। কারণ ইরানের কাছে হতাশাজনক পরাজয়ের পরে শেষ ষোলতে পৌঁছতে তাদের ইংল্যান্ডকে চার গোলে হারাতে হবে! তবে এটির সম্ভাবনা কম হলেও অন্য ফলাফলের উপর তাদের নির্ভর করতে হবে না। গ্রুপের অন্য ম্যাচে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি হবে, বিজয়ী দল কোয়ালিফাই করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন