বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

সুইসবাধা পেরিয়ে শেষ ষোলয় ব্রাজিল

নাভিদ হাসান | প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

কাজানে ২০১৮ বিশ্বকাপে ব্রাজিল-বেলজিয়াম ম্যাচের ৩১তম মিনিটের খেলা চলছে। প্রতিআক্রমণে ব্রাজিলের বক্স থেকে বল টেনে একাই কেভিন ডি ব্রুইনাকে দিলেন রোমালু লুকাকু। ডি ব্রুইনা বক্সের বাহির থেকে শটে গোল করতে ভুল করলেন না। সেই ম্যাচের পর সেলেসাও সমর্থকদের মনে একটাই আফসোস ছিল। ইশ কাসেমিরো যদি মাঠে থাকতেন, তাহলে লুকাকু সেই ভোঁ দৌড় অন্তত দিতে পারতেন না। এই সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের প্রসঙ্গে পুনরায় ফেরার আগে একটু বর্তমানে আসি। ঠিক সাড়ে চার বছর পর গতরাতে, কাতারে আরেকটি বিশ্বকাপের ‘জি’ গ্রুপের দ্বিতীয় ধাপের ম্যাচ চলছে ৯৭৪ স্টেডিয়ামে। নেইমার বিহীন ব্রাজিলের প্রতিপক্ষে সুইজারল্যান্ড। যে দলকে ১৯৫০ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে ও ২০১৮ রাশিয়ার আসরে পেয়েও হারাতে ব্যর্থ সেলসেসাওরা। তবে সেই কাসেমিরোর বৌদলতে অবশেষে ‘সুইস ব্যাংকের গোপন কক্ষে’ ব্রাজিল ঢুকতে পারল সাম্বার নাচ না দেখিয়েও। কাসেমিরোর ম্যাচ নির্ধারণী গোলে ১-০ ব্যবধানে সুইসদের হারিয়ে ফ্রান্সের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে এবারের আসরের শেষ ষোলো নিশ্চিত করল ব্রাজিল।
ব্রাজিল দলে অভাব নেই আক্রমণাত্মক ফুটবলারের। এরপরও নেইমারের অভাব পূরণীয় ছিল না। বলা ভালো গত বছর ঘরের মাঠে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে কোপা আমেরিকার শিরোপা খোয়ানোর পরই ব্রাজিল বস তিতে ধীরে ধীরে ৪-২-৩-১ ছকের দিকে হাঁটতে থাকেন। সেই কোয়শলে এটাকিং মিডফিল্ডের দায়িত্ব থাকে নেইমারের উপর। কোচের দেওয়া স্বাধীন খেলার সনদ পেয়ে পিএসজি উইঙ্গার সেলেসাওদের মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন পুরনো ছন্দ। সুইসদের বিপক্ষে সেই ফুটবলারকে হারিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই পছন্দের ছক থেকে বেরিয়ে আসেন তিতে। গতরাতে দল খেলে কাগজে-কলমে ৪-৩-৩ ছকে। চোটাক্রান্ত নেইমার ও দানিলোর পরিবর্তে একাদশে জায়গা মেলে ফ্রেড ও মিলিশোর।
দেখে ৪-৩-৩ ফরমেশন মনে হয়েছিল। আর তা যদি হতো তবে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র এবং রাফিনিয়া খুশিই। দুজনই ক্লাবে এই ফরমেশনেই খেলেন। কিন্তু ম্যাচ শুরু হওয়ার বেশ পরে ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হলো, ব্রাজিল ৪-৪-২ ছকে খেলার চেষ্টা করছে। ভিনিসিয়ুস ও রাফিনিয়া দুই উইংয়ে। রিচার্লিসনের সঙ্গে সামনে পাকেতা। এই ছকে ব্রাজিলের খেলায় কোন ছন্দ খুঁজে পাওয়া যায়নি প্রথমার্ধে। বলের দখল ব্রাজিলেরই ছিল, কিন্তু সেটা আক্রমোনে রূপ নেয়নি। ম্যাচের ২৭ মিনিটে রাফিনিয়ার একটি ক্রস হঠাৎ ফাঁকায় পেয়ে ফিয়েছিল ভিনিসিয়ুসকে। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড গোলকিপার সমারকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি। কিছুক্ষণ পর দূর পাল্লার এক ব্যর্থ শট নেন রাফিনিয়া নিজে। বার্সা ফরোয়ার্ডের শট ছিল গোলকিপার বরাবরই।
যখন চিতেতে দেখলেন তার কোউশল খুব একটা কাজে দিচ্ছে না, তখন বাধ্য হয়ে বিরতির পর বদল আনলেন। পাকেতার বদলে মাঠে নামালেন আরেক রিয়াল ফরোয়ার্ড রদ্রিগোকে। স্বাভাবিকভাবে ছকেও একটু বদল আসে। কিন্তু সেভাবেও ব্রাজিলের খেলায় ছন্দ ফিরছিল না। তাই আবার বদল, এবার ফ্রেদের বদলে মাঠে নামেন ব্রুনো গিমারেস। এই নিউক্যাসেলে খেলা মিডফিলদারকে নামানোর পর-পরই ফল প্রায় পেয়েই গিয়েছিল ব্রাজিল। মাঝমাঠে প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নেন গিমারেস, সেটা রিচার্লিসন হয়ে চলে যায় ভিনিসিয়ুসের কাছে। এক টানে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে গেলেন ২২ বছর বয়সী উইঙ্গার। তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে মার্কার প্রায় কাছাকাছি কিনতি এই তরূণ ফরোয়ার্ড একদম শেস মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। তারপর মাটিগড়ানো বাকানো শটে বল জালে ঠেলে দিলেন, গোল! কিন্তু সমর্থকদের উল্লাস থামিয়ে দিলো ভিএআর। গিমারেস যখন বল কেড়ে নিচ্ছিলেন তখন অফসাইডে ছিলেন রিচার্লিসন।
ম্যাচ ড্র করলেও শেষ ষোলতে গ্রুপ সেরা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ভালোভাবেই টিকে থাকতো ব্রাজিলের। তবে তিতেকে দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি যেকোন মূল্যে জয় চান। আবার বদল আনলেন ছকে। এবার রাফিনিয়া ও প্রথম ম্যাচ জইয়ের নায়ক রিচার্লিসনকে উঠিয়ে নিলেন। নামালেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস ও অয়ান্তোনিও। ম্যাচের ৮২তম মিনিটে কিছুক্ষণের জন্য রিয়াল মাদ্রিদের পুরোনো সময় ফেরালেন তিন ব্রাজিলিয়ান। প্রথমে বাঁ প্রান্ত থেকে ভিনিসিয়ুসের পাস রদ্রিগোকে। রদ্রিগোর ব্যাক ফ্লিক তা চালান করে দিলেন বক্সের ভেতরে থাকা কাসেমিরোর কাছে। বল পেয়ে এক মুহূর্ত দেরি করেননি এই মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যাওয়া কাসেমিরো। জোরালো শট সুইস ডিফেন্ডার আকাঞ্জির হালকা স্পর্শ নিয়ে জালে জড়ালো। সুই কিপার সমার দেখে থাকা ছাড়া কোন উপায় ছিল না।
এরপরও ব্যবধান বাড়ানোর দারুণ দুটি সুযোগ পেয়েছিল ব্রাজিল। প্রথমে প্রায় এক ডিফেন্ডারের বিপক্ষে দুইজন দাঁড়িয়ে থাকলেও ভিনিসিয়ুসের স্বার্থপরতায় স্কোরলাইন দ্বিগুণ হয়নি ব্রাজিলের। রিয়াল উইঙ্গার নিজে গোল করতে চেয়ে বল বাড়াননি ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা অ্যান্তোনিওকে। পরে নিজেও বলের দখল হারিয়েছেন। একটু পর সেই ভিনির পাস থেকে ফাঁকায় বল পেয়েও গোল করতে পারেননি ক্লাব সতীর্থ রদ্রিগো। দুবারই দুর্দান্ত রক্ষণকাজ দেখিয়েছেন আকাঞ্জি। টানা দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে ব্রাজিল। আর সুইসদের সংগ্রহ ৩ পয়েন্ট। অন্যদিকে ১ পয়েন্ট করে নিয়ে শেষ দুটি স্থানে আছে ক্যামেরুন ও সার্বিয়া।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন