বহু সমীকরণ ও পাটিগণিতের হিসেব চুকিয়ে শেষ ষোলতে টিকিট পেয়েছে আর্জেন্টিনা। লিওনেল স্কালোনির দল সউদী আরবের বিপক্ষে হারের পরই শুরু হয়ে যায় নানান হিসেব। তবে একে একে সব কিছুই মিলিয়ে নক-আউটে লিওনেল মেসি-ডি মারিয়ারা। বলা হয় শুরুতেই ধাক্কা খাওয়া নাকি অনেক সময় সাপেবর হয়। আর্জেন্টিনাতো শেষ দুই ম্যাচে সেটাই প্রমাণ করলো। এই শতাব্দীর যে কোন বিশ্বকাপের চেয়ে বর্তমান আকাশী-নীলরা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। তাদের এই দৃঢ়তার পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে। যেমন প্রথম ম্যাচ হারার পরও ১৯৯০ সালে ইতালিতে ফাইনাল খেলেছিল আলবিসেলেস্তারা। তাছাড়া ১৯৭৮ এবং ১৯৮৬ সালে যে দুইবার তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছেল, দুইবারই প্রথম রাউন্ডে পোল্যান্ডকে পেয়েছিল। আর্জেন্টিনা দলের শরীরী ভাষা ও সমর্থকদের উচ্চবাচ্য দেখলেই স্পষ্ট হয় যে ‘কাউরে ডরায় না’ এই দল। তবে আজ রাত একটায় আহমেদ বিন আলী স্টেডিয়ামে শেষ ষোলর ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষের শব্দ প্রয়োগে অবশ্য বেশ শ্রদ্ধাশীল মেসিরা। কিন্তু, নাভে-ভারে পিছিয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়া সেসবের তোয়াক্কা করছে কই! জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ২০০৬ সালের বিশ্বকাপের পর আবারও নক-আউটে উঠে মেসিদেরকে হারিয়ে দেওয়ার মত বড় কথাই বলে বসলো সকারুরা। এই কথার ফুলঝুরি উল্টো নিজেদের উপর চাপ সৃষ্টি করবে কিনা তা জানা যাবে আজ মধ্যরাতে।
আর্জেন্টিনা সবশেষ ম্যাচে যেভাবে পোলিশদের ভবিপক্ষে দাপট দেখিয়েছে, তাতে উজ্জীবিত না হওয়ার কোনো কারণ নেই স্কালোনির। তবে এই ৪৪ বছর বয়সী কোচের উচ্ছ্বাসের কারণটা ভিন্ন। দলের আগামীর তারকারা দারুণ পারফরম্যান্স করেছে পোল্যান্ডের বিপক্ষে। আলাদা করে বললে হুয়ান আলভারেজ, ম্যাক অ্যালিস্টার ও এনজো ফের্নান্দেজ। দলের সবচেয়ে বড় তারকা মেসি পোলিশ ডিফেন্স ও গোলরক্ষকের সামনে ছিলেন অনুজ্জ্বল। তবে তিন উঠতি তারকা সেই অভাব বুঝতে দিলো কোথায়? বরং জানান দিলো যে চলে এসেছে আলবিসেলেস্তাদের নতুন যুগ। তারা যদি মেসিকে সঠিকভাবে সহায়তা প্রদান করেন, তবে সকারুদের হারাতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না।
এই ম্যাচ জিততে খুব একটা বেগ পাওয়ার কথা নয় স্কালোনির শীষ্যদের। অন্তত পরিসংখ্যান তেমনটাই বলছে। সকারুদের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ৭ বারের মোকাবেলায় ৫টি ম্যাচেই জিতেছে আর্জেন্টিনা। অন্যদিকে ১টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। তবে ১৯৮৮ সালে প্রথম মোকাবেলায় ৪-১ ব্যবধানে হেরে যায় আলবিসেলেস্তারা। দুই দলের মাঝে এখন পর্যন্ত সেটিই সবচেয়ে বড় ব্যবধানের ম্যাচ ছিল। এদিকে আজকের ম্যাচেও ফের্নান্দেজকে প্রথম একাদশে বিবেচনা করবেন স্কালোনি, এমনটাই গুঞ্জন আছে। মেক্সিকো এবং পোল্যান্ড উভয় ম্যাচেই লিয়েন্দ্রো পেরেদেসের আগে ফের্নান্দেজকে প্রাধান্য দিয়েছেন আর্জেন্টাইন কোচ। তবে লিসান্দ্রো মার্তিনেজকে প্রথম একাদশে দেখা যাবে কিনা তা নিয়ে এখনও আছে ধোঁয়াশা।
আস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটে পরশক্তি হলেও ফুটবলে একদম নব্য শক্তির ঝলক দেখাচ্ছে। তবে সকারু দলের বেশ মিল আছে তাদের অজি ক্রিকেট দলের মত। এই দেশের দুই দলেরই মুখের কথা চলে বারুদের মত। কোচ গ্রামাগ আরর্নল্ডের দল ফ্রান্স ও ডেনমার্কের মত দলের সঙ্গে একই গ্রুপে থেকেও পেয়েছে নক আউটের টিকিট। এই কারণেই হয়তো আশায় বুক বাধছে সকারু ম্যানেজার। আর সেই আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করতে গিয়েই করে ফেললেন একটু বাড়াবাড়ি। তাদের নেই ২০০৬ সালের সেই সোনালী প্রজন্ম। তবে আছে গত টোকিও অলিম্পিকে আর্জেন্টিনাকে ২-০ গোলে হারানোর অভিজ্ঞতা। যদিও অলম্পিক দল আর জাতীয় দলের মধ্যে আছে বিস্তর ফারাক। গণ্মাধম্যের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আর্নল্ড বলেন, ’আমরা অবশ্যই জিতব! গত বছর টোকিও অলিম্পিকে এই দলকে কোচিং করাই আমি এবং আমরা আর্জেন্টিনাকে ২-০ গোলে হারিয়েছিলাম। এটা এগারো জনের বিপক্ষে সম পরিমাণ ফুটবলারের লড়াই। আমি মনে করি লড়াইটা স্রেফ মানসিকতা ও তাড়নার। আমরা একটি দল হিসেবে খেলি, এই ব্যাপারটা আমরা পুরো বিশ্বকে দেখিয়েছি আমরা পরস্পরের আস্থার প্রতীক।’
এরপই আরনল্ড যা বললেন তা রীতিমত ধৃষ্টতা। দ্বিতীয় রাউন্দের ম্যাচ জিতে সামনে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে পেতে চায় ব্রাজিলকে! সকারু কোচ বলেন, ‘ব্রাজিলকে প্রতিপক্ষে হিসেবে পেতে চায় পরের ধাপে। আমরা সেরাদের বিপক্ষে খেলতে চাই। বিশ্বকাপে ৩২ দল খেলে, এখন আমরা শেষ ষোলোয়। সেরাদের বিপক্ষে খেলে আমরা নিজেদের পরীক্ষা করতে চাই এবং বাকি বিশ্বকে দেখাতে চাই আমাদের সংস্কৃতি কী।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন