অঘটনের বিশ্বকাপে বেলজিয়াম ও ক্রোয়শিয়াকে টপকে গ্রুপ সেরা হয়েছে মরোক্কো। মেসি-ডি মারিয়াদের হারতে হয়েছে সাউদী আরবের কাছে। জার্মানির গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের রাতে স্পেনকে হারিয়ে ওই গ্রুপের সেরা হয়েছে জাপান। এমনকি ধুঁকতে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হারতে হয়েছে পর্তুগালকে। তখন জি গ্রুপের খেলা বাকি। অর্থাৎ একমাত্র ব্রাজিলের সামনে সুযোগ ছিল গোটা ৯ পয়েন্ট পাওয়ার। তবে এবারের বিশ্বকাপ যে বড়দের নিচে নামার পালা! তাই নেইমাররাও কাটলেন পঁচা শামুকে পা। তিন পয়েন্ট পাওয়া তো দূরের কথা, ম্যাচ ড্র করে এক পয়েন্টও সংগ্রহ করতে ব্যর্থ সেলেসাওরা। লুসিয়াল স্টেডিয়ামে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পরশুরাতে ক্যামেরুনের বিপক্ষে ১-০ ব্যবধানে হেরেছে ৫ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। এদিকে ব্রাজিলকে হারিয়ে রেকর্ড গড়ল ক্যামেরুন। বিশ্বকাপের মঞ্চে এর আগে আর কোনো আফ্রিকান দলই যে হারাতে পারেনি সেলেসাওদের। রোমাঞ্চের ফুলঝুরি ছড়ানো জি গ্রুপের আরেক ম্যাচে সার্বিয়াকে ৩-২ গোলে হারিয়ে দিয়েছে সুইজারল্যান্ড। ফলে ক্যামেরুনের রেকর্ডগড়া জয়েও কোনো লাভ হয়নি। ব্রাজিলের সঙ্গে গ্রুপের রানার্স-আপ হয়ে নক-আউটের টিকিট কেটেছে সুইসরাই।
যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ১৯৯৪ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে কোন দলই ৯ পয়েন্ট নিয়ে নক-আউটে যেতে পারেনি। মাঝের ৬ আসরে অবশ্য সেই ঘটার আর পুনরাবৃত্তি ঘটেনি। তবে কাতারে এসে আবারও হলো। তাই ক্যামেরুনের বিপক্ষে হার থেকে একটা সুসংবাদ খুঁজে পেতে পারে ব্রাজিল। কারণ ১৯৯৪ সালেও যে ব্রাজিলই শিরোপা জিতেছিল। তবে ব্রাজিলের কোচ তিতের ভাবনার জায়গা জুড়ে থাকবে দলের ফিনিশিং নিয়ে। গ্রুপের আগের দুই ম্যাচে ব্রাজিল তখনই ভালো খেলেছে, যখন এক গোল পেয়ে প্রতিপক্ষকে ডিফেন্সিভ খেলা থেকে বের হয়ে আসতে বাধ্য করেছে। তার আগ পর্যন্ত আক্রমণে ভুগেছে তিতের দল। পরশুরাতেও ম্যাচজুড়েই ক্যামেরুনের পোস্টমুখে আক্রমণের পর আক্রমণ চালিয়েছে, কিন্তু ফিনিশিংয়ের অভাবে গোলটা পাওয়া হলো না ব্রাজিলের।
ছোটখাটো এসব ব্যাপারের বাইরে শেষম্যাচে তেমন কিছু পাওয়ার বা হারানোর ছিল না ব্রাজিলের। সেকেন্ড রাউন্ড আগেই নিশ্চিত ছিল। ক্যামেরুনের বিপক্ষে ম্যাচে তাই সেলেসাও কোচ একাদশে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন তা জানাই ছিল। হলোও তাই,নয় পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামল ব্রাজিল। এর মধ্যে অধিনায়ক দানি আলভেসের রেকর্ডও হলো। এই রাইটব্যাক ৩৯ বছর ২১০ দিন বইয়সে খেলতে নেমে বনে গেলেন বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচে সবচেয়ে বেশি বয়সে খেলা ব্রাজিলিয়ানে। তবে তিতে একেবারে বেঞ্চের দল নামিয়ে দিলেও একটা ব্যাপার পরিষ্কার- সেখানেও প্রতিভার ছড়াছড়ি।
ম্যাচের প্রথমার্ধে ব্রাজিলের বলের দখল ছিল ৬৮ শতাংশ। আগের দুই ম্যাচের চেয়ে বেশি। কিন্তু রদ্রিগো ও মার্তিনেল্লির দুটি শট ছাড়া প্রথমার্ধে তেমন বড় সুযোগ তৈরি করতে ব্যর্থ ব্রাজিল। তুলনায় বিরতির ঠিক আগে এদেরসনকে থামাতে হয়েছে এমবুয়েমোর দুর্দান্ত হেডে। চলমান বিশ্বকাপে ব্রাজিলের পোস্টমুখে প্রথম সে শটই বুঝিয়ে দিয়েছে, ক্যামেরুন একেবারে ছেড়ে কথা বলবেনা। তখনও অবশ্য শেষ ষোলোতে যাওয়ার আশা বেঁচে ছিল ক্যামেরুনের। বিরতিতে এদিকে লুসাইল স্টেডিয়ামে যখন গোলশূন্য সমতায় ক্যামেরুন, স্টেডিয়াম ৯৭৪ থেকে ক্যামেরুনের জন্য খবর এল- ততক্ষণেই ম্যাচে দুবার করে গোল-বিনিময় হয়ে গেছে! অর্থাৎ সার্বিয়া দিয়েছে দুই গোল, দুটি দিয়েছে সুইজারল্যান্ড। কিন্তু ওদিকে ৪৮ মিনিটে ফ্রয়েলারের গোলে সুইজারল্যান্ড এগিয়ে গেল, এদিকে মাথায় বাজ পড়ল ক্যামেরুনের। সুইসরা জিতে গেলে ক্যামেরুন যাই করুক, কোনো আশা নেই। ব্রাজিলীয়ানদের অন্তরেও তখন শংকা, সুইজারল্যান্ড আর এক গোল পেলেই যে সেলেসাওরা শীর্ষস্থানও খোয়াবে! ব্রাজিল আক্রমণে গতি বাড়িয়েছে, ৫৭ মিনিটে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল! কিন্তু মিলিতাওয়ের শট পোস্টে লেগে ফেরে। এরপরও ব্রাজিল চেষ্টা করেছে, কিন্তু গোল আসেনি। উল্টো গোল খেয়ে গেছে ৯২ মিনিটে। এমবেকেলির অসাধারণ ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে গোল আবুবকরের! কিন্তু গোল করেই একটা ঝামেলা পাকিয়ে ফেলেছেন আবুবকর। মিনিট দশেক আগেই যে হলুদ কার্ড দেখেছন, তা ভুলে গিয়েই কি না, গোলের পর জার্সি খুলে ফেললেন। সঙ্গে সঙ্গে হলুদ কার্ড, দুই হলুদে লাল!
আবুবকরের গোলেই শেষ হলো ব্রাজিলের রেকর্ড-যাত্রা। ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত ১৯৯৮ বিশ্বকাপ আসরের গ্রুপ পর্বে নরওয়ের বিপক্ষে হারের পর ৬ বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে কখনোই হারেনি ব্রাজিল। গত ম্যাচেই গ্রুপ পর্বে টানা ১৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকার অসাধারণ এক রেকর্ডও গড়েছে সেলেসাওরা। সেটি শেষ হলো আফ্রিকান কোনো দলের কাছে ২১ ম্যাচে ব্রাজিলের প্রথম হারে। আগামী সোমবার শেষ ষোলোতে ব্রাজিল খেলবে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে। অন্যদিকে সুইজারল্যান্ড মঙ্গলবার নামবে পর্তুগালের বিপক্ষে।
আজকের খেলা
ফ্রান্স-পোল্যান্ড, রাত ৯টা
ইংল্যান্ড-সেনেগাল, রাত ১টা
সরাসরি : বিটিভি/জিটিভি/টি স্পোর্টস
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন