কাতার বিশ্বকাপে শুরু থেকে ফেভারিটদের তালিকায় না থাকলেও ইতোমধ্যে একের পর এক অঘটনের জন্ম দিয়ে সবার নজর কেড়েছে এশিয়ার জায়ান্ট জাপান। এখন টুর্নামেন্টের যেকোন বড় দলের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠেছে তারা। বিপদজনক তকমা নিয়েই আজ শেষ ষোল’তে ‘এফ’ গ্রুপ রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে ‘ই’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন জাপান। আল ওয়াকরার আল জানুব স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় শুরু হবে ম্যাচটি। জাপানীদের আশা ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে শেষ আটে জায়গা করে নেয়া। অন্যদিকে ক্রোয়েটদের লক্ষ্য জাপানকে হারিয়ে নক আউট পর্বে টিকে থাকা। তাই তারা এশিয়ান জায়ান্টদের মোকাবেলার আগে বাড়তি পরিকল্পনা মাথায় নিয়েই মাঠে নামবে।
কোচ হাজিমে মরিয়াসুর জাপান সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেন ও জার্মানীকে হারিয়ে ‘ই’ গ্রুপের শীর্ষস্থান দখল করে নক আউট পর্বে পা রাখে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে স্পেনকে ২-১ গোলে হারিয়ে গ্রুপের শীর্ষস্থান নিশ্চিত করে জাপান। যদিও ওই ম্যাচে আয়ো টানাকার দ্বিতীয় গোলটি নিয়ে বিতর্ক ছিল। তবে সব বিতর্ক পেছনে ফেলে শেষ পর্যন্ত জাপানই হয় গ্রুপ সেরা। আরো একবার মরিয়াসু দ্বিতীয়ার্ধের খেলোয়াড় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত দলের জয়ে বড় ভূমিকা রাখে। আলভারো মোরাতার গোলে ১১ মিনিটে লিড নিয়েছিল স্পেন। ৪৮ মিনিটে বদলী খেলোয়াড় রিটসু ডোয়ানের গোলে সমতায় ফেরে জাপান। তিন মিনিট পর আরো এক বদলী খেলোয়াড় কাওরু মিটোমার দারুণ এক পাসে টানাকা গোল করে জাপানীদের শেষ ষোলতে পৌঁছান। এ পাস নিয়েই বিতর্কের জন্ম। বলটি পাস দেওয়ার আগে সাইডলাইন অতিক্রম করেছে এমনটি মনে হলেও ভিএআর সুক্ষ বিচারে তা মেনে নেয়নি। এর আগে গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জার্মানদের ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করে জাপান। এক আসরেই ২০১০ ও ২০১৪’র দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে হারানো দলটি যে নক আউট পর্বে খেলবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে মাঝে গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে কোস্টারিকার কাছে ১-০ গোলে হেরে ছন্দ হারিয়েছিল এশিয়ার জায়ান্টরা। চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল তাদের। আজকের ম্যাচে যদি জাপান জিততে পারে আর পরের ম্যাচে ফেভারিট ব্রাজিলকে হারিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া শেষ আট নিশ্চিত করে তবে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত অল এশিয়ান কোয়ার্টার ফাইনালে মোকাবেলা করবে এশিয়ার দুই ফুটবল পরাশক্তি।
এখনো পর্যন্ত বিশ^কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা হয়নি জাপানের। মরিয়াসুর সুপার সাব যদি আরো একবার জ¦লে ওঠে তাহলে ক্রোয়েশিয়া-জাপান ম্যাচে যেকোন কিছুই সম্ভব। উজ্জীবিত জাপান শিবির সেই আত্মবিশ^াস নিয়েই আজ মাঠে নামবে। ম্যাচের আগে গতকাল এমনটাই জানান জাপানের কোচ হাজিমে মরিয়াসুর। তিনি বলেন,‘ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে শেষ আটে খেলতে আমার ছেলেরা প্রস্তুত আছে। গ্রুপ পর্বে তারা নিজেদের প্রমাণ করেছে। এবার নক আউট পর্বে আরো উজ্জীবিত হয়েই মাঠে নামবে আমার দল।’
যদিও স্পেনের বিপক্ষে ডিফেন্ডার কো ইতাকুরা পরপর দুই হলুদ কার্ড পাওয়ায় ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে খেলতে পারছেন না। বদলী বেঞ্চ থেকে উঠে এসে নিজেকে প্রমাণ করা তাকেহিরো টোমিইয়াসুর মূল দলে খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। স্টুটগার্ট মিডফিল্ডার ওয়াটারু এন্ডো আগের ম্যাচে বদলী হিসেবে নামলেও ফিটনেস সমস্যায় রয়েছেন। রাইট ব্যাক হিরোকি সাকাই অনুশীলনে ফিরেছেন। তবে পেশীর সমস্যায় ভুগছেন টাকেফুসা কুবো। ফলে আক্রমণভাগে তাকে নিয়ে দু:শ্চিন্তায় আছেন কোচ হাজিমে মরিয়াসুর।
অন্যদিকে ‘এফ’ গ্রুপে মরক্কোর পরে দ্বিতীয় স্থানে থেকে শেষ ষোলতে খেলতে এসেছে ক্রোয়েশিয়া। গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে স্বর্ণালী প্রজন্মের বেলজিয়ামের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে নক আউট পর্বের টিকিট পায় ক্রোয়েশিয়া। এর আগে মরক্কোর বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করে এবারের বিশ্বকাপ শুরু করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে কানাডাকে ৪-১ ব্যবধানে উড়িয়ে দেয় ক্রোয়েটরা। সব ধরনের প্রতিযোগিতায় টানা নয় ম্যাচে অপরাজিত থেকে শেষ ষোলতে খেলতে এসেছে তারা। আগের দুই আসরেই শেষ আট নিশ্চিত করা ক্রোয়েটরা ইতিহাস থেকেও আত্মবিশ^াস পেতে পারে জাপান ম্যাচে। যদিও কাউন্টার অ্যাটাকে দুর্দান্ত খেলা জাপানীদের বিপক্ষে কোন কিছুই সহজ ভাবে নিতে চাচ্ছেন না ক্রোয়েশিয়ার কোচ জøাটকো ডালিচ। ২৫ বছর আগে প্রথম দেখায় জাপানের কাছে ৪-৩ গোলে হেরেছিল ক্রোয়েশিয়া। এরপর ১৯৯৮ বিশ্বকাপে জাপানীদের হারানোর পর ২০০৬ সালে গোলশূন্য ড্র করে তারা। ক্রোয়েশিয়া ইতোমধ্যেই নিশ্চিত করেছে যে, জাপান ম্যাচের জন্য পরিপূর্ণ ফিট একটি দলকেই তারা মাঠে নামাচ্ছে। এ ম্যাচে হলুদ কার্ড পেলে সম্ভাব্য কোয়ার্টার ফাইনালে দেখা যাবে না অভিজ্ঞ দুই খেলোয়াড় লুকা মদ্রিচ ও ডিয়ান লোভরেনকে। সেরা একাদশে আগের দলই থাকবে বলে জানিয়েছেন ডালিচ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন