ব্রাজিল দলের ডাক্তার রদ্রিগো লাসমারের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্বের সেলেসাও ভক্তরা! একটু অবাক লাগছে? লাগাটাই স্বাভাবিক। শেষ ষোলর মত মহাগুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ের পূর্বে ফুটবল দলের খেলোয়াড় ও ম্যানেজারকে নিয়ে আগ্রহ থাকে সংবাদ মাধ্যমের। তাহলে দলের চিকিৎসককে নিয়ে কেনো এতো টানাটনি? কারণটা হচ্ছে দলের বেশিরভাগ ফুটবলারের চোট ও ভাইরাস সংক্রমণের সবশেষ আপডেট নেওয়া। স্মরণকালের সবচেয়ে ছন্দময় ফুটবল দলকে নিয়ে কাতারের বিমান ধরেছিলেন দলটির বস তিতে। তবে প্রথম ম্যাচেই চোটে গোড়ালির চোটে নেইমার ও ডানিলো। এরপর সংক্রমণজনিত জ্বর ও নানা সমস্যা একে একে ভিনিসুয়স, সান্দ্রো, পাকেতাকে জেকে ধরলো। সবশেষ ক্যামেরুনের ম্যাচে লিগামেন্টের চোটে পরে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যায় গ্যাব্রিয়েল জেসুস আর অ্যালেক্স তেলের। তাই স্টেডিয়াম ৯৭৪ এ রাউন্ড অব সিক্সটিনে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে আজ রাত একটায় কোচের চিন্তায় মূল ভাবনা চোট। আগে চোটের বিপক্ষে জিততে হবে এরপর জিততে হবে নকআউট পর্বের পরীক্ষায়।
এক ম্যাচে এমন দুই পরীক্ষায় অবশ্য একটু হলেও স্বস্তি জোগাচ্ছেন নেইমার। গতকাল অনুশীলনে দলের সঙ্গে ফুরফুরে মেজাজে দেখা গেছে কীংবদন্তী পেলের নিকটতম এই গোলদাতাকে। আর এই ছবিই এখন টক অব দ্যা ওয়ার্ল্ড। নেইমারবিহীন ব্রাজিল গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে ক্যামেরুনের বিপক্ষে ছিল অনেকটা ব্রাজিল দলের ছায়া। মূল ব্রাজিল দলকে সেই ম্যাচে খুঁজে পাননি ভক্তরা। এমন কি ফুটবল বোদ্ধারাও ছিলেন নির্বাক। তবে কোচ তিতের কৌশলকে সবাই জানিয়েছেন কুর্ণিশ। দলের সেরা একাদশ মাঠে না নামিয়ে বেঞ্চের একাদশ নামিয়ে দেয়ার সাহসই বা ক’জন করতে পারেন! এতে ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও যেমন কমেছে, তেমনই এড়ানো গেছে হলুদ কার্ডের ঝামেলা।
দক্ষিণ কোরিয়া তাদের গ্রুপ পর্বে দাপট দেখিয়েই উঠেছে পরের রাউন্ডে। শক্তিশালী প্রতিপক্ষ পর্তুগালের বিপক্ষে পূর্ণ তিন পয়েন্টই তুলে নিয়েছিল এশিয়ার দেশটি। তাই তাদের সামর্থ্য নিয়ে কোন শঙ্কা বা সন্দেহ নেই। শেষ ষোলর ম্যাচে উজ্জীবিত কোরিয়ার বিপক্ষে তাই ব্রাজিলের দিতে হবে বড় পরীক্ষাই। ইতিহাস জানাচ্ছে, এশিয়ার মাটিতে ২০০২ সালের বিশ্বকাপে দলটি উঠেছিল সেমিফাইনাল পর্যন্ত। সেখানে জার্মানির বিপক্ষে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল দলটির। সেবার বিশ্বসেরার মুকুট উঠেছিল ব্রাজিলের মাথায়। এবার আবারও সেই এশিয়ার মাটিতেই বিশ্বকাপ। সেরা অর্জণকে ছাপিয়ে যাওয়ার হাতছানি কোরিয়ার সামনে।
অন্যদিকে এশিয়ার মাটিতে ইতিপূর্বে একবারই আয়োজিত বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল। এবার আবারও সেই শিরোপার জন্যই সূদূর ব্রাজিল থেকে কাতারে এসেছেন নেইমার-রিচার্লিসনরা। এবার সেই মিশনের অর্ধেক রাস্তা এগিয়ে যাওয়ার পর বাকি রাস্তাও মসৃণতালে এগিয়ে যেতে কোটি কোটি সমর্থকদের কাছে প্রতিসূতিবদ্ধ দলটি। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের সবশেষ ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে যাত্রা থেমেছিল কোয়ার্টার ফাইনালে, বেলজিয়ামের বিপক্ষে। এর আগের বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে জার্মানির বিপক্ষে সেমিফাইনালে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল দলটির। এবার গত কয়েক বিশ্বকাপের তুলনায় সেরা দল নিয়ে তিতে বিশ্বকাপ জয়ের প্রত্যাশা করতেই পারেন। কিন্তু তাতে বিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে জয়ের পাশাপাশি চোটের বিপক্ষেও জয় তুলে আনতে হবে তাকে। সেই জোড়া জয় তুলে আনতে পারলেই ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাবেন তিতে। আসলে নিজেই হয়ে উঠবেন ইতিহাস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন