পর্তুগিজ ম্যানেজার ফার্নান্দো সান্তোস আছেন মহা ঝামেলায়। কাতার বিশ্বকাপের গ্রæপ পর্বের শেষ ম্যাচটি তার দল হেরেছে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে। তাই শেষ ষোলোর ম্যাচের আগে তার পূর্ণ মনোযোগ থাকার কথা ছিল প্রতিপক্ষ সুইজারল্যান্ডকে নিয়ে। কিন্তু সেটা হলো কোথায়? মিডিয়া থেকে গণমানুষ, সবাই ব্যস্ত রোনালদোর নতুন ক্লাবের ঠিকানা নিয়ে! ব্যাপারটা এখানেই শেষ না, দ.কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে বদলি হবার সময় প্রতিপক্ষের ফুটবলারের সঙ্গে কথা বিনিময় নিয়েও মানুষের কৌত‚হলের শেষ নেই। তবে বর্ষীয়ান কোচ সান্তোস বেশ আত্মবিশ্বাসী তার দল নিয়ে। অন্যদিকে নেশন্স লিগে পর্তুগাল, স্পেন ও চেক প্রজাতন্ত্রকে হারিয়ে সুইজারল্যান্ড বিশ্বকপে এসেছে। মুরাত ইয়াকিনের দল বিশ্বমঞ্চেও দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে টিকেট পেয়েছে সেকেন্ড রাউন্ডের। সেখানে আজ রাতে পর্তুগালের বিপক্ষে লুসাইল স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবার আগে প্রতিপক্ষকে রিতীমত হুমকি দিয়েছে সুইসরা। দলের পক্ষ থেকে সহকারী কোচ ভিন্সেন্ট কেভিন জানিয়েছে, আজ রাতে নাকি তারাই পরিষ্কার ফেবারিট। এখন দেখার অপেক্ষা এই কথার জবাব রোনালদো-ব্রুনো-বের্নার্দো জুটি কিভাবে দেন।
পর্তুগাল দলের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে না ঘোর প্রতিপক্ষও। তবে তারুণ্য ও মেধায় অসম্ভব এগিয়ে থাকা দলটির কোচ বেশ সেকেলে। সান্তোস এখনও বিশ্বাস করেন সব সময় দলে এমন একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার থাকা প্রয়োজন, যে খেলার গতি কমাবে। ঠিক এই কারণে তিনি ডিফেন্সিভ মিডে কার্ভালহোকে খেলান, যদিও তার স্কোয়াডে আছে ইংলিশ লিগ কাঁপানো মিডফিল্ডার জোয়াও পালহিনহা! সান্তোসের একঘেয়ে কৌশল এখানেই শেষ নয়। প্রতি আক্রমণের ভয়ে, তিনি এমনভাবে প্লেয়ারদের ভেতরের দিকে এসে খেলতে নির্দেশ দেন, যাতে নষ্ট হয় উইঙ্গারদের সহজাত অগ্রগামী হওয়ার প্রবণতা। বেনফিকাতে তুখড় পারফরম্যান্স করেও সান্তোসের কাছে উপেক্ষিত ছিলন রাফা সিলভা। ক্ষোভে এই ফরোয়ার্ড জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়ে ফেলেন। এই সকল ঝামেলার সঙ্গে মরার উপর খারার ঘা হয়ে আসে দুই প্রতিভাবান উইঙ্গার জোটা ও নেটোর চোট।
সেখান থেকে মুক্তি পেতে সান্তোস বিশ্বকাপের পূর্বে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে সাজালেন ৪-১-৩-২ ছক। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে সেই কৌশলে দাপটের সঙ্গে ৪-০ ব্যবধানে জয় অর্জন করে পর্তুগিজরা। ফিলিক্স ও ব্রুনো তাদের সহজাত খেলা দেখালো সে ছকে। তবে বিশ্বকাপের মূলমঞ্চে এসে সান্তোস সেই ৪-৩-৩ ছকে ফিরে গেলেন। যেখানে ফিলিক্স তার সহজাত প্রদর্শনী করতে ব্যর্থ। তবে এতো কিছুর পরও ঘানা ও উরুগুয়ের বিপক্ষে নেভিগেটরসরা জিতল। সেখানে ব্যক্তিগত ঝলক গুলোই পার্থক্য গড়েছে। সান্তোসের কৌশলের সবচেয়ে বড় সমস্যা এগিয়ে গিয়েও প্রায়শয় গোল হজম করা, এবং একবার পিছিয়ে গেলে খেলায় ফিরতে ব্যর্থ হওয়া। তবে দলটিতে, একেক দিন একজন করে জ্বলে ওঠে ম্যাচ জেতানোর যোগ্যতা আছে কমপক্ষে ৪-৫ জন ফুটবলারের।
পুর্বে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ২৫ বার মুখোমুখি হয়েছিল পর্তুগাল। যার মাঝে ৯ বার তারা জেতে। অন্যদিকে সুইসদের জয় ১১ ম্যাচে, আর ড্র হয়েছে ৫টি ম্যাচ। তবে সবশেষ ৪ মোকাবেলায় ৩টি জয়ই পর্তুগালের। আজকের ম্যাচের পূর্বে রোনালদো আছেন দারুণ এক মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে। যদি এক গোল করতে পারেন সুইসদের বিপক্ষে, তবে তিনি স্থান পাবেন দেশের হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোল করা (৯টি) ইউসোবিওর পাশে। একই সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে সুইস উইঙ্গার শাকিরী। জেপ জুয়েজির ৬ গোলের রেকর্ড স্পষ্ট করতে তার প্রয়োজন আরেকবার জালের সন্ধান পাওয়া।
পর্তুগাল দলে তেমন বড় পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা নেই। তবে দেশটির জনপ্রিয় দৈনিক বোলার একটি জরিপে দেখা গিয়েছে, সমর্থকদের ৭০ শতাংশ রোনালদকে প্রথম একাদশে চায় না! এই ব্যাপারে সান্তোস বলেন, ‘আমি ড্রেসিংরুমে গিয়ে দল গোষণা করি। আর আমি সংবাদ পড়ি না, তাই পাঠকের ধারণা নিয়ে কথা বলবো না। আমার হাতে খুব বেশি সময় নেই দলকে প্রস্তুত করার। এই ব্যাপারগুলোতে তাই মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ নেই। সুইজারল্যান্ড দলের আত্মবিশ্বাস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তাদের মতামতকে সম্মানের সাথে দেখছি, কারণ তারা ভালো দল।’
সুইস ম্যানেজার মুরাত ইয়াকিন জানালেন তারা ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছেন যে তারা পর্তুগালকে হারাতে পারে, ‘আগামীকাল একতা দারুন দলের বিপক্ষে খেলতে যাচ্ছি আমরা। তবে পরিসংখ্যান বড় ব্যাপার নয়। আমরা পর্তুগালকে হারাতে প্রস্তুত। দলের যেসব ফুটবলাররা চোটে ছিল তারাও ফিট হয়ে উঠেছে ম্যাচের জন্য। আমরা সমর্থকদের জন্য আরেকটি ম্যাচ জিততে চাই।’
সুইজারল্যান্ডের জন্য বড় বাধা একটি পরিসংখ্যান-এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের শেষ আটে উঠতে পারেনি দলটি। অন্যদিকে সুইসদের হুমকির জবাব কিভাবে দিবে পর্তুগাল সেটা দেখার অপেক্ষায় দলটির সমর্থকরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন