শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

সাম্বার দোলে কোয়ার্টারে ব্রাজিল

নাভিদ হাসান | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

সাম্বা বা জোগো বোনিতো মূলত কি? এটা কি কেবল ব্রাজিলিয়ানদের বড় ব্যবধানে জেতাকে বোঝায়? মোটেই না। ফুটবলীয় এই শব্দদ্বয়কে বিশ্লেষণ করতে গেলে দুইজন মনিষীর দ্বারস্ত হতে হবে। ওই যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ছোটগল্পের সজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছিলেন না- ‘শেষ হইয়াও হইলা না শেষ’। আর আইনস্টাইন আপেক্ষিকতার নীতি সজহভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য বলেছেন- ‘প্রিয় মানুষের সঙ্গে ১ ঘন্টা থাকার পরও মনে হইয়ে, ঈশ, শেষ হয়ে গেল’! সাম্বা ঠিক তাই। সেলেসাওরা মাঠে ৯০ মিনিট খেলার পর আপনার ইচ্ছে জাগ্রত হবে আরও বহু সময় ধরে সে শিল্প উপভোগ করার। পরশুরাতে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপের শেষ ষোলর ম্যাচে, স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ ঠিক সেই ধরণের এক শিল্পেরই প্রদর্শণ করলো ব্রাজিল।

তিতে বাহিনীর লড়াইটা মূলত শেষ হয়ে গেল, ম্যাচের বয়স দুই অংকের ঘরে যাওয়ার কিছু মুহূর্ত পরেই। তাবে ম্যাচটা উপভোগ্য রইল গোটা ৯০ মিনিটই। ওই যে সাম্বা! এর বৈচিত্র ব্রাজিলিয়ানরা মেলে ধরে কেবল তখনই, যখন তারা খেলাটা উপভোগ করে। পরশুরাতে তারা ফুটবলটা উপভোগ করলো। বলটা যখন ব্রাজিলিয়ানদের পায়ে চুমু খাচ্ছিল, দেখে মনে হচ্ছিল স্বর্গ থেকে আসা কোন গোলাপের স্পর্ষ পেল স্বয়ং ফুটবল। সেলেসাওদের কাছে এই খেলাটা যে মোর দ্যান অ্যা গেম, জীবনের অবিচ্ছেদ্য এক অংশ। তাদের কাছেতো বলটাও বস মানবে বাধ্য শিশুটির মত। নির্ধারিত সময় শেষে ম্যাচটা ৪-১ ব্যবধানে জিতলো। তবে তাতে কিন্তু মাহাত্য বুঝা যাবে না। এই ম্যাচকে গোল দিয়ে বিবেচনা করলে চরম বোকামি হবে।

দ. কোরিয়া নিঃসন্দেহে এশিয়ার সেরা দল। তবে কোচ পাওলো বেন্তোর অধীনে অসম্ভব নেতিবাচক ফুটবল খেলে আসছে দলটি। এই পর্তুগীজ কোচের মাত্রাতিরিক্ত ডিফেন্সিভ ও মান্ধাত আমলের ট্যাকটিস যে আর বর্তমান ফুটবলে চলে না। তবে সফল ফুটবলীয় ঐতিহ্যের কারণে কোরিয়াকে নিয়ে এশিয়ার সব মানুষেরই আশার পারদটা আকাশচুম্বী। তবে মাঝে মধ্যে তা সীমা ছাড়িয়ে যায়, এবং সেটা ঠিক ফুটবলীয় কারণে নয়! অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ার মতই ব্যাপার। ঠিক তিন দিন আগের কথা। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার এক রেস্তোতায় বড় পর্যায় দেখানো হচ্ছিল পর্তুগাল-দ. কোরিয়া ম্যাচ। স্বাভাবিক ভাবেই রোনালদোর কারণে পর্তুগালের সমর্থক বেশি থাকার কথা। তবে চিত্র পুরাই উলটো, এবং সেটা বিটিএস নামের একটা ব্যান্ড দলের কারণে। এই চিত্র কেবল বাংলাদেশের না, গোটা বিশ্বের টিনএজাররাই এখন দ.কোরিয়ার সবকিছুতেই মহো খুঁজে পায়। তবে পরশুরাতে সেই ফুটবল না বোঝা বিটিএস আর্মিদের জন্য ছিল বাক হারানোর রাত। ভিনিসিয়ুস, রিচার্লিসন, নেইমার, কাসেমিরোরা যেভাবে নব্বই মিনিট মাঠ শাষন করলো, তাতে হতভম্ব খোদ সন ইউং মিং!

ম্যাচের ৭ মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত আক্রমণে গোল করলেন ভিনিসিয়ুস। ডান দিক থেকে অসাধারণ পাস দিয়েছিলেন রাফিনহা। দক্ষিণ কোরিয়ার পায়ের জঙ্গল পেরিয়ে বল গিয়ে পৌঁছায় বাঁ দিকে দাঁড়িয়ে থাকা ভিনির কাছে। এই রিয়াল উইঙ্গার নিখুঁত শটে বল জালে জড়ান সামনের দেয়ালের মাঝ দিয়েই। গোল করেই গোটা দলকে সাইডলাইনের ধারে গিয়ে সাম্বার দোল দেখালেন সকলে মিলে। তিন মিনিট পরেই পেনাল্টি পায় ব্রাজিল। রিচার্লিসনকে বক্সের মধ্যে ফাউলের স্বীকার হওয়ায় রেফারি ক্লেম তুরপ সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির নির্দেশ দেন। কিপারকে ধোকা দিয়ে একদম ঠান্ডা মাথায় এবারের বিশ্বকাপের প্রথম গোল করলেন নেইমার। ম্যাচের ২৯তম মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত স্কিল দেখালেন রিচার্লিসন। মাথায় বল নিয়ে জাগলিং করে সঙ্গে সঙ্গে পাস দেন মার্কুইনোসকে। তিনি পাস দেন থিয়াগো সিলভাকে। থিয়াগোর থেকে আবারও রিচা। বাঁ পায়ের প্লেসিং শটে বিশ্বকাপের তৃতীয় গোল পেয়ে গেলেন টটেনহ্যাম ফরোয়ার্ড।

সাত মিনিট পরে চতুর্থ গোল ব্রাজিলের। সেই সময় ব্রাজিলের ফুটবল দেখে মনে হচ্ছিল- ক্যানভাসের উপর একসাথে ১১ শিল্পির তুলি দিয়ে আঁচড় কাটছেন। রিচার্লিসন পাস দেন নেইমারকে। সেখান থেকে ভিনিসিয়ুস। রিয়াল উইঙ্গার অসাধারণ এই চিপ করলেন খালে জায়গায়। তবে পেছন থেকে দৌড়ে চলতি বলে শটে গোল পাকেতার। বিরতির পরও আক্রমণাত্মক মনোভাবের বদল হয়নি ব্রাজিলের। তবে গোল আর পায় নি, এই যা! তবে ম্যাচের বয়স খন ৭৫ মিনিট, তখন এক গোল শোধ দেয় কোরিয়া। ফ্রিকিক থেকে বল ক্লিয়ার করেছিলেন ব্রাজিলের ডিফেন্ডার। সেই বল বুকের সহায়তায় আয়ত্তে নিয়ে বাঁ পায়ের জোরালো শটে গোল পাইক সিউং হো। প্রথমার্ধে কোরিয়াকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও দ্বিতীয়ার্ধে বরং তাঁদের খেলা অনেক বেশি ছন্দবদ্ধ।

ম্যাচ শেষে অসুস্থ পেলের নাম লেখা ব্যানার নিয়ে দাঁড়ালেন সেলেসাওরা, শুভকামনা জানালেন ফুটবলের রাজাকে। ব্রাজিলের এমন অনবদ্য ফুটবল দেখে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে জীবনের সঙ্গে লড়াই করা পেলে কি আরও কয়েকটা দিন বাঁচার রসদ পাবে না? ভিনি-রিচাদের খেলা দেখে ফুটবলের কালো মানিক অন্তত ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত অবিনশ্বর দেহটাকে নশ্বর রাখতে চাইবেন। লুসাইল স্টেডিয়ামে সেদিনই যে চলমান আসরের ফাইনাল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন