ঠিক ৮ বছর আগে ব্রাজিলে যা ঘটেছিল, একটু এদিক-সেদিক করে গতপরশু রাতে তারই যেন পুনরাবৃত্তি ঘটল কাতারে। বিশ্বকাপের শেষ আটের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস। লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে এদিনও কমলাদের ডাগআউটে লুই ফন গাল। তবে সবকিছু মøান করে ম্যাচের সব আলো কেড়ে নিলেন আলবিসেলেস্তা গোলরক্ষক। আট বছর আগের রোমেরো একজন মিডফিল্ডার আর একজন ডিফেন্ডারের পেনাল্টি ঠেকিয়ে আর্জেন্টাইনদের বিশাল স্বস্তি দিয়েছিলেন। এবারের এমিলিয়ানো মার্টিনেজ ফিরালেন ভার্জিল ফন ডাইক আর স্টিভেন বের্গুইসের শট। মজার ব্যাপার কি জানেন? এমিলিনোর গোটা নামেও আছে রোমেরো! এই এস্টন ভিলার গোল রক্ষকের অতিমানবীয় পারফরম্যান্সে, নেদারল্যান্ডসকে ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়ে সেমিতে ওঠার আনন্দে আত্মহারা হতে পেরেছে মেসিরা। যদিও খেলা ছাপিয়ে আরেকজন ব্যক্তি এই ম্যাচের খলনায়ক! তিনি স্প্যানিশ রেফারি অ্যান্তোনিও মাথিও লাহোজ। গোটা ম্যাচে পনের বার হলুদ ও একবার লাল কার্ড দেখান এই স্প্যানিশ বিতর্কিত রেফারি।
পেন্ডুলামের দোলায় দুলতে থাকা ম্যাচে আর্জেন্টিনা এগিয়ে ছিল ২ গোলে। দেখে মনে হচ্ছিল, বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে গিয়েছেন মেসিরা। কিন্তু শেষদিকে ২ গোল শোধ করল নেদারল্যান্ডস। খেলা গড়াল অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও হল না গোল। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে হলো ম্যাচের ফয়সালা।
খেলার শুরু থেকে দুই দলই রক্ষণ মজবুত রেখে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করছিল। ছোট ছোট পাস খেলছিল। নেদারল্যান্ডস আগের ম্যাচের মতো উইংয়ের ব্যবহার করে আক্রমণে যেতে চাচ্ছিল, কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হয়। প্রথম ২০ মিনিটে কয়েকবার আর্জেন্টিনার বক্সে ঢুকে পড়েন মেম্ফিস ডেপাই, কোডি গাকপোরা। কিন্তু খুব একটা সমস্যায় পড়তে হয়নি মার্তিনেসকে। অন্য দিকে থ্রু বলে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করছিল আর্জেন্টিনা। শেষ পর্যন্ত মেসির জাদুতে ৩৪ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ডি-বক্সের বাইরে থেকে মার্কিংয়ে থাকা অবস্থায় বল বাড়ান মোলিনার দিকে। বল ধরে আগুয়ান গোলরক্ষকের ডান দিক থেকে বল জালে জড়িয়ে দেন মোলিনা।
বিরতির পর অনেক বেশি আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করে ডাচরা। কিন্তু আর্জেন্টিনার বক্সে সে রকম বিপদ তৈরি করতে পারেননি ডেপাঈ ও বার্গউইন। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে খেলায় ফেরে আর্জেন্টিনা। মেসির পায়ে বেশ কয়েক বার বিপদ তৈরি হয় নেদারল্যান্ডসের বক্সে। তেমনি এক পাস থেকে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি ম্যাক অ্যালিস্টার। ম্যাচের ৬৩ মিনিটের মাথায় ফ্রিকিক পায় আর্জেন্টিনা। মেসির শট একটুর জন্য বাইরে বেরিয়ে যায়। ঠিক তার ৮ মিনিট পর বক্সের মধ্যে আকুনাকে ফাউল করেন ডেঞ্জিল ডামফ্রিস। বক্সের ভেতর এই ধরনের ফাউল থেকে পেনাল্টির দিধান্ত আসে ৫০-৫০। তবে লাহোজ পেনাল্টি দেন আর্জেন্টিনার পক্ষে। পোল্যান্ডের বিপক্ষে মিস করলেও পরশু রাতে গোল করতে ভুল করেননি মেসি। গোলরক্ষকের বাঁ দিক দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি। খেলায় ২-০ এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।
গোল শোধ করার জন্য আক্রমণে আরও লোক বাড়ান ফান হাল। ৮৩ মিনিটের মাথায় এক গোল শোধ করেন ভাউট ভেগহর্স্ট। ডানপ্রান্ত ধরে ক্রসে দুরন্ত হেড করেন তিনি। বল মাটিতে পড়ে জালে জড়িয়ে যায়। লাহোজের মাত্রাতিরিক্ত ফাউলের বাঁশি আর কার্ড প্রদর্শন খেলোয়াড়দের মনোসংযোগে বিচ্যুতি ঘটাচ্ছিল। সেই কারণেই মেঝাজ ও স্নায়ুর কাছে পরাজিত হয় তারা। খেলার মধ্যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে যাচ্ছিল বারবারই। হাতাহাতিতে জড়াচ্ছিলেন দুইপক্ষের ফুটবলাররা। ফলে সময় নষ্ট হচ্ছিল। অতিরিক্ত সময় দেয়া হয় ১০ মিনিট। এ সময়ের মধ্যে বারবার আর্জেন্টিনার বক্সে আক্রমণ করে ডাচরা। শেষ মিনিটে বুদ্ধিদীপ্ত ফ্রিকিক থেকে গোল করে সমতা ফেরান সেই ভেগহর্স্ট। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ে গোল করার বেশি সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। বক্সের মধ্যে থেকে লাউতারো মার্তিনেসের শট ভার্জিল ভ্যান ডাইকের গায়ে লেগে বেরিয়ে যায়। পরের মুহূর্তেই এনজো ফের্নান্দেসের শট একটু হলেই গোলের মধ্যে চলে যেত। শেষ মুহূর্তে মার্টিনেজের আরও একটি শট ভালো বাঁচান নেদারল্যান্ডসের গোলরক্ষক আন্দ্রিজ নোপার্ট। ফের্নান্দেসের শট পোস্টে লেগে ফেরে। কিছুতেই গোল করতে পারেনি আর্জেন্টিনা। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারে দলের রক্ষাকর্তা হয়ে দাঁড়ালেন মার্তিনেস। নেদারল্যান্ডসের প্রথম দুটি শট বাঁচিয়ে দেন তিনি। আর্জেন্টিনার হয়ে চার নম্বর পেনাল্টি নিতে যান ফের্নান্দেস। বাইরে মারেন তিনি। ফলে আবার হৃদ্স্পন্দন বেড়ে যায় আর্জেন্টিনার সমর্থকদের। কিন্তু শেষ পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে জিতিয়ে দেন লাউতারো মার্তিনেস। সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন