পৃথিবীর পুরনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়/প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়! আসলেই তো তাই। ইতিহাসের সেরা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকেও যে বিদায় নিতে হলো অশ্রুসজল চোখে, পরাজিত সৈনিকের মতো মুখ লুকিয়ে। দীর্ঘ ১৮ বছর যে দলকে কেবল সবটা উজার করে দিয়েছিলেন, সেই দল বা ম্যানেজম্যান্ট তাকে দিতে পারলো না কিছুই। রোনালদো নামক সবচেয়ে লড়াকু নক্ষত্রের নামটা তাই ছিটকে গেল বিশ্বআসর থেকে। শনিবার আল থুমামা স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালকে ১-০ গোলে হারায় মরক্কো। পর্তুগালকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো রূপকথার সেমিফাইনালে ওঠে এসেছে আফ্রিকান দেশটি। সেই মহাদেশ থেকে মরোক্কোই সে প্রথম বিশ্ব আসরের শেষ চারে।
কাতার বিশ্বকাপে চমক দেখানো মরক্কোর শেষ ষোলোতে স্পেনকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে। শেষ আটে প্রতিপক্ষ পর্তুগাল ছিল সমীহ জাগানো। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে পর্তুগিজ শিবিরকে বিদায় নিতে হলো দ্রুতই। তাছাড়া পর্তুগিজ গোলরক্ষক দিয়াগো কস্তার বালখিল্য ভুলে নেসারির দুরন্ত এক হেডে সেমিফাইনালে পৌছে যায় মরক্কো। রোনালদোকে বেঞ্চে রেখে মাঠে নামে পর্তুগাল। ৪ মিনিটে পর্তুগালের প্রথম আক্রমণ। ব্রুনো ফার্নান্দেসের ফ্রি কিক থেকে দুরন্ত হেড জোয়াও ফেলিক্সের। তবে তা রুখে দেন মরক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো। ১২ মিনিটে ব্রুনোর আরও একটি ফ্রি কিকে গোলের সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছিল। তবে রাফায়েলের শট আটকে যায় মরক্কোর ডিফেন্ডারের গায়ে।
ধীরে ধীরে খেলায় ফেরার চেষ্টা করে মরক্কো। প্রান্ত ধরে কয়েকটি আক্রমণ করেন হাকিমি, জিয়েচরা। কিন্তু খুব একটা সমস্যায় পড়েননি পর্তুগালের গোলরক্ষক কস্তা। ম্যাচের ৪০ মিনিটে আবার গোলের সুযোগ পায় পর্তুগাল। বাঁ দিক থেকে ক্রসে ফেলিক্সের শট চলে যায় পোস্টের উপর দিয়ে। লক্ষ্যে থাকলে করার কিছুই ছিল না মরক্কো গোলরক্ষকের। ধারার বিপরীতে দারুণ গোল আদায় করে মরক্কো ৪২ মিনিটে। নিজেদের মধ্যে বেশ কয়েকটি পাস খেলে বাঁ প্রান্ত ধরে আক্রমণে ওঠে মরক্কো। বক্সে বল ভাসিয়ে দেন এল-ইদ্রিসি। হিসেবে গোলমাল পাকিয়ে গোলরক্ষক কোস্তা বলের নাগাল পাওয়ার আগে অনেকটা লাফিয়ে উঠে হেডে গোল করেন এন-নেসিরি।
বিরতির পর ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ ছিল মরক্কোর। ম্যাচের ৪৯ মিনিটে হাকিম জিয়েচের ফ্রিকিক আর একটু হলে জালে জড়িয়ে যেত। কোনও রকমে তা রক্ষা করেন কোস্তা। ৫১ মিনিট রুবেন নেভেসের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন রোনালদো। এরপর যেন একটু বেশি তেতে ওঠে পর্তুগাল। কিন্তু মরক্কোর জমাট বাধা রক্ষণ ভাঙতে পারছিলেন না তারা। কখনো ফেলিক্স, কখনো ব্রুনো ফার্নান্দেসের শট কাপিয়ে যায় মরক্কোর পোস্ট। বাধার প্রাচীর হয়ে অনেকগুলো সেভ করেন মরক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন।
ম্যাচের ৮২ মিনিটে একটুর জন্য গোল করতে পারেন নাই ফেলিক্স। রোনালদোর সঙ্গে দেওয়া নেওয়া করে বক্সে ঢোকেন তিনি। বাঁ পায়ের বাঁক খাওয়ানো বল গোলে ঢুকছিল। শেষ মুহুর্তে তা রক্ষা করেন বোনো। ৯২ মিনিটে দশজনের দলে পরিণত হয় মরক্কো। ফেলিক্সকে ফাউল করে দ্বিতীয়বারের মতো হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন চেদিরা। এই সুযোগটাও নিতে পারেনি পর্তুগাল। মরক্কোর গোলপোস্ট অচেনাই হয়ে থাকে পর্তুগালের।
মরক্কোর এমন সাফল্যে একজনের কথা উল্লেখ্য করতেই হয়- কোচ ওয়ালিদ রেগরাগি। বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র তিন মাস আগে দায়িত্ব পান তিনি। আগের কোচের সঙ্গে দ্বন্দ্বে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলে দেওয়া জিয়াশকে ফিরিয়ে সমালোচনার মুখেও পড়েন তিনি। ৪৭ বছর বয়সী কোচের হাত ধরেই একের পর এক ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচনা করে চলেছে মরক্কো। রেগরাগির কোচিংয়ে এখনও পর্যন্ত আট ম্যাচ খেলে হারেনি দলটি। এই আট ম্যাচে তারা গোল হজম করেছে স্রেফ একটি, সেটিও বিশ্বকাপে কানাডার বিপক্ষে আত্মঘাতী। এটিই বলে দিচ্ছে, কতটা দুর্বার গতিতে ছুটছে তারা! অবিশ্বাস্য এই পথচলায় ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ের পর বেলজিয়াম ও কাডানাকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নকআউটে জায়গা করে নেয় উত্তর আফ্রিকার দেশটি। এরপর শেষ চারে স্পেনকে টাইব্রেকারে হারিয়ে দেয় ৩-০ গোলে। এবার ইতিহাসগড়া এই জয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন