শিরোপা ঘরে আসছে, এমন স্বপ্নেই বিভোর ছিল গোটা ইংল্যান্ড। দলটি গ্যারেথ সাউথগেটের অধীনে দারুণ ছন্দে ছিল কাতার বিশ্বকাপে। পরশু রাতে ফ্রান্সের বিপক্ষে এক গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় পেনাল্টি পেল থ্রি লায়ন্সরা। ইংলিশ কাপ্তান হ্যারি কেইনের শট চলে গেল গোলবারের উপর দিয়ে। এইক সঙ্গে হারিয়ে গেল ইংল্যান্ডর দ্বিতীয়বার শিরোপা ঘরে নেয়ার স্বপ্ন। আল বায়ত স্টেডিয়ামে পরশু রাতে কোয়ার্টার ফাইনালের শেষ ম্যাচে কেইনদের ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে ফ্রান্স জিয়িয়ে রাখল শিরোপা ঘরে ধরে রাখার আয়োজন। ফরাসিদের হয়ে গোল দুটি করেছেন অরেলিয়ে চুয়ামেনি এবং অলিভিয়ের জিরো। ইংল্যান্ডের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন কাপ্তান কেইন, সেটিও পেনাল্টি থেকেই। সেমিফাইনালে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ আসরের সবচেয়ে বড় চমক মরক্কো। আগামী বুধবার শেষ চারের ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।
ম্যাচ শুরুর আগে আলোচনা ছিল কিলিয়ান এমবাপে ও কেইনকে নিয়ে। এমবাপেকে বোতলবন্দি করে রাখার কাজটি প্রথমদিকে দারুণভাবে করেছিলেন কাইল ওয়াকারকে। যে ফরোয়ার্ডকে পরবর্তী রোনালদো-মেসির হিসেবে গণ্য করা হয়, এমবাপে নিজে গোল করতে পারলেন না ঠিকই। কিন্তু প্রথম গোলেই অবদান রাখলেন পরোক্ষভাবে। এমনকি গোটা ম্যাচে এই পিএসজি ফরোয়ার্ড একাধিক বার তার মার্কারদের বোকা বানালেন। গোল না করেও নায়ক হয়ে থাকলেন তিনিই। অন্যদিকে কেইনও প্রথম পেনাল্টি থেকে পেয়েছিলেন জালের ঠিকানা, তবে পরের বার গোল মিস করে তিনি হয়ে গেলেন খলনায়ক।
চলতি বিশ্বকাপে যে দুটি দল মন ভোলানো খেলা খেলে জমিয়ে দিয়েছে, তারাই মুখোমুখি হয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। প্রথম থেকে আক্রমণের রাশ ছিল ফ্রান্সের হাতেই। প্রথম আক্রমণও করে তারাই। ডানদিকে বল পেয়েছিলেন ওসমানে দেম্বেলে। তিনি পাস দেন আন্তোনিও গ্রীজম্যানকে। সেখান থেকে জিরোর হেড ঠেকিয়ে দেন ইংল্যান্ডের গোলকিপার জর্ডান পিকফোর্ড। তবে প্রথম গোলের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি দিদিয়ের দেশমের দলকে। ম্যাচের ১৭ মিনিটে দূরপাল্লার শটে চোখ ধাঁধানো গোল করে চমকে দেন চুয়ামেনি। দুর্দান্ত প্রতি আক্রমণের ফল পায় ফ্রান্স। ডেক্লান রাইসকে টপকে বল নিয়ে এগিয়ে যান কিলিয়ান এমবাপে। সেখান থেকে গ্রীজম্যান হয়ে বল যায় চুয়ামেনির পায়ে। বক্সের বেশ খানিকটা বাইরে থেকে নিচু শটে গোল করেন রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলার। কিছুক্ষণ পরেই সুযোগ পেয়েছিল ইংল্যান্ড। জর্ডান হেন্ডারসন বল ভাসিয়েছিলেন বক্সে। হেড করতে পারেননি জুড বেলিংহ্যাম।
প্রথমে কিছুটা চাপে থাকলেও, ধীরে ধীরে ইংল্যান্ড আক্রমণ বাড়াতে থাকে। তবে প্রথমার্ধে সমতা ফেরাতে পারেনি। বিরতির পর পরই একটা ভালো সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। ফিল ফোডেনের কর্নার ক্লিয়ার করতে পারেনি ফ্রান্স। হেন্ডারসনের থেকে পাস পেয়ে বেলিংহ্যামের দিকে ক্রস ভাসান লুক শো। ডর্টমুন্ড বিস্ময় বালকের ভলি আঙ্গুল ছুঁইয়ে বার করে দেন ফ্রান্সের গোলকিপার হুগো লরিস। তার পরেই পেনাল্টি পায় ইংল্যান্ড। ডানদিক থেকে ইনসাইড কাট করে ফ্রান্সের বক্সে ঢুকতে গিয়েছিলেন সাকা। তাকে অবৈধভাবে বাধা দেন চুয়ামেনি। সমতা ফেরাতে ভুল করেননি কেইন।
দুই দলই জয়সূচক গোলের লক্ষ্যে আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে। তখন থ্রি লায়ন্সদের দুটি দারুণ আক্রমণ বাঁচিয়ে দেন লরিস। অন্য দিকে, ফ্রান্সের হয়ে সুযোগ পেয়েছিলেন রাবিও, তবে গোলের মুখ দেখেনি সেই প্রচেষ্টা। ম্যাচের ৭৭ মিনিটের মাথায় দেম্বেলির থেকে পাস পেয়ে সপাটে শট মেরেছিলেন জিরো। এই যাত্রায়ও পিকফোর্ড ত্রাণকর্তা হয়ে বাঁচিয়ে দেন ইংলিশদের। পরের মিনিটেই বাঁ দিক থেকে গ্রীজম্যানের ক্রসে হেডে গোল পেয়ে যান জিরো। নাটকের তখনও বাকি ছিল। চার মিনিট পরেই আক্রমণে উঠেছিল ইংল্যান্ড। ম্যাসন মাউন্টকে বক্সের মধ্যে পেছন থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন থিয়ো হের্নান্দেস। ভিএআরের সাহায্য নিয়ে পেনাল্টি দেন রেফারি। কিন্তু কেইনের মিসে ভেস্তে যায় ইংলিশদের ৫৬ বছর পরে শিরোপা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন। পরের দিকে আক্রমণ করলেও গোল করতে পারেনি তারা। একদম শেষ মুহূর্তে বক্সের বাইরে একটি ফ্রিকিক পেয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু মার্কাস র্যাশফোর্ডের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ফলে ফরাসিদের সামনে বিগত ৬০ বছরের মধ্যে টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের হাতছানি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন