কি নাটকীয় প্রত্যাবর্তন!সউদী আরবের বিপক্ষে হেরে বিশ্বকাপ শুরু করা আর্জেন্টিনার একসময় পরের পর্বে খেলা নিয়েই সন্দেহ। তারাই এখন ম্যাচের পর ম্যাচ দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে উঠে গেছে বিশ্বকাপের ফাইনাল। ১৮ তারিখ আর একবার দলগতভাবে নিজেদের সেরাটা বের করে দিতে পারলেই ৩৬ বছরের ট্রফি খরা ঘুচাবে আলবিসেলেস্তেরা।
আজ সেমিফাইলে ব্রাজিলকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল লিওনেল স্কেলোনির দল।তবে মদ্রিচ-পেরিসিচ মাঠে কোনই সুযোগ দেননি মেসিরা। পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলে ৩-০ ব্যবধানের বড় জয়ে ফাইনালে উঠে গেল দুইবারে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। আর্জেন্টিনার হয়ে জোড়া গোল করেছেন জুলিয়ান আলভারেজ। অন্য গোলটি এসেছে লিওনেল মেসির পা থেকে।
কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এ ম্যাচের শুরুটা দুই দলই করেছে কিছুটা খাপছাড়া ভাবে।বাড়তি সর্তক দুই দলই দ্রুত আক্রমণে উঠছিল সময় নিয়ে।ম্যাচের প্রথম উল্লেখযোগ্য আক্রমণ আসে ২৫ তম মিনিটের মাথায়।বক্সের সামান্য বাইরে থেকে এনজো ফার্নান্দেজের নেওয়া জোরালো শট ঝাপিয়ে পড়ে ঠেকান ক্রোয়েশিয়ার গত ম্যাচের নায়ক গোলরক্ষক লিভাকোভিচ।
তবে একটু পরেই ভুল করে বসেন এই ক্রোয়েট গোলরক্ষক। বল নিয়ে ছুটে আসা আলভারেজকে ঠেকাতে গিয়ে করে বসেন ফাউল।পেনাল্টির বাশি বাজান রেফারি।স্পটকিক থেকে নিজের স্বভাবজাত ভঙ্গিতে লিওনেল মেসি লক্ষ্যভেদ করে দলকে লিড এনে দেন।এই গোলের ফলে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ডটি নিজের নামে করলেন দলের এই তারকা ফরোয়ার্ড। সবমিলিয়ে বিশ্বকাপে এখন মেসির গোল সংখ্যা ১১।এতদিন পর্যন্ত আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলের মালিক গ্যাব্রিয়েল বাতিস্ততার(১০)।এবারের বিশ্বকাপে তার গোল হলো ৫টি, গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে আগে থেকে শীর্ষে থাকা কিলিয়ান এমবাপের পাশে বসলেন তিনি।আন্তর্জাতিক ফুটবলে মেসির মোট গোল হলো ৯৬টি।
দলকে পেনাল্টি এনে দেওয়া আলভারেজ কিছুক্ষণ পরে দুর্দান্ত এক গোলে নিজেই স্কোরশিটের নাম লেখান।৩৯ মিনিটে নিজ অর্ধ থেকে বল নিয়ে দ্রত পাল্টা আক্রমণে যান এই ফরোয়ার্ড। ক্ষিপ্র গতিতে সবাইকে পেছনে ফেলে তিনি বল নিয়ে ঢুকে যান ক্রোয়েশিয়ার ডি বক্সে।সেখানে ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডার সোসার দুর্বল ক্লিয়ারেন্সের সুযোগ নিয়ে লিভাকোভিচকে ফাঁকি দিয়ে জালে বল পাঠান আলভারেজ।
দুই গোল হজম করার আগ পর্যন্ত বল পজিশন ও মাঝমাঠ দখলে আধিপত্য দেখালেও উল্লেখযোগ্য কোন আক্রমণ তৈরি করতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া।
বিরতির পর ম্যাচে ফিরতে মরিয়া ক্রোয়েটরা খেলার গতি বাড়ায়।তবে গোলের দেখা পাচ্ছিল না।উল্টো আক্রমণাত্মক ফুটবলে আর্জেন্টিনা দ্রুতই ব্যবধান ৩-০ করে ফেলে।৬৯ তম মিনিটে জোড়া গোল করে আলভারেজ দলের জয় এক প্রকার নিশ্চিত করে ফেলেন।যদিও সেই গোলের পুরোপুরি কৃতিত্ব লিওনেল মেসিকেই দিতে হবে।
মাঝমাঠে ডান দিক থেকে বল পায়ে অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় বক্সে ডুকে পড়েন মেসি, সপুরোটা তাকে ঠেকানার চেস্টা করে গেলেন ইয়োস্কো গাভারদিওল, অনেকের মতে যে আসরের সেরা ডিফেন্ডার।তবে মেসিকে আটকাতে পারেননি তিনি।বাইলাইন থেকে গোলমুখের সামনে অপেক্ষায় থাকা আলভারেজকে বাড়িয়ে দিলেন পাস। আলতো ছোঁয়ায় সেটি জালে জড়াতে ভুল করেননি এই তরুণ ফরোয়ার্ড।
তিন গোল হজম করে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে যায় ক্রোয়েশিয়া। বাকি সময়টাতে চেষ্টা করেও তারা কোন গোল শোধ করতে পারেনি।বিশ্বকাপে নিজেদের আগের চার সেমিফাইনালের কোনোটিতে হারেনি আর্জেন্টিনা। ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে সেই ধারা অব্যহত রাখল মেসিরা।
১৮ তারিখ ফাইনাল খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা।যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হবে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স অথবা আসরের চমক,জায়ান্ট কিলার হয়ে ওঠা মরক্কো।
মন্তব্য করুন