রান্দাল কোলো মুয়ানি মাঠে মাত্রই নেমেছিলেন ওসমান দেম্বেলির বদলি হিসেবে। মাঠে নামার ৪০ সেকেন্ডের মাঝেই তিনি প্রথম স্পর্ষ করলেন বলে এবং তাতেই গোল। তবে অবশ্যি বলা উচিত ঠিক তার আগে কিলিয়ান এমবাপে কি করলেন! মরোক্কোর চার ডিফেন্ডারকে খাবি দিয়ে অসাধারণ নৈপুণ্যে বলটি পৌঁছে দিলেন রান্দাল পর্যন্ত। আর সেখানেই মূলত শেষের শুরু মরোক্কোর। গতরাতে আল বাইত স্টেডিয়ামে সেমি-ফাইনালে দুই অর্ধের দুই গোলে ২-০ ব্যবধানে জিতেছে শিরোপাধারীরা।
গতরাতের ম্যাচের আগে গোটা টুর্নামেন্টে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের কাছ থেকে একটা গোলও হজম করেনি মরক্কো। যে একটা হজম করেছে, সেটাও আত্মঘাতী গোল। অ্যালটাস সিংহদের সেই গর্ব গতরাতে চূর্ণ হয়ে গেল বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সামনে এসে। টানা দুবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ এখন ফরাসিদের সামনে। যদি তা করতে পারে তাহলে দীর্ঘ ৬০ বছর পর আবারো ব্রাজিলের পর কোন দেশ এই মাইলফলকে ভাগ বসাবে। সেই পথে ফ্রান্সের বাধা আর্জেন্টিনা। আগামী বুধবার লুসাইলে অনুষ্ঠিত হবে ফাইনাল।
দেখার অপেক্ষা ছিল এই ম্যাচে কে বলের অধিকার কম রেখে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করে। কারণ আসরে এই দুই দলই বলের পজিশন কম রেখেও সেমি পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল কৌশলগত কারণে। ম্যাচের ৫ মিনিটেই লেফটব্যাক থিও হার্নান্দেজের গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ডিফেন্ডার জামাল আল ইয়ামিকের এক ভুলের সুযোগ নিয়ে বল পেয়ে যান অ্যান্তোনিও গ্রিজমান। সেখান থেকে এমবাপে হয়ে বল চলে যায় ফাঁকা দাঁড়িয়ে থাকা থিওর কাছে। দর্শনীয় এক বাঁ পায়ের বাইসাইকেল শটে দলকে এগিয়ে দেন এসি মিলানের এই লেফটব্যাক।
ম্যাচের ১৭ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ এসে গিয়েছিল ফ্রান্সের সামনে। মাঝমাঠ থেকে বল ভেসে এসেছিল অলিভিয়ের জিরোর উদ্দেশে। তিনি কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বাঁ পায়ে জোরালো শট মারেন। পোস্টে লেগে তা মাঠের বাইরে চলে যায়। তবে গোলে থাকলে ইয়াসিন বুনুর কিছু করার ছিল না। ম্যাচের ২০ মিনিটে মরক্কোর অধিনায়ক রোমান সাইস চোটের কারণে উঠে গেলে মরক্কোর শক্তিক্ষয় হয়েছে বলে মনে হলেও, তেমনটা হয়নি। বরং আরও আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করে আফ্রিকান দলটি। ৩৫ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে একাই বল টেনে এনে এমবাপেকে পাস দিয়েছিলেন অরেলিয়ে চৌয়ামেনি। এমবাপে বল রিসিভ করলেও শট করার আগে নিজেকে সামলাতে পারেননি। পড়ে যেতে যেতে শট নেন। বইরতিতে যাওয়ার ঠিক আগে গোলের সুযোগ এসেছিল মরক্কোর কাছে। হাকিম জিয়াসের কর্নার ফ্রান্সের রক্ষণ ক্লিয়ার করে দেওয়ার পর ব্যাক ভলি মেরেছিলেন মরক্কোর জাওয়াদ এল ইয়ামিক। তা পোস্টে লেগে ফেরে।
বিরতীর পর টানা আক্রমণ করছিল ফ্রান্স। তবে ধীরে ধীরে মরক্কোও নিজেকে ফিরে পেতে থাকে। অন্তত দুই বার গোলের কাছাকাছি চলে এসেছিল তারা। ফ্রান্সকে গোল খাওয়ার হাত থেকে বাঁচান ইব্রাহিমা কোনাতে এবং ভারান। ম্যাচের ৭৫ মিনিটের মাথায় আবার সুযোগ পেয়েছিল মরক্কো। চুয়ামেনির পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন হামিদাল্লাহ। ফ্রান্সের ডিফেন্ডাররা তখনও কেউ নিজের পজিশনে ছিলেন না। কিন্তু শট নেওয়ার বদলে বক্সের মধ্যে একের পর এক ডিফেন্ডারকে কাটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তিনি। ফলে কিছু ক্ষণের মধ্যেই তার পা থেকে বল কেড়ে নিলেন ফ্রান্সের ডিফেন্ডাররা।
নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার মিনিট দশেক আাগে রান্দালের সেই গোল । মরোক্কো কোন গোল করতে না পারলে শেষ হয় তাদের রূপকথার বিশ্বকাপ যাত্রা। ফরাসিরে পৌঁছে গেল ফাইনালে। চার বছর আগে দ্বিতীয় রাউন্ডে মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স। সে ম্যাচে এক পর্যায়ে ২-১ গোলে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও কিলিয়ান এমবাপ্পের জাদুতে ৪-৩ গোলে জেতে ফ্রান্স। সে হারের বদলা এবার মেসি কি নিতে পারবেন?
ক্যাপশন- ডিফেন্ডার থিও হার্নান্দেজের দুর্দান্ত এই শটটি মরক্কোর জালে আশ্রয় নিলে প্রথম গোল পায় ফ্রান্স-ফিফা
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন