সেমি ফাইনালে হেরে ইতিমধ্যেই হৃদয় ভেঙ্গেছে ক্রোয়েশিয়ার। শেষ চারের আরেক ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের কাছে হেরে কাতার বিশ্বকাপের রূপকথার যাত্রা শেষ হয়েছে মরোক্কোরও। এই দুই দলের জন্য এখনো বাকি আছে একটি আনুষ্ঠানিকতা। সেটা হচ্ছে তৃতীয়স্থান দখল বা ‘ব্রোঞ্জ পদক’ পাওয়ার লড়াই। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ সময় আজ রাত ৯টায় খেলাফি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মাঠে নামছে এই দুই দল। ক্রোয়েটরা স্বাধীনতা পাওয়ার পর ১৯৯৮ সালের প্রথম আসরেই তৃতীয় হওয়ার গৌরব আর্জন করেছিল। আর গতবার রাশিয়াতে তো রানার্স-আপই হয়েছিল। তাই ব্রোঞ্জ পদকটা তাদের জন্য ঠিক অতটা কাক্সিক্ষত নয়, যতটা মরোক্কোর জন্য। আফ্রিকার প্রথম দল হিসেবে শেষ চারে উঠেই মরোক্কানরা গড়েছিল ইতিহাস। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, সারা পৃথীবিময় সকল ফুটবল প্রেমীদের হৃদয় জয় করে নিয়েছিল কাসাব্ল্যাঙ্কার দেশটি। ওয়ালিদ রেগরাগির দলের জন্য তাই আজকের ম্যাচটিও অনেকটা বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলোর মতই গুরুত্বের।
ক্রোয়েশিয়া স্বাধীনতা পাওয়ার পর ২০১০ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা আসর ছাড়া বাকি সব বিশ্বকাপেই অংশগ্রহণ করেছিল। ডেভর শুকুরের হাত ধরে ফ্রান্স প্রথম আসরেই জুটেছিল ব্রোঞ্জ পদক। তারপর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দাপুটে ফুটবলের একটা ছোট বিরতি। তাদের দলটির বর্তমান রূপে আসে মারিও মাঞ্জুকিচ ও লুকা মদ্রিচদের সমকালীন ফুটবলারদের হাত ধরেই। আর কোচ জøাতকো দালিচের মাধ্যমে সেই ফুটবল পায় পূর্ণতা। এবারের আসরে ক্রোয়েট দলটি গতবারের মতক্ষুরধার ছিল না। রক্ষণভাগে কিছু শক্তি বাড়লেও তাদের মধ্যমাঠ ও আক্রমণের শক্তি বেশ কমেছে গত চার বছরে। তাও ইচ্ছাশক্তি ও ফুটবল মাঠে সঠিক কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে তারা ঠিকই জিতে যায় জাপান ও ব্রাজিলের মত দলের বিপক্ষে। বিশেষ করে সেলেসাওদের যে ভাবে কুপকাত করলো সেটি ছিল বিশাল ব্যাপার। তবে টানা দুই ম্যাচে ১২০ মিনিট খেলার পর ক্রোয়েটরা আর আর্জেন্টিনার বিপক্ষে পেরে উঠবে না, এই অনুমান ছিল বেশির ভাগ ফুটবল বিশেষজ্ঞদেরই। পন্ডিতদের কঠা সঠিক প্রমাণ করে দালিচের দল আলবিসেলেস্তাদের বিপক্ষে হারে ৩-০ ব্যধানে। তাই আজ রাতে তাদের নামতে হচ্ছে তৃতীয় হওয়ার দৌড়ে।
মরোক্কোর ড্রেসিং রুমে নাকি দুই ধরনের ভাষা ব্যবহার করা হয়! আরবি ও ফরাসি। এর কারণ দলটির বেশিরভাগ ফুটবলারই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে উঠা। তবে এই বহুমাত্রিক সংস্কৃতি বা ভাষা কিন্তু মরোক্ককানদের জন্য মোটেই সমস্যার কারণ হয়ে দেখা দেয়নি। দলটির কোচ রেগরাগিই বিশ্বকাপ ক্যাম্প শুরু করার দিন তার শিষ্যদের জানিয়েছিলেন-‘আমরা বিশ্ব সেরার মঞ্চে যাচ্ছি এবং নিশ্চিত থাক কেউ আমাদেরকে হিসেবের মধ্যে রাখবে না। তবে আমরা জানি আমরা লড়ায়ের জন্যই কাতারে যাচ্ছি।’ এই ৪৭বছর বয়সী ফুটবলার এক সুতোয় গাঁথতে পেরেছিলেন গোটা মরোক্কো দলকে। বহু ভাষাভাষিদের নিয়ে গড়া মরোক্কো দল ঠিক এক ধ্যাণে খেলতে পেরেছিল ফুটবল। এই আসরের পূর্বেই জিয়াশ, হাকিমি ও বুনোরা ছিল তারকা। তবে কাতার বিশ্বকাপ তাদের দিয়েছে সোফিয়ান আমব্রাবাত ও নায়েগ নায়েফ আজুয়ার্দের মত তারকা।
কাসাব্ল্যাঙ্কা এক বিখ্যাত ঐতিহ্য ও প্রেমের নগরী। এই শহরের ইতিহাস নিয়ে আছে বহু কাহিনী, নগরের রোমাঞ্চের কাহিনী সকল মানুষের মুখেমুখে। তবে কাতার বিশ্বকাপের পর থেকে সেই রাজধানীর যে দেশকে কেন্দ করে, তাকে নিয়েই শুরু হয়েছে ভিন্ন মাত্রার উন্মাদনা। এবার তাহলে মরোক্কোর ফুটবলের রোমাঞ্চে বুদ থাকুক গোটা বিশ্ব। তাদের শেষ চার থেকে বাদ পড়াতে তেমন কোন ক্ষতিই হয়নি, কারণ এর আগেই ফুটবল প্রেমীরাদের কাছে এই আসরের জয়ী হয়ে গিয়েছে মরোক্কো। বিশ্বসেরা স্পেন ও ইউরোপ সেরা পর্তুগালকে হটিয়ে যে আফ্রিকান দল বিশ্বকাপ সেমি ফাইনাল খেলে, তাদের ভুলার কোন উপায় কি আছে?
এই দুই দল পূর্বে দুইবার মুখোমুখি হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে ও এই আসরের গ্রুপ পর্বে। দুই বারই তাদের মোকাবেলা অমীমাংশীত ছিল। তবে আজ যে কোন একদলকে যে জিততেই হবে ব্রোঞ্জের নেশায়।
আজকের খেলা
তৃতীয়স্থান নির্ধারণী, মরক্কো-ক্রোয়েশিয়া
সরাসরি : বিটিভি/জিটিভি/টি স্পোর্টস, রাত ৯টা
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন