সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

ম্যারাডোনার ডাক শুনতে পাবেন মেসি!

আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স ফাইনাল

নাভিদ হাসান | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০৫ এএম

আর্জেন্টিনা আজ যে ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে খেলতে নামছে তাতে সবচেয়ে আনন্দিত কে? উত্তরটা আসতে পারে হরেক রকম ভাবে। তবে যদি ফুটবল জাদুকর ডিয়াগো ম্যারাডোনা বেঁচে থাকতেন? তাহলে অবধারিত ভাবেই ফুটবল ঈশ্বর ম্যারাডোনা হতেন এই বিশ্বভ্রম্যান্ডের সবচেয়ে সুখী প্রাণ! মেক্সিকোতে ১৯৮৬ সালে তিনি যে কীর্তি গড়েছিলেন তার উত্তরসূরি লিওনেল মেসি যে সেই জুতোয় পা গলানো থেকে কেবল এক কদম দূরে দাঁড়িয়ে! আজ লুসাইল স্টেডিয়ামে রাত নয়টায় পর্দা নামতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ ২০২২ সালের। যেখানে আর্জেন্টিনা বিভোর ইতিহাসের তৃতীয় শিরোপা ঘরে তোলার স্বপ্নে আর ফরাসিদের দৃঢ় বিশ্বাস তারা পারবে শিরোপা ধরে রাখতে।

ম্যানেজার লিওনেল স্কালোনির অধীনে আলবিসেলেস্তারা টানা ৩৬ ম্যাচে ছিল অপারাজিত, এরপর সাউদী আরবের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পচা শামুকে পা কাটে আকাশি নীলরা। তারপর আবারও টানা ৫ ম্যাচ জয়, সব ক’টিতেই ২-০ গোলের লিড নিয়ে। সবমিলিয়ে এবারের আসরের শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে সবদিক থেকেই ফেবারিট দুই লিওর দল। অন্যদিকে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই শিরোপার জন্য মরিয়া ভাবটা একটু হলেও ‘কম’ দিদিয়ে দেশম শিষ্যদের। তবে ইতিহাস গড়ার সুযোগ তারা হেলায় হারাবে কেন!

ম্যারাডোনা সশরীরে না থাকলেও উত্তরসূরিদের মাধ্যমে ঠিক আছেন এবারের বিশ্বকাপে। ফুটবল ইশ্বরের ছায়া কাতারে প্রবলভাবে দেখা যাচ্ছে মেসির মাধ্যমে। আর্জেন্টিনার বর্তমান অধিনায়ক চলমান আসরে নিজে করেছেন ৫ গোল আর সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ৩টি। ফাইনালের আগ পর্যন্ত আসরে ৪৫ শটে সম্পৃক্ত থেকেছেন মেসি। যার পরিমাণ আর্জেন্টিনার মোট শটের ৫৬.৩ শতাংশ। চমক দেওয়ার মত তথ্য হচ্ছে ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো আসরে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ে ম্যারাডোনার শতাংশ ছিল ৫৬.৪! পরিসংখ্যান বাদ দিয়ে ভিন্ন এক বস্তবতায় যাওয়া যাক। মেসির বয়স এখন ৩৫ বছর ৫ মাস। সামনের আসরের সময় স্বাভাবিকভাবেই মেসি জাতীয় দলের হয়ে খেলার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা মেসি ভক্তরা চাচ্ছেন তার হাতে বিশ্বকাপ শিরোপা দেখতে। অনেকটা ‘দ্য লাস্ট ড্যান্সের’ মতো আর-কি।

এই আসরে আর্জেন্টিনা কোন নির্দিষ্ট ছকে খেলেনি। ম্যাচ অনুযায়ী পরিকল্পনা সজিয়েছেন কোচ স্কালোনি। নেদাল্যান্ডসের দুই উইংব্যাক খুব আক্রমণাত্বক তাই সেই ম্যাচে ৩-৫-২ ছকে গিয়েছিলেন ৪৪ বছর বয়সী আলবিসেলেস্তা কোচ। তবে ক্রোয়শিয়ার বিপক্ষে পুনরায় ৪-৪-২ ছকে ফিরে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। ফরাসি ফুটবলার ওসমান দেম্বেলি ও কিলিয়ান এমবাপে এই আসরের সবচেয়ে সফল দুই উইঙ্গার। এই দুইজনকে ঠেকানোর জন্য ৩-৫-২ ছকে পরিকল্পনা আটতে পারেন স্কালোনি। তবে কিছু আর্জেন্টাইন কিছু গণমাধ্যমের দাবি ক্রোয়শিয়ার বিপক্ষে খেলা এই ছকেই মাঠে নামবে আকাশি-নীলরা।

অন্যদিকে ফরাসি কোচ দেশমকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে ইতালিয়ান ভিতোরিও পজ্জোর পরে দ্বিতীয় ম্যানেজার হিসেবে দুটি বিশ্বকাপ জয়ের মাইলফক। পজ্জোর অধীনে ইতালি ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ এই দুই আসরে জিতেছিল বিশ্বকাপ শিরোপা। রাশিয়াতে চ্যাম্পিয়ন হ ওয়ার পর এবার সেই সুযোগ এসে হাজির দেশমের সামনে। তবে ফরাসি শিবিরে হানা দিয়েছে ক্যামেল ভাইরাসের প্রভাব। আন্দ্রিয়ান রাবিও, দায়োত উপামেকানো ও কিংসলি কোমান এই সংক্রমণের কারণে মিস করেছেন সেমিতে মরোক্কোর ম্যাচ। তাছাড়া রাফায়েল ভারান ও ইব্রাহিম কোনাতেও শেষ চারের ম্যাচের পর একই ভাইরাসে ভুগেছেন। তবে আশার ব্যাপার হচ্ছে এই পাঁচ ফুটবলারই গতকাল অনুশীলণে ছিলেন। জানা গিয়েছে মরোক্কো ম্যাচে মৃদু চোট পায়েছিলেন থিও হের্নান্দেজ এবং অরেলিয়ে চৌয়ামেনি।

সবমিলিয়ে এই চোটই যেন দেশমের নিয়মিত সঙ্গী এবারের বিশ্বকাপের। বিশ্বকাপের পূর্বে নিয়মত ফুটবলারদের মাঝে ছয়জন ছিটকে গিয়েছিলেন স্কোয়াড থেকে। এরপর আসর শুরুর পর এই করুণ হাল ফরাসিদের। তবে সকল শ্রোতের বিপ[ক্ষে গিয়ে দেশম ঠিকই ফাইনালে তুলেছেন দেশকে। এই ৫৪ বছর বয়সী ম্যানেজার ৪-২-৩-১ ছকে দলকে খেলান এবং আসরের শুরু থেকে এই পর্যন্ত একই পরিকল্পনায় ছিলেন তিনি। এমনকি ম্যাচের মাঝেও তিনি ছক বদলান নি। তাই ধারণা করা হচ্ছে আর্জেন্টিনা যদি অ্যান্তোনিও গ্রীজম্যান ও এমবাপেকে আটকে ফেলতে পারে তবে ম্যাচ জয়ের কাজ অর্ধেকটাই হয়ে যাবে। যদিও এমবাপে এরমাঝেই আসরে করেছেন ৫ গোল ও ২ এসিস্ট, তবে শেষ দুই ম্যাচে এই পিএসজি ফরোয়ার্ড পাননি গোল। তবে এই ২৪ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড গোল না পেয়েও দারুণ প্রভাব ফেলেছিলেন ম্যাচে। আজকের লড়াইটা দুই দলের হলেও দুই ক্লাব সতীর্থ মেসি ও এমবাপের উপরেই তাই থাকছে সকল আলো।

এই দুই দল এখন পর্যন্ত একে অপরের মোকাবেলা করেছে ১২ বার যার মাঝে আলবিসেলেস্তাদের জয় ৬ ম্যাচে আর ব্লুজরা জিতেছে ৩ বার। বাকি তিনটি ম্যাচ ছিল অমীমাংসিত। বিশ্বকাপের মঞ্চে দুই দল ৩ ম্যাচ খেলেছে যেখানে ১৯৩০ ও ১৯৭৮ সালে জিতেছিল আর্জেন্টিনা। আর গত আসরে শেষ ষোলতে ৪-৩ ব্যবধানে জয় ফ্রান্সের। আর্জেন্টিনা এই নিয়ে ষষ্ঠবারের মত বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলছে। ১৯৩০ সালে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী আসরে ফাইনাল খেলেছিল আকাশি-নীলরা, যেখানে উরুগুয়ের বিপক্ষে হেরেছিল তারা ৪-২ গোলে। ১৯৭৮ সালে নেদারল্যান্ডসকে ৩-১ গোলে ও ১৯৮৬ সালে পশ্চিম জার্মানিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে শিরোপার স্বাদ পায় দলটি। ১৯৯০ ও ২০১৪ সালে জার্মানদের কাছে ১-০ গোলে হেরে তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন ভাঙে তাদের। অন্যদিকে ফরাসিরা বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলছে চতুর্থবারের মতো। ১৯৯৮ সালে প্রথমবার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ খেলতে নেমেই শিরোপা ঘরে তোলে তারা ব্রাজিলকে ৩-০ গোলে হারিয়ে। পরে ২০০৬ সালের ফাইনালে ইতালির কাছে টাইব্রেকারে হেরে যায় ফরাসিরা। নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা জেতে দলটি গত আসরে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে।

আজকের খেলা
আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স, রাত ৯টা
সরাসরি : বিটিভি/জিটিভি/টি স্পোর্টস

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন