বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

কাতারের ‘ট্র্যাজিক হিরো’ এমবাপে

নাভিদ হাসান | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ট্রাজিক হিরো গ্রীক ওদেপাস! পরশু রাতে ফুটবল ইতিহাস পেল এক ফরাসি বিয়োগান্তক নায়ক। তার নাম কিলিয়ান এমবাপে। ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালে পেলেন হ্যাটট্রিকের দেখা, যা ইতিহাসের দ্বিতীয় মাত্র। দুইবার পিছিয়ে পড়ার পরও দলকে ফেরালেন সমতায়। তবুও ম্যাচ শেষে লুসাইলে জয়ের হাসি হাসতে পারলেন না এমবাপে। ওই যে বলা হয়- চ্যাম্পিয়ন হতে হলে ভাগ্যের সহায়তাও লাগে। ঠিক সেটাই ছিল আর্জেন্টিরা। তবে ফাইনালে বীর সুলভ ম্যাচ খেলে এমবাপে নিজেকে নিয়ে গেলেন একটা ভিন্ন মাত্রায়। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার দশ মিনিট আগেও মনে হচ্ছিল একপেশে জয়ের দিকে এগুচ্ছে আলবিসেলেস্তারা। তবে এমবাপের জাদুতে সেই পানসে ম্যাচ পেয়ে গেল ইতিহাসের সেরা ফাইনাল ম্যাচের স্বীকৃতি।
ফিফা বিশ্বকাপের ইতিহাসের সেরা গোলের মালিক জার্মানির মিরোসøাভ ক্লোজা। এই স্ট্রাইকার ১৬ গোল করতে খেলেছিলেন ২৪টি ম্যাচ। এমবাপের বর্তমান বয়স ২৪ বছর। এরই মধ্যে ১৪ ম্যাচ খেলে করে ফেলেছেন ১২ গোল ও ৩ এসিস্ট। সবকিছু ঠিক থাকলে খেলবেন আরও দুটি বিশ্বকাপ। বিশ্ব আসরের সব রেকর্ডই যে তার নামের পাশে জড়াতে যাচ্ছে সেই ব্যাপারে নেই বিন্দুমাত্র সন্দেহ। তবে সেখানে আছে অনেক ‘যদি’ ও ‘কিন্তু’র ব্যাপার। তাই কাতারে এই ফরাসি যা অর্জন করলেন সেই গুণগানই গাওয়া যাক আগে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আসরের প্রথম ম্যাচে পিছিয়ে পড়ে ফ্রান্স। তারপরই শুরু হয় এমবাপের গতির জাদু। না, প্রথম দুই গোলে প্রত্যক্ষ কোন অবদান ছিল না কগজে-কলমে। তবে গোল চর্মাকারের ফুটবলটি কখনো কাগজ-কলমের হিসেব মেনে চলে? মোটেই না। পিছিয়ে পড়ার পর এমবাপে যেভাবে প্রতিপক্ষের বাম-পার্শ্বের রক্ষণের উপর দিয়ে প্রলোয়নকারী ঝড় বসিয়ে দিয়েছিলেন তাতেই চূর্ণ হয়ে যায় সকারুদের আত্মবিশ্বাস। পরে একটি করে গোল করলেন এবং করালেন। বিশ্বকাপের পূর্বে ডেনমার্কের বিপক্ষে নেশন্স লিগের দুটি ম্যাচেই হেরেছিল ফরাসিরা। বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে সেই ডেনিশদের বিপক্ষে এমবাপে এনে দিলেন দুই গোল।
ফরাসি তারকার সেই জাদু বহমান ছিল সেকেন্ড রাউন্ডে পোল্যান্ডের বিপক্ষেও। সেই ম্যাচে দেশমের বাহীনির ৩ গোলেই জড়িয়ে গেল ২৪ বছর বয়সী উইঙ্গারের নাম। পোলিশদের অবস্থা ছিল-ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি! পরের দুই ম্যাচে গোল বা এসিস্টের খাতায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছিল না পিএসজি তারকার নাম, তবে ঠিকই ম্যাচের আক্রমণের সূচনাগুলো আসলো তারই বদলোতে। শেষ আটে ও সেমি ফাইনালে যথাক্রমে ইংল্যান্ড ও মরোক্কোর বিপক্ষে তিনি যে ফুটবল খেলেছেন তা চোখের প্রশান্তি।
আর ফাইনালের যা করলেন তা কি শব্দে বর্ণনা করা সম্ভব? ফুটবলপ্রেমীরা নেতিবাচক ভাবেই মাথা নাড়বেন নিশ্চয়ই। এই ম্যাচে তিনি হয়ে গিয়েছিলেন এক যোদ্ধা, ঠিক গ্রীক ‘আখেলিজে’র মত! তবে এই কথা তো জানাই যে, আখিলিজের একটা দুর্বল জায়গা ছিল। তার পায়ের যে অংশ ধরে তাকে অমরত্বের পানিতে ভেজানো হয়েছিল, সেই অংশটুকুই তার ঘাতক। এমবাপের জন্য সেটা ছিল তার কোচের গোঁয়ারতমি। এমবাপের সতীর্থ করিম বেনজেমা ফিট থাকার পরও দিদিয়ের দেশম, মাদ্রিদ তারকাকে ফাইনাল খেলালেন না। খেলালে নিশ্চয়ই এমবাপের উপর চাপ কম পড়ত, আর প্রতিপক্ষ বিন্ন পরিকল্পনা করত। তাছাড়া পরশু রাতে লুসাইলে ফরাসি রক্ষণ যেন ভেঙ্গে পড়েছিল তাসের ঘরের ন্যায়। এমবাপে শুরুটা করেছিলেন আখিলিজের মত, তবে শেষটা হলো গ্রীক নায়ক ওদেপসের ন্যায়। মজার ব্যাপার কি জানেন? শৌর্যবীর্যের প্রতীক আখিলেজের প্রাণনাশ হয়েছিল দুঃখজনক ভাবেই। দুর্বল যোদ্ধা ‘প্যারিসে’র মাধ্যমে। ট্রাজিডির নিয়তি পূর্ব নির্ধারিত। এমবাপেও কি কাতার বিশ্বকাপের শিরোপা খুইয়ে তাই ভাবছেন?
তবে ইতিবাচক দিক হচ্ছে এমবাপের বয়স। ইতিহাস অদেপাস বা আখিলিজকে দ্বিতীয় সুযোগ দেনি। তবে ফরাসি উইঙ্গার কিন্তু বয়সের সুবিধা নিয়ে আরও দুটি কিংবা ভাগ্য সহায় হলে তিনটি সুযোগ পেতে যাচ্ছেন বিশ্বকাপের মঞ্চে। সেই সুযোগ গুলো হয়ত সর্বোস্ব দিয়েই কাজে লাগাতে চেষ্টা করবেন এমবাপে। ভবিষ্যত বলা বা গড়া স্রষ্টার কাজ। নশ্বর মানুষ জানে না পর মুহুর্তে কি হবে। তবে শেষ ৬ বছর এমবাপে যেভাবে খেলেছেন, জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করে যদি আরও বছর দশেক সেভাবে খেলে যান, তাহলে তার নামটা উচ্চারিত হবে পেলে, ম্যারাডোনা, মেসি ও রোনালদোর কাতারে। এতোটুকু একজন নশ্বর প্রাণ অনুমান করার দৃষ্টতা দেখাতেই পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Farhan Tanvir ২০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:১১ এএম says : 0
এমবাপ্পে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন