আল্লাহ তা’আলা যুগে যুগে অনেক নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। বিশ্ববাসীকে সুখ-শান্তি, কল্যাণ ও সফলতার পথ প্রদর্শনের জন্য সর্বশেষ নবী প্রেরণ করেছেন মুহাম্মাদ (সা.) কে এবং বান্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যেন তাঁর আনুগত্য করে। তাঁর আদেশ-নিষেধ শিরোধার্য করে। তাঁর শিক্ষা-নির্দেশনা মেনে চলে। সর্বোপরি তাঁকে আদর্শরূপে ধারণ করে। সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর নির্দেশমতো নবী (সা.)-এর আনুগত্য করেছেন। এক্ষেত্রে গোটা উম্মতের ইতিহাসে তাঁদের রয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য। নবীজীর আনুগত্যের যে দৃষ্টান্ত তাঁরা স্থাপন করেছেন-এর নজির কেবল তাঁরাই। তাঁরা তাঁর আদেশ-নিষেধ, শিক্ষা-নির্দেশনা, বাণী, কর্ম সবকিছুর অনুসরণ করতেন। তাঁর চোখের ইশারা ও মনের ভাষা পর্যন্ত অনুধাবন করতেন।
তাঁর আদেশ-নিষেধ মানার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতেন। তাঁর আদেশকে সবকিছুর ওপর প্রাধান্য দিতেন। তাঁর পছন্দ নয় এমন কাজ পরিহার করতে বিন্দুমাত্রও দ্বিধা করতেন না। আকীদা-বিশ্বাস, ইবাদত-বন্দেগী, লেনদেন, চলাফেরা, স্বভাব-চরিত্র, আচার-ব্যবহার সর্বক্ষেত্রে তাঁকে আদর্শরূপে ধারণ করেছিলেন। তাঁদের জীবন ছিল নববী-আদর্শের জীবন্ত ছবি। নবীজীর পরিপূর্ণ ও একনিষ্ঠ আনুগত্যই গোটা উম্মতের মধ্যে তাঁদেরকে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্মে পরিণত করে। নবী (সা.)-এর প্রতি সাহাবায়ে কেরামের আনুগত্যের সব দিক, সব বৈশিষ্ট্য, সব দৃষ্টান্ত আলোচনা করা দুরূহ। এ তো অক‚ল সমুদ্র।
খায়বারের যুদ্ধের ঘটনা। নবী (সা.) সাহাবীদের নিয়ে যুদ্ধে ছিলেন। একজন এসে জানাল, মানুষ গাধার গোশত খাচ্ছে। তিনি একজনকে এই ঘোষণা করতে বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমাদেরকে গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। তোমরা তা খেয়ো না, ফেলে দাও। তা অপবিত্র। এ ঘোষণা শুনে ডেগচিগুলো উপুড় করে দেওয়া হল অথচ তাতে গোশত টগবগ করছিল। (সহীহ বুখারী : ৪১৯৯)।
এখানে আমরা নবীজীর প্রতি সাহাবীদের আনুগত্যের দু’টি বৈশিষ্ট্য দেখলাম : ক. নবী (সা.) গৃহপালিত গাধার গোশত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। সাহাবীগণ যে মাত্র ঘোষণা শুনেছেন সঙ্গে সঙ্গে তা থেকে নিবৃত্ত হয়ে গেছেন। অথচ গোশত রান্না হয়ে গিয়েছিল এবং তাঁরা যুদ্ধের ময়দানে ছিলেন। তারপরও নবীজীর নির্দেশ মানতে কালবিলম্ব করেননি। এ চিন্তা করেননি যে, আচ্ছা! নিষেধাজ্ঞা যেহেতু মাত্র শুনেছি এবং তা শোনার আগেই আমরা রান্না করে ফেলেছি, তাছাড়া আমরা রণাঙ্গনে আছি, তাই আজকের মতো খেয়ে নিই। সামনে থেকে আর খাব না।
খ. তাঁরা নবীজীর নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করেছেন। গৃহপালিত গাধার গোশত খাওয়া থেকেও নিবৃত্ত হয়েছেন এবং ডেগচিও উপুড় করে দিয়েছেন।
একদিন নবী (সা.) জাবির (রা.) কে বললেন, বাহরাইনের মাল এলে তোমাকে এত এত এত দেব। এ কথা বলে তিনি দুই হাত তিন বার প্রসারিত করেন। কিন্তু তাঁর ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত বাহরাইনের মাল আসেনি। আবু বকর (রা.)-এর খেলাফত আমলে আসে। তখন আবু বকর (রা.) ঘোষণা করলেন : যদি নবী (সা.) কাউকে কোনো প্রতিশ্রæতি দিয়ে থাকেন অথবা তাঁর কাছে কারো কোনো ঋণ থাকে তাহলে সে যেন আমার কাছে আসে।
ঘোষণা শুনে জাবির (রা.) গেলেন এবং নবীজীর ওয়াদার কথা জানালেন। আবু বকর (রা.) তাঁকে দুই হাত ভরে দিলেন। জাবির (রা.) গণনা করে দেখেন পাঁচশ’। এরপর আবু বকর (রা.) বললেন, এর দ্বিগুণ নিয়ে যান। (সহীহ বুখারী : ২২৯৭)।
নবীজী যদিও জাবির (রা.) কে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু তাঁর জীবদ্দশায় প্রতিশ্রুত মাল আসেনি। তাই তাঁর পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয়নি। আবু বকর (রা.)-এর খেলাফত আমলে মাল এলে তিনি চিন্তা করেছেন, আজ নবীজী আমাদের মাঝে থাকলে নিশ্চয় নিজের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতেন। কেননা নবীজী কখনো ওয়াদা ভঙ্গ করেননি। এই চিন্তা থেকেই আবু বকর (রা.) ঘোষণা করেছেন। ঘোষণা শুনে যখন জাবির (রা.) এলেন তখন তিনি তাঁকে দান করলেন এবং নবীজী যেমন দুই হাত ভরে তিনবার দেওয়ার ওয়াদা করেছিলেন তিনিও সেভাবেই দিলেন।
নবীজী (সা.)-এর প্রতিশ্রুতি পূরণের ব্যাপারে যখন সাহাবী এমন যত্নবান তো তাঁর আদেশ পালনের ব্যাপারে কত আন্তরিক হবেন তা সহজেই অনুমেয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন