রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

নিউজিল্যান্ডে অচেনা বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:২৭ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬

শামীম চৌধুরী : হেগলি ওভালের উইকেটের রঙ বদলেছে, সবুজাভ থেকে বাদামী বর্নের উইকেট পেয়েছে উপহার মাশরাফিরা। উইকেটই শুধু গোলক ধাঁধায় ফেলেনি বাংলাদেশকে। টিম সাউদি এবং ট্রেন্ট বোল্টকে নিয়ে ওয়ানডে সিরিজের ছক কষছেন না মাইক হেসন, ম্যাচের দুইদিন আগে কিউ কোচ এই দুই সিনিয়র পেস বোলারকে আড়াল করে ফেলতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশ দলকে ফাঁদে। যাদেরকে বাদ দিয়ে রনকৌশল ছিল বাংলাদেশ দলের, একাদশে সেই দু’জনকে দেখেও যে গোলক ধাঁধায় হাতুরুসিংহের শিষ্যরা। ২১ মাস আগে হ্যামিল্টনে কিউদের বিপক্ষে যে বাংলাদেশকে দেখেছে বিশ্ব, বিশ্বকাপের সেই লড়াকু বাংলাদেশকে যে দেখেনি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচে। বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ স্কোরের (৩৪১/৭) ম্যাচে ৭৭ রানে জিতে উপর্যুপরি দু’টি দ্বিপাক্ষিক সিরিজে হোয়াইট ওয়াশের বদলা নেয়ার হুংকারই যে সিরিজের প্রথম ম্যাচে দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। চার বছর আগেও যিনি ছিলেন বাংলাদেশের কোচ, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে সেই জার্গেনসেনকে ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব দিয়েই সফল নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট!
নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন, উইকেটে উপমহাদেশের দলগুলোকে প্রতিক‚লতার মুখোমুখি হতে হয়। এটা নুতন কিছুই নয়। তবে অস্ট্রেলিয়ায় ৯ দিনের প্রাক প্রস্তুতি অনুশীলন, দু’টি প্রস্তুতি ম্যাচ এবং প্রথম ওয়ানডের আগে নিউজিল্যান্ডে এক সপ্তাহ অবস্থান ও একটি অনুশীলন ম্যাচে মানিয়ে নেয়ার কথা যাদেরÑ সেই চেহারায়ই যে বাংলাদেশ দলকে যায়নি দেখা ক্রাইস্টচার্চে প্রথম ওয়ানডেতে! দলের সঙ্গে আছেন মোটা বেতনের ইংলিশ ফিল্ডিং কোচ রিচার্ড হ্যালসল, দলে তরুণদের সংখ্যা ভারী বলেই ইতিবাচক ফিল্ডিংয়ে নিউজিল্যান্ডকে টেক্কা দেয়ার কথাÑ অথচ, এখানেই অচেনা বাংলাদেশ হাজির! ক্রাইস্টচার্চের হেগলি ওভালের মাঠ ঢাকা, চট্টগ্রামের চেয়ে অনেক ছোটÑ তার উপর আউটফিল্ডে বল পড়লেই শা শা করে ছুটে যায় বাউন্ডারির দিকে। তাই বলে এক রান কিভাবে পরিণত হতে পারে দুই রানে, দুই রানের পরিবর্তে তিন রানের দৌড় কতোটা স্বাচ্ছন্দে নেয়া যায়Ñ বাংলাদেশ ফিল্ডারদের পাড়- মহল্লা মানের এমন ফিল্ডিংই গতকাল দেখেছে দর্শক! তিন তিনটি ক্যাচ ড্রপ, একটি রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া করার পাশাপাশি শর্ট বল এবং অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের মাশুল যে কতো বড় হতে পারে, সেটাও জেনে গেছে মাশরাফির দল। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৬তম ওয়ানডেতে এসে ২৬ বছর আগে সারজার রেকর্ড স্কোর (৩৩৮/৪) টপকে সর্বোচ্চ স্কোর করেছে নিউজিল্যান্ড (৩৪১/৮)। শেষ পাওয়ার প্লে’র ৬০ বল বড় বেশি হতাশ করেছে বাংলাদেশ দলকে। যে পর্বে ১০৩ রানে বাংলাদেশকে রান পাহাড়ে চাপ দিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
২৬ বছর আগে বাংলাদেশ দলকে সারজার দুঃসহ স্মৃতি মনে করিয়ে দিতে শুধু সর্বোচ্চ স্কোরেই থেমে থাকেনি মার্টিন ক্রোর উত্তরসূরীরা। মার্টিন ক্রো-জন রাইটের প্রথম উইকেট জুটিতে রেকর্ড ১৫৮ রানের পার্টনারশিপে বাংলাদেশকে ১৯৯০ সালে রান পাহাড়ে চাপা দেয়ার কথা মনে করিয়ে দিতে ওই পার্টনারশিপের কৃতিকে স্পর্শ করেছেন গতকাল পঞ্চম জুটিতে ল্যাথাম-মুনরো! বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের আগের ২৫টি মুখোমুখি লড়াইয়ে ২১ মাস আগে হ্যামিল্টনে মাহামুদুল্লাহর সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ১২৮ রানের হার না মানা ইনিংসটিও ল্যাথামের ১৩৭ রানের কাছে মানল হার। ১১৫ রানের মাথায় উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া ল্যাথাম থেমেছেন ১৩৭এ। প্রত্যাবর্তন ম্যাচে তাকে থামিয়েছেন মুস্তাফিজ ফুলার লেন্থ বলে, কট বিহাইন্ডে বাধ্য করে। ২৭ রানের মাথায় রান আউট এবং ৮৩ রানের মাথায় মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া কলিন মুনরোর টি-২০ আমেজের ইনিংস ( ৬১ বলে ৮ চার ৪ ছক্কায় ৮৭) থামিয়েছেন সাকিব।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে (নেলসন) ৩২২ চেজ করে জয়ের অতীত আছে বাংলাদেশের, ২১ মাস আগে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩০৯ চেজ করে জয়ের অতীত তিন বছর আগের। ৩৪২ চেজ করে জিতবে কিভাবে? লাঞ্চ বিরতিতে এটাই দুর্ভাবনায় ফেলেছে বাংলাদেশ দলকে। তারই প্রতিফলন পড়েছে ব্যাটিংয়ে। অকারনে লেগ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে শর্ট বলে উচ্চাভিলাসী শট নিতে যেয়ে উইকেট কিপারকে দিয়ে এসেছেন ক্যাচ(১৬)। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ০.২৪এবং১১ রানে বাজে ব্যাটিংয়ের অপবাদে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার সুযোগ দেয়া হয়নি যাকে, অনুশীলন ম্যাচে ৪০ রানের ইনিংস দেখে সেই সৌম্যকে ফিরিয়ে এনেও ভুলটা করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। রান করতে কতো কস্ট, ১৮ বলে এক রানের ইনিংস শেষে ফুলার লেন্থ বলে এক্সট্রা কভারে তার ক্যাচ প্র্যাকটিস করানোর দৃশ্য বিরক্তিকরের চেয়েও বেশি কিছু! বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ মোকাবেলায় বাংলাদেশ দলকে ধ্বংসস্ত‚প থেকে একাই টেনে তুলেছিলেন মাহামুদুল্লাহ ১২৮ রানের নট আউট ইনিংসে। সেই মাহামুদুল্লাহ নিশামের আউট সাইড অফ ডেলিভারিতে দিয়েছেন আত্মাহুতি (০)। শর্ট বল ছেড়ে দিতে দিতে সহজাত বৈশিষ্ট থেকে বেরিয়ে এসে ফিফটির সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেও করেছেন তামীম মস্তবড় ভুল। নিশামের যে শর্ট বলটি ছেড়ে দিলে তা গণ্য হতে পারতো নো বলে, সেই ডেলিভারিটিকেই কিনা আপার কাটের মতো উচ্চাভিলাসী শট নিতে যেয়ে ডিপ থার্ডম্যানে সঁপে দিয়েছেন নিজেকে ( ৩৮)। পঞ্চম জুটিতে মুশফিকুরের সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়ায় ৫৭ বলে ৬২ রানে বাংলাদেশকে ম্যাচে রেখেছিলেন সাকিব। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩২তম ফিফটির ইনিংসকে ( ৫৪ বলে ৫ চার ২ ছক্কায় ৫৯) করতে পারতেন আরো বড়। কিন্তু ফার্গুসনকে ছক্কায় প্রলুদ্ধ হয়ে পরের বলেও একই শট নিতে যেয়ে ডেকে আনলেন নিজের এবং দলের অপমৃত্যু। দ্রæত সিঙ্গল নিতে যেয়ে মুশফিকুর ( ৪৮ বলে ৪২) পেলেন চোট এমন এক সময়ে, যখন ম্যাচে লড়াই থেকে পড়তে হলো বাংলাদেশকে ছিটকে। উপর্যুপরি ২ ওয়ানডে সিরিজে তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে মানিয়ে নেয়া সাব্বির জানিয়ে দিলেন লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিং তার পছন্দ নয় (১৬)। সব হারিয়ে স্যান্টারকে ২ এবং সাউদিকে এক ছক্কায় ষষ্ঠ ম্যাচে এসে প্রথম ফিফটির মুখ দেখা মোসাদ্দেকের ( ৪৪ বলে ৫ চার ৩ ছক্কায় ৫০) অভিষেক ফিফটি পেয়েছে হাততালি। তবে ৫০ ওভার পর্যন্ত দলকে টেনে নেয়ার দায়িত্বটা নিতে পারেননি তিনি।
মুস্তাফিজুর রহমান এবং সাকিবকে নিয়ে সতর্ক ছিলেন নিউজিল্যান্ড কোচ। তার দৃষ্টিতে এই দুইজন যে বিশ্বমানের ক্রিকেটার, তার স্বাক্ষর রেখেছেন এই ২ বাঁ হাতি। হাফ ফিট মুস্তাফিজুর ১৩ মাস পর ওয়ানডে ম্যাচে খেলতে নেমে দিয়েছেন আস্থার প্রতিদান। প্রথম ব্রেক থ্রুটি দিয়েছেন তিনি। সেøায়ার ডেলিভারিতে কিউই ওপেনার গাপটিলকে মিড অনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করা মুস্তাফিজুরের প্রথম স্পেলটি ছিল অসাধারণ (৪-০-১৩-১)। ২ উইকেটের ইনিংসে পরের ২টি স্পেল ছিল ৩-০-২২-০ ও ৩-০-২৭-১। অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের পরও গতকাল সর্বোচ্চ তিনটি শিকার সাকিবের (৩/৬৯),তার পাশে সর্বোচ্চ ইনিংসটিও সাকিবের (৫৯)। হতাশায় শুরু সিরিজে মুশফিকুরের হ্যামেস্ট্রিং ইনজুরি বড় ধরনের দুর্ভাবনায় ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশকে। বাজে শুরুর দিনে সেøা ওভার রেটে জরিমানাও দিতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। ২০ শতাংশ ম্যাচ ফি কর্তন হয়েছে অধিনায়ক মাশরাফির, টিমমেটদের ম্যাচ ফির ১০ শতাংশ করে কর্তন হয়েছে সেখানে!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন