বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

একমাত্র শল্য চিকিৎসক অফিস করেন ৩ দিন চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ

| প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী থেকে : ডা. মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ। নরসিংদী সদর হাসপাতালের শল্য চিকিৎসা বিভাগের একমাত্র শল্য চিকিৎসক। বিএমএ’র নেতৃত্বের দোহাই দিয়ে তিনি নিয়মিত অফিস করছেন না। চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না জরুরি অপারেশনের রোগীরা। সাপ্তাহের মাত্র ২/৩ দিন অফিসে এলেও তিনি জরুরি অপারেশনে উৎসাহ বোধ করছেন না। হাসপাতালে বসেই হাসপাতালের বদনাম করছেন। তিনি অপারেশনের রোগীদেরকে বলছেন নরসিংদী সদর হাসপাতালে অপারেশনের অস্ত্র ও সরঞ্জাম নেই। নেই পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিক সাপোর্ট। এসব কথা বলে তিনি রোগীদেরকে হাসপাতালে অপারেশন করাতে নিরুৎসাহিত করছেন। এ অভিযোগ জরুরি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের।
জানা গেছে, নরসিংদী সদর হাসপাতালটি জেলা শহরের কেন্দ্র স্থলে অবস্থিত। এই হাসপাতালটি রোগীর ভারে ন্যুব্জমান থাকে। উত্তম চিকিৎসা সেবার জন্য এই সদর হাসপাতালটি দুবার জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছে।
প্রতিদিন শল্য চিকিৎসা বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগে শত শত রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। কিন্তু শল্য চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ (জুনিয়র কনসালটেন্ট) নরসিংদীতে যোগদানের পর বিগত ৬/৭ মাস যাবৎ রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে এসে ডাক্তার না পেয়ে বিফল মনোরথে ফিরে যাচ্ছে। অনেক রোগীরা সংঘবদ্ধ দালাল চক্রের শিকার হয়ে সর্বস্ব খোয়াচ্ছে। সপ্তাহে ২/৩ দিন যেসব রোগীরা তাকে চেয়ারে পাচ্ছে তারাও অপারেশন করাতে পারছে না। তিনি রোগীদেরকে প্রাইভেট হাসপাতালে অপারেশন করার পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি হাসপাতালে যোগদানের পর থেকে অপারেশনের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। গত ডিসেম্বর মাসে একটিও অপারেশন করেননি ডা. মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।
খবর নিয়ে জানা গেছে, ডা. মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ স্বাচিপের একজন অধস্তন নেতা। স¤প্রতি অনুষ্ঠিত বিএমএ’র এক্সক্লুসিভ নির্বাচনে তিনি সবচেয়ে কমসংখ্যক ভোট পেয়ে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, তিনি গত ৩০ মে ২০১৬ তারিখে সদর হাসপাতালে যোগাদানের পর থেকেই নাকি তৎকালীন জেলার একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে জানিয়েছিলেন তিনি সাপ্তাহে ২/৩ দিনের বেশি অফিস করতে পারবেন না। কারণ তিনি নেতা! এ ব্যাপারে তিনি নাকি স্বাচিপের ঊর্ধ্বতন নেতাদেরকে দিয়ে নরসিংদী স্বাস্থ্য প্রশাসনকে চাপও দিয়েছেন। নরসিংদী স্বাস্থ্য প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্বাচিপের নেতাদের ভয়ে ডা. হারুন অর রশিদকে কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না। তার ভয়ে হাসপাতালের সাধারণ ডাক্তাররাও সবসময় কম্পমান থাকেন। এই অবস্থায় নরসিংদীর সদর হাসপাতালের শল্য চিকিৎসা বিভাগ অচল প্রায় হয়ে পড়েছে। প্রতি দিন নরসিংদীসহ ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগী এসে ভোর বেলায় তার চেম্বারের সামনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। বেলা ১১ টা বাজলে তার এটেন্ডেন্ট জানিয়ে দেয় স্যার আজ আসবেন না। তখন রোগীদের কষ্টে বুক ভেঙ্গে যায়। রোগীদেরকে এ কথা শুনতে হয় সাপ্তাহে ৩/৪ দিন। শত শত রোগী ভোগান্তির শিকার হয়ে ফিরে যান। হাসপাতালের বেডে শল্য চিকিৎসা বিভাগের যেসব রোগীরা ভর্তি থাকেন তাদেরকেও মারাত্মক দুঃখ কষ্টের শিকার হতে হয়। শল্য বিভাগের চিকিৎসককে প্রতিদিন হাসপাতালের বেডগুলো ভিজিট করতে হয়। রোগীদের প্রাত্যহিক চিকিৎসার আপডেট দিতে হয়। কিন্তু ডা. হারুন অর রশিদ অফিসে না আসায় তারা প্রতিদিন ডাক্তারের সেবা পায় না। ব্যাথায় রোগ যন্ত্রনায় হাসপাতালের বেডে রোগীরা দিনের পর দিন কষ্ট করে চিকিৎসা পায় না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে ভিন্ন বিভাগের ডাক্তার দিয়ে তাদেরকে সেবা দেয়। কিন্তু ভিন্ন বিভাগের ডাক্তাররা শল্য বিভাগের রোগীদের ওষুধ পরিবর্তন বা নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশ দিতে পারেন না। এমনিভাবে দিনের পর দিন শল্য বিভাগের রোগীরা চিকিৎসা বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। চাকরির ভয়ে কথিত বিএমএ নেতা ডা. হারুন অর রশিদকে কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে নরসিংদী সিভিল সার্জন ডা. রাজিয়া সুলতানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিএমএ’র নির্বাচনের জন্য তিনি সময় দিতে পারেননি। এখন থেকে সময় দিবেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়ে তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। তার এটেন্ডেন্ট জানায় স্যার আজ আসেননি। গতকাল শনিবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় শনিবারও তিনি আসেননি। এ ব্যাপারে তার এটেন্ডেন্ট ফারুককে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায় স্যার রবি, সোম ও বুধবার আসেন। বাকি দিন আসেন না। তিনি নরসিংদী থাকেন না। যেদিন আসেন ঢাকা থেকে আসেন।
এরপর হাসাপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সৈয়দ আমিরুল হক শামীমকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি এব্যাপারে মন্তব্য রাজী হননি।
এ ব্যাপারে নরসিংদী বিএমএ নেতা ডা. মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক কমলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডা. হারুন অর রশিদের ব্যাপারে মন্তব্য করতে বিব্রত বোধ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন