মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

দেবীগঞ্জ প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্র আলু বীজ পচে যাওয়ার তদন্ত ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ

| প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নীলফামারী জেলা সংবাদদাতা : দেবীগঞ্জ প্রজনন বীজ উৎপাদন কেন্দ্রে গবেষণা আর দুর্নীতি একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হওয়ায় তদন্ত ধামাচাপা দেয়াসহ প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে প্রজনন কেন্দ্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। জানা যায়, ওই কেন্দ্রে উৎপাদিত কার্ডিনালসহ বিভিন্ন জাতের প্রজনন ও ভিত্তি মানের আলু বীজ ৫৮ টাকা কেজি দরে চলতি মৌসুমে বিক্রির স্বাভাবিক দর ছিল। এ দামে আলু বীজ বিক্রয় না হলে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর ৪০ টাকা দর নির্ধারণ করা হয়।
এ দামেও বীজগুলো বিক্রয় না হওয়ায় ১৩ ডিসেম্বর ২৫ টাকা নতুন দর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বিক্রয় কমিটির সভাপতি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশীষ কুমার সাহা রেজুলেশনে স্বাক্ষর না করায় সর্বশেষ দর ২৫ টাকা দরেও আলু বীজগুলো বিক্রয় করা সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে সাইফুল নামের এক আলুচাষি ১৪ টাকা কেজি দরে প্রজনন কেন্দ্রে রক্ষিত ১৩০ টন আলু বীজ ক্রয়ে রাজি হয়। এ জন্য গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশীষ কুমার সাহা বিক্রয় শিটে স্বাক্ষর না করায় সে সময় আলু বীজ বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। ১৪ টাকা কেজি দরে বিক্রির ব্যাপারে পরিচালক ও মহাপরিচালকের অনুমতি থাকলেও আশীষ কুমার সাহা তার দায়িত্বহীনতা ও ব্যক্তিস্বার্থের কারণে বিক্রয় শিটে স্বাক্ষর করেনি বলে অভিযোগে প্রকাশ। এমনকি ক্রেতাকে তিনি তার ভাড়াটিয়া বাহিনী দিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়েছেন, যাতে তারা সরকারি বীজ ক্রয় না করে। এর ফলে ওই কেন্দ্রের ১৩০ টন বীজ আলু পরবর্তীতে ১ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। এতে সরকারের অর্ধকোটি টাকাসহ সুদূরপ্রসারী ক্ষতি হয়েছে। এ আলু বীজ পচে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মিজানুর রহমান খন্দকার স্বাক্ষরিত একটি আদেশে ১৩০ টন আলু বীজ পচে যাওয়ার কারণ, ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ, প্রকৃত দোষী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ, দায়দায়িত্ব নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে বারি জয়দেবপুর, গাজীপুরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন) ড. শোয়েব হাসানকে প্রধান ও অপর ৩ জনকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যার স্মারক নং-২অ-৭৩০/২০১৫/প্রশাসন/৮৫৪৩, তারিখ ০৮/০১/২০১৭ খ্রি:। এ কমিটি কাজ শুরু করার পর অজ্ঞাত কারণে একই কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত অপর এক আদেশ যার স্মারক নং-২অ-৭৩০/২০১৫/প্রশাসন/১০১৩০, তারিখ-০৬/০২/২০১৭ খ্রি:-এর আদেশে তা বাতিল করা হয় এবং বিধি লংঘন করে একই দিনে ওই কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবেদ আলী যার চাকরির মেয়াদ রয়েছে ৯ মাসের মতো তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সদস্য পরিচালক (কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগ) ড. আ শ ম আনোয়ারুল হককে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি আলু বীজ পচে যাওয়া তদন্ত না করে তদন্ত করবেন ওই কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবেদ আলীর ২০১৩, ২০১৪ ২০১৫ সালের ভ‚মি উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক আলু প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিক সংক্রান্ত কাজের বাস্তবায়ন এবং অফিস উপস্থিতি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়সহ অপরাপর বিষয়সমূহ। এর ফলে চাপা পড়ে যায় আলু বীজ পচে যাওয়ার তদন্ত কার্যক্রম। ওই কেন্দ্রের প্রধান উৎপাদিত শস্য আলু বীজের পচনকে ঘিরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রথমে কমিটি গঠন ও পরবর্তীতে অজ্ঞাত কারণে বাতিল করে দেয়াকে ঘিরে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতে ৩ বছর আগের বাস্তবায়িত কাজের কথিত তদন্তকে ঘিরে। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান ড. আ শ ম আনোয়ারুল হক জানান, আমাদের হাত বাঁধা, আমরা আমাদের নির্ধারিত বিষয়সমূহের বাইরে কোনো কাজ করতে পারব না। তবে প্রজনন কেন্দ্রের অন্য বিষয়গুলো তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন, এর বেশি তারা বলতে রাজি হননি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দেবীগঞ্জ প্রজনন কেন্দ্রের উন্নয়নের চেয়ে কর্মকর্তারা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে বেশি ব্যস্ত রয়েছেন। ওই কেন্দ্রের অনিয়ম-দুর্নীতির একাধিক তদন্ত হলেও তা রয়ে গেছে সেই তিমিরেই। বরাবরের মতো লোক দেখানো তদন্ত শেষ হলেই আবারো বেড়ে যায় কর্মকর্তাদের অনিয়ম আর দুর্নীতি। যেন দেখার কেউ নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন