স্টাফ রিপোর্টার : পৃথিবীর ৭১ শতাংশ পানি হলেও এর মাত্র ৩ শতাংশ পানি খাবার যোগ্য। যার বিরাট অংশই অ্যান্টার্কটিকা ও গ্রিনল্যান্ডে বরফ হিসেবে অথবা মাটির নিচে রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ পানি মানুষের ব্যবহার উপযোগী। এসব তথ্য উঠে এসেছে জার্মানির পোটসড্যাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের এক প্রতিবেদনে।
এদিকে বুড়িগঙ্গার পানির মান ঠিক রাখতে ইতালির ভেনিস ও সিঙ্গাপুরের কালং নদীর আদলে গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা। শিগগিরই এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
জার্মানির ওই গবেষণা প্রতিবেদন বলা হয়েছে, বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে রয়েছে বিশ্বের ১০০ কোটি মানুষ। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এ তালিকায় আরও ৫০ কোটি মানুষ যোগ হবে। বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট বাড়ছে। অন্যদিকে, প্রায় ১৫০ কোটিরও বেশি মানুষের জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থাই নেই। এনভায়রমেন্টাল রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বৈশ্বিক তাপমাত্রা গড়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে নতুন করে আরও প্রায় ৪৮ কোটি ৬০ লাখ মানুষ তীব্র পানি সঙ্কটে পড়বে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ, মৌলিক ও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য চাহিদার জন্য প্রতিজনে দৈনিক ২০ লিটারের মতো বিশুদ্ধ পানি প্রয়োজন হয়। পানি সঙ্কট মোকাবিলা ও পানির যোগান নিশ্চিত করতে সব প্রকার পানির উৎস নদী নালা, খাল-বিল, পুকুর ও জলাশয়ের দূষণ প্রতিরোধ ও ভরাট বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপমেন্টের (সেরিদ) জুনিয়র রিসার্চ ফেলো হেলাল উদ্দিন বলেন, রাজধানী ঢাকায় বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যা ছিল প্রাকৃতিক পানির উৎস। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, স্থাপনা নির্মাণ, কলকারখানা ও শিল্প বর্জ্য ফেলার কারণে এসব নদীর পানি চরম মাত্রায় দূষিত এবং ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নদীগুলোতে দূষণের মাত্রা এমন স্থানে পৌঁছেছে যে, মাছসহ জলজ প্রাণী খুঁজে পাওয়া অসম্ভব।
পরিবেশবিদরা আশঙ্কা করছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে এবং উত্তরণের উপায় না বের করতে পারলে আগামী ১৯ বছর পর পানির অভাবে আমাদের এই ঢাকা ছাড়তে হবে। তাই পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলো যেমনÑ নদী, খাল ও জলাশয়গুলো সংরক্ষণ এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহৃত পানির পুনর্ব্যবহার জরুরি।
ঢাকার আশপাশের নদীগুলো দূষিত হওয়ায় বর্তমানে ঢাকা ওয়াসা মুন্সিগঞ্জের পদ্মা নদীর লৌহজং উপজেলার জশলদিয়া এলাকা থেকে পানি এনে দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহের লক্ষ্যে শোধনাগার স্থাপন করছে। ২০১২ সালের ২৫ অক্টোবর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য চীনের সঙ্গে চুক্তি করেছিল সরকার। কিন্তু অর্থের কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। এর বাইরে মেঘনা থেকে ১০০ কোটি লিটার পানি আনার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। মেঘনার এই পানি আসবে সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার দিয়ে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
এদিকে বুড়িগঙ্গাকে রক্ষা করতে ‘ঢাকা ইনটিগ্রেটেড আরবান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড স্মার্ট সিটি ম্যানেজমেন্ট’ নামে একটি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বুড়িগঙ্গার পানির মান ঠিক রাখা। পানির মান ঠিক রাখতে কয়েকটি পানি শোধনাগার (রিসাইকেল পন্ড) থাকবে। রাজধানীর ১৮টি সুয়ারেজ পাইপের পানি ফিল্টারিং করতে ১৮টি পরিশোধন প্ল্যান্ট বসানো হবে। ১৮টি সুয়ারেজ লাইনের পানি বুড়িগঙ্গায় পড়ার আগে তা আলাদা চার থেকে পাঁচটি রিসাইকেল পন্ডে রেখে পরিশোধনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ করে বুড়িগঙ্গা নদীতে যাবে। এ প্রকল্পের বাস্তবায়নের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ বছর। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বুড়িগঙ্গার দুই পারে সৌন্দর্যবর্ধনও করা হবে। এ ছাড়া অবকাশ যাপনের জন্য নদীর তীরে থাকবে বিলাসবহুল রিসোর্ট, হাঁটার রাস্তা, পার্কসহ ভাসমান বিনোদন কেন্দ্র ও রেস্তোরাঁ। শিগগিরই এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে।
ডিএসসিসির উদ্যোগে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ মিউনিফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (বিএমডিএফ) আর্থিক সহায়তায় নদীর মূল অবস্থান ঠিক রেখে ইতালির ভেনিস ও সিঙ্গাপুরের কালং নদীর আদলে করা হবে। নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ২০০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। বিশ্বব্যাংক ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বাকি টাকা ডিএসসিসির তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন