আজ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে ভোট চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। ইতোমধ্যেই নগরির ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৩টি ভোটকেন্দ্রের ৬২৮টি বুথের জন্য ভোটার বক্স পৌঁছে গেছে। এছাড়া নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, নির্বিঘœ ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশন পুরো নগরী নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিয়েছে। নিযুক্ত করা হয়েছে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার-ভিডিপিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৫ সহস্রাধিক সদস্য। এদিকে নির্বাচনে নির্বাচনী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের তৎপরতা গোপনে পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ২৭ জন পর্যবেক্ষক বর্তমানে কুমিল্লায় রয়েছে বলে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে। ইসি সচিব একটি দৈনিককে জানিয়েছেন, নিজস্ব পর্যবেক্ষকদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে ইসি। সিটিতে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে কমিশনের কর্মকর্তাকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এদিকে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু তার নেতাকর্মীদের হয়রানি ও নির্বাচনী এলাকায় সরকারদলীয় নেতাদের প্রভাবের অভিযোগ তুলে গত মঙ্গলবার আবারও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা বলেছেন, এখানে নির্বাচনের সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে।
বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীনে একটি বড় ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সে কারণে আগামী সংসদ নির্বাচনের বিবেচনায় এই নির্বাচন বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। সঙ্গতভাবেই নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন কেমন হয় তা দেখার জন্য কেবল দেশবাসী নয়, গোটা বিশ্ব আগ্রহী হয়ে উঠেছে। দলীয় প্রতীকের নির্বাচন হওয়ায় ভবিষ্যৎ রাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নির্বাচনটি কার্যত নৌকা বনাম ধানের শীষের যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দু’দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সাধারণ ভোটারদের সাথে গণসংযোগ করেছেন। ইতোমধ্যে বিএনপি নেতা-কর্মীদের হয়রানির অভিযোগে একজন ওসিকেও প্রত্যাহার করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষে মাঠে কাজ করা নেতাকর্মী, এজেন্ট ও সমর্থকদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করার অভিযোগ করেছে বিএনপি। এই নির্বাচনের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, নির্বাচনের মাঠে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে সরকারদলীয়রা পুলিশকে ব্যবহার করছে। এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে সাক্ষাতের পর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে সজ্জন ব্যক্তি বলে উল্লেখ করেছেন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে সিইসি বিএনপির নানা অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন বলে রিজভী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
প্রকৃত বিবেচনাতেই কুমিল্লার সিটি করপোরেশনের নির্বাচন বর্তমান সিইসি ও নির্বাচন কমিশনের জন্য এক ধরনের অগ্নিপরীক্ষা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার দায়িত্ব গ্রহণের পরই জানিয়েছেন, নির্বাচনের ওপর সকলের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সম্ভাব্য সবকিছু করবেন। ইতঃপূর্বে যে দু-একটি নির্বাচন হয়েছে সেখানে তার এই বক্তব্যের যথাযথ প্রতিফলন ঘটেনি। তবে এবার নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি একটু বেশি বলেই মনে হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার বলে কিছু ছিল না। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হয়েছে তা নিয়ে আর নতুন করে আলোচনা করে লাভ নেই। নির্বাচনে হার-জিত রয়েছে। সেটি বড়কথা নয়। বড়কথা হচ্ছে, নির্বাচনটি নিরপেক্ষ হলো কি না তা নিশ্চিত করা। জনগণ নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছতে পারছে কি না এবং নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারছে কি না সেটিও বিবেচ্য বিষয়। সেই সাথে যারা ভোট দেবেন তাদের ভোটের ভিত্তিতেই ফলাফল ঘোষিত করার নিশ্চয়তা থাকা অত্যন্ত জরুরি। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকেরই ফলাফল মেনে নেয়ার মনোভাব থাকা অপরিহার্য। নির্বাচনে হার-জিত থাকবে তার অর্র্থ এই নয় যে, ফলাফল বিপক্ষে গেলেই তার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে হবে। এখানে অবশ্যই এটা উল্লেখ করা দরকার, নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে প্রতিদ্ব›দ্বীদের মধ্যে সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক চেতনা অপরিহার্য। নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করার দায়িত্ব কেবল নির্বাচন কমিশনের একার নয়, যারা নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় রয়েছেন তাদের আন্তরিকতা ছাড়া এটা কোনোমতেই সম্ভব নয়। ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারে সে জন্য অবশ্যই প্রার্থীদের সতর্ক থাকা জরুরি। ভোট রক্ষার আন্দোলন সক্রিয় রাখা গেলে এবং সেই সাথে নির্বাচন কমিশন আন্তরিক হলে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ কোনো সমস্যা নয়। আলোচ্য নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে পারার মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের সাফল্য নির্ভর করে। জনগণ অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন