মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

বাড়েনি বেতন, কমেছে বেতনভুক্ত ক্রিকেটারের সংখ্যা

প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটাররা অবহেলিত

| প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী : কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের বেতন, বোনাস, ম্যাচ ফি বেড়েছে অপ্রত্যাশিতভাবে। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে ম্যাচ খেলার বিপরীতে ম্যাচ ফিও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে ৫০ শতাংশ। তবে বাড়েনি বিসিবির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের বেতন। ২০১২ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের চুক্তির আওতায় এনে তিন গ্রেডে নির্ধারিত হয়েছিল। আশ্চর্য হলেও সত্য, ৫ বছরে বিসিবি’র কেন্দ্রিয় চুক্তিতে থাকা জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের বেতন ৩গুন বেড়ে গেলেও এই ৫ বছরে প্রথম শ্রেণির চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের বেতন বাড়েনি এক কানাকড়িও। ৫ বছর আগে ‘এ’ গ্রেডের জন্য ২৫ হাজার, ‘বি’ গ্রেডের জন্য ২০ হাজার এবং ‘সি’ গ্রেডের জন্য ১৫ হাজার টাকা ধার্যকৃত বেতন এখনো অপরিবর্তিত থেকেছে! বাড়েনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারের সংখ্যা।
২০১২ সালে কেন্দ্রীয় চুক্তির আওতায় থাকা ১৫ ক্রিকেটারের পাশে প্রথম শ্রেণির ১০৫ ক্রিকেটারকে বেতনের আওতায় এনে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন বিসিবির সাবেক সভাপতি আ.হ.ম মোস্তফা কামাল (লোটাস কামাল)। সংখ্যাটি পর্যায়ক্রমে বর্ধিত করার ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। তবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আসর সংখ্যা বেড়ে গেলেও বাড়েনি চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারের সংখ্যা। বরং প্রতি বছর চুক্তিবদ্ধ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারের সংখ্যা কমছে। ১ বছরের চুক্তিতে গত বছর যেখানে সংখ্যাটি নেমে এসেছিল ৮৪ তে। এবার তা ৭৭এ নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেছে বিসিবি’র টুর্নামেন্ট কমিটি! বিসিবি’র কেন্দ্রীয় চুক্তিতে এই প্রথম মেহেদী হাসান মিরাজ এবং কামরুল ইসলাম রাব্বীর নাম থাকায় সংখ্যাটি দাঁড়াচ্ছে ৭৫এ! বিসিবি’র সর্বশেষ সভায় টুর্নামেন্ট কমিটি এ প্রস্তাবই দিয়েছে।
২০১৭ সালের জন্য প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যে ৭৭ ক্রিকেটারকে বেতনের আওতায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টুর্নামেন্ট কমিটি, ওই তালিকায় নেই বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট এবং প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের দুই নায়ক এনামুল জুনিয়র এবং নাফিস ইকবাল। নেই খুলনা বিভাগের অপরিহার্য অল পেস অলরাউন্ডার জিয়াউর রহমান। ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেকে দ্যুতি ছড়ানো (৬ উইকেট) বাঁ হাতি স্পিনার ইলিয়াস সানি, এবং বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সবার আগে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরিয়ান বরিশালের উইকেট কিপার কাম ব্যাটসম্যান শাহিন হোসেন। বয়স তাদের কারো ৩২ ছাড়ায়নি। এখনো তরুণদের সঙ্গে খেলছেন পাল্লা দিয়ে। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অসামান্য সেঞ্চুরিতে ঢাকা টেস্ট বাঁচিয়ে সিরিজ জয়ে বাংলাদেশকে উৎসবে ভাসানো নাফিস ইকবাল চলমান প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগের প্রথম ম্যাচে আবাহনীর বিপক্ষে ৭৮ রানের ছন্দময় ইনিংস দিয়েছেন উপহার। ১২০ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ১০ সেঞ্চুরি, ৩১ ফিফটিতে ৬২০২ রানে ধারাবাহিক পারফর্ম করেছেন, জাতীয় লীগের সর্বশেষ আসরে ২ ম্যাচে করেছেন ১৮০ রান (গড় ৪৫.০০) তারপরও এ বছর বেতনের আওতায় রাখা হয়নি তাকে। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২ টেস্টের সিরিজে ১৮ উইকেটে সর্বকনিষ্ঠ সফল বোলারের বিশ্বরেকর্ডই শুধু করেননি, ১০৯টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৪২২ উইকেটে বোলিং ধারাবাহিকতার দৃস্টান্ত স্থাপন করা এই বাঁ হাতি স্পিনার এখনো সব ভার্সনের ঘরোয়া ক্রিকেটে অপরিহার্যতার স্বাক্ষর রেখেও টুর্নামেন্ট কমিটির চোখে অপাংক্তেয় সিলেট বিভাগের গর্ব এনামুল জুনিয়র! ইনজুরির কারণে গত বছর জাতীয় লীগে একটির বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি, সেটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার। ঢাকা মেট্রোর বাঁ হাতি স্পিনার ইলিয়াস সানি ৯৪টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৩৩৭ উইকেট পেয়েও নির্বাচকদের বিবেচনায় চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের তালিকায় পাননি স্থান।
২০১০ সালে ৫ উইকেটে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম উঠিয়ে পেস বোলার শাহাদত হোসেন রাজিব এখনো দুর্দান্ত গতিতে ঘরোয়া ক্রিকেটে এগিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগের সর্বশেষ ২ ইনিংসে পেয়েছেন ৪ উইকেট। তারপরও ৯৭ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ২৩২ উইকেটের মূল্যায়ন পাননি এই পেস বোলার। ১২২টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৩৮১৫ রানের পাশে ৩০৫টি ডিসমিসালে ধারাবাহিকতার স্বাক্ষর রেখে এখন ব্রাত্য জাতীয় লীগে বরিশাল বিভাগের কান্ডারি শাহিন হোসেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ইনিংসে ১৫ ছক্কায় বিস্ময়ের জন্ম দেয়া জিয়াউর রহমানের অল রাউন্ড পারফরমেন্স (৩৪৫৬ রানও ১৮৫ উইকেট) বিবেচনায় আনা হয়নি !
তবে চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের সংখ্যা কমিয়ে ম্যাচ ফি বাড়িয়ে ঘরোয়া প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটকে আকর্ষণীয় করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বিসিবি পরিচালক এবং ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান ‘এমন এমন ক্রিকেটাররা এখন জাতীয় লীগে খেলছে, যারা নিজেরাও স্বপ্ন দেখেন না। তাই তালিকাটা ছোট করাই উত্তম। আমরা চাচ্ছি ম্যাচ ফি বাড়িয়ে জাতীয় লীগকে আকর্ষণীয় করতে।’
৩০ পেরিয়ে গেছে বলে বাদ দেয়া হয়েছে নাফিস, ইলিয়াস সানি, এনামুল জুনিয়র, শাহিন, জিয়াকে। কিন্তু গতবার জাতীয় লীগে খুলনার পারফরমার মেহেদী হাসান (৬ ম্যাচে ২২৭ রান), হাসানুজ্জামান (৩ ম্যাচে ১৭৬ রান), রাজশাহীর মাইশুকুর রহমান (৬ ম্যাচে ৩৮৫) ও মিজানুর (৫ ম্যাচে ২৯১), রংপুরের সায়মন আহমেদ (৫ ম্যাচে ২৭৭), মোহাম্মদ সাদ্দাম (৫ ম্যাচে ২০ উইকেট),সিলেটের রোমান (৫ ম্যাচে ২৭৭) এবং সম্ভাবনাময়ী পেস বোলার এবাদত হোসেনকেও তো বিবেচনা করা যেতো! নতুন চুক্তিতে এই সব ক্রিকেটাররাও যে থেকে যাচ্ছে উপেক্ষিত।
২০১৭ সালের জন্য প্রস্তাবিত বেতনভুক্ত প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটারদের তালিকা
রাজশাহী বিভাগ : জহুরুল ইসলাম অমি, ফরহাদ রেজা, ফরহাদ হোসেন, জুনায়েদ সিদ্দীাক, সাকলায়েন সজীব, সানজামুল ইসলাম, মোক্তার আলী, দেলোয়ার হোসেন, নাজমুল হোসেন শান্ত, হামিদুল ইসলাম হিমেল।
রংপুর বিভাগ : সোহরাওয়ার্দী শুভ, সাজেদুল ইসলাম, নাইম ইসলাম, আরিফুল হক, লিটন দাস, তানবীর হায়দার, ধীমান ঘোষ, শুভাশিষ রায়, নাসির হোসেন, মাহামুদুল হাসান লিমন, আলাউদ্দিন বাবু, স›দ্বীপ সাহা দ্বীপ।
সিলেট বিভাগ : ইমতিয়াজ হোসেন তান্না, অলক কাপালী, রাজিন সালেহ, আবুল হাসান রাজু, আবু জায়েদ চৌধুরী রাহি, রাহাতুল ফেরদৌস, জাকির হাসান, সাহনুর রহমান।
বরিশাল বিভাগ : কামরুল ইসলাম রাব্বী, শাহরিয়ার নাফিস, সোহাগ গাজী,মুনীর হোসেন, ফজলে রাব্বী,সালমান হোসেন, তৌহিদুল ইসলাম রাসেল,আল আমিন, মোসাদ্দেক হোসেন, সালেহ আহমেদ শাওন, আবু সায়েম চৌধুরী।

চট্টগ্রাম বিভাগ : তাসামুল হক,ইয়াসির আলী রাব্বী, ইরফান শুকুর, সাইফউদ্দিন, ইফতেখার সাজ্জাদ রনি,সাজ্জাদুল হক রিপন, জসিমউদ্দিন, মাহাবুবুল করিম।
ঢাকা মেট্রো : মার্শাল আইয়ুব, সামছুর রহমান শুভ, মেহেদী মারুফ, আরাফাত সানি, সাদমান ইসলাম অনিক,আসিফ আহমেদ রাতুল, মোহাম্মদ শহীদ, আবু হায়দার রনি,জাবিদ হোসেন, সৈকত আলী।
ঢাকা বিভাগ : মোহাম্মদ শরীফ, শুভাগতহোম চৌধুরী, রনি তালুকদার, আবদুল মজিদ, নাদিফ চৌধুরী, মোশারফ হোসেন রুবেল, তাইবুর রহমান, নাজমুল ইসলাম অপু, সাইফ হাসান, রকিবুল হাসান।
খুলনা বিভাগ : আবদুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ মিঠুন, তুষার ইমরান, নূরুল হাসান সোহান, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাহিদুল ইসলাম, এনামুল হক বিজয়, আল আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন