শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

মাটি খননে ধসে পড়ছে কৃষকদের ঘরবাড়ি

| প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো: হেলাল উদ্দিন নিকলী (কিশোরগঞ্জ) থেকে : কদিন আগে অকাল বন্যায় ফসল হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে এ এলাকার কৃষক। এবার সড়ক নির্মাণে অপরিকল্পিত মাটি খোঁড়ায় বাড়িঘর হারাতে বসেছেন তারা। কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার নানশ্রী সিংগুয়ারপাড় গ্রাম। এ গ্রামের সামনে দিয়ে যাচ্ছে নিকলী টু করিমগঞ্জ ভায়া মজলিশপুর ডিসি সড়ক। নির্মাণাধীন নতুন সড়কে বালি ফেলার জন্য সড়কের জায়গায় এখন চলছে স্ক্যাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে খননের কাজ।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, সড়কের আশপাশের মাটি ধ্বস ঠেকানোর ব্যবস্থা না করে এবং দুই পাশে কোনো জায়গা না রেখে এলজিইডির লোকজন অপরিকল্পিতভাবে খনন কাজ করায় তাদের বাড়িঘর এখন ভাঙছে।
শুক্রবার সরেজমিনে গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থানে সড়কঘেঁষা বাড়িঘর খননকৃত গর্তে গিয়ে পড়ছে। কোনো কোনো বাড়িঘর একেবারে ধ্বসে গর্তে গিয়ে পড়েছে। এর মধ্যে পাকা বাড়িঘরও রয়েছে। অনেক বাড়িঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেকেই আবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
গ্রামের লোকজন জানান, সড়ক নির্মাণের জন্য প্রায় এক মাস আগে এ এলাকায় খনন কাজ শুরু হয়। কিন্তু এখনও খননকৃত স্থানে বালি ভরাট শুরু হয়নি। এ ছাড়া খনন স্থানের আশপাশের মাটির ধ্বস ঠেকানোর ব্যবস্থা করে খনন কাজ করার কথা থাকলেও সড়ক নির্মাণের সাথে লোকজন সেটা করেনি। এর জন্যেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
গ্রামের কৃষক মো: দীন ইসলাম জানান, জমিজমা করে তিন বছর আগে প্রায় আট লাখ টাকা খরচ করে একটি পাকা ঘর করেছিলেন তিনি। সড়ক নির্মাণের সাথে যুক্ত লোকজনের খামখেয়ালির কারণে তার ঘরটি ধ্বসে পড়েছে। দীন ইসলাম বলেন, খনন কাজ শুরুর সময় আমি তাদের (সড়ক নির্মাণ সংশ্লিষ্ট লোকদের) বলেছিলাম যেভাবে মাটি তুলছেন এভাবে তো আমার বাড়ি ধ্বসে পড়তে পারে। তখন সেখানে উপস্থিত এক ইঞ্জিনিয়ার আমাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন বাড়িঘরের কোনো সমস্যা হবে না। তারপরও আমার মন মানছিল না। আমি আমার বাড়ির লাগোয়া ফুটখানেক জায়গা ছেড়ে দিয়ে এর পরিবর্তে রাস্তার পশ্চিম পাশে সংলগ্ন আমার জায়গা খনন কাজে ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়েছিলাম। তারা আমাকে আশ্বাস দিয়েছিল সেভাবেই খনন করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা তাদের ইচ্ছে মতো খনন কাজ করায় আমার সর্বনাশ হয়ে গেল।
গ্রামের বিল্লাল হোসেন বলেন, আমাদের গ্রামের সামনে দিয়া সড়ক হইতাছে এইডা আমরাও চাই। এর জন্য আমরা খুশিও হইছিলাম। কিন্তু সড়ক নির্মাণ সংশ্লিষ্ট লোকদের খামখেয়ালি ও অপরিকল্পিত খননে আমাদের খুশি এখন শোকে পরিণত হইছে। ভাঙছে আমাদের ঘরবাড়ি। এ গ্রামের অন্তত ২০টি বাড়ি এখন হুমকির মুখে।
সিংগুয়ারপাড় গ্রামের ছফির উদ্দিন জানান, আমরা কৃষক মানুষ। আমরার কথা কেডা ভাবে। কয়দিন আগে ধান হারাইছি। এহন রাস্তার ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারদের গাফিলতির কারণে আমরার বাড়িঘর হারানোর অবস্থা অইতাছে।
নাানশ্রী গ্রামের বাসিন্দা ও কারপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাকি আমান খান বলেন, এই রাস্তাটি হলে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার দুয়ার খোলে যাবে। তবে এ এলাকায় বাড়িঘর ঘেঁষে যেহেতু সড়ক যাচ্ছে তাই এখানে মাটি ধ্বস রোধের ব্যস্থা করে খনন কাজ করা উচিৎ ছিলো। দ্বিতীয়ত এই রকম একটি জনবহুল এলাকায় লোক দিয়ে ধীরে ধীরে মাটি তোলা উচিৎ ছিলো। কিন্তু তা না করায় এই ক্ষতি হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে নিকলী টু করিমগঞ্জ ভায়া মজলিশপুর ডিসি সড়কের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার সুর্যদেব বর্মণ বলেন, আমরা আমাদের এলটমেন্ট অনুযায়িই খনন কাজ করেছি। জনগণের ক্ষতি হোক এটা চাইনি। বৃষ্টির কারণে মূলত কিছু বাড়ি ধ্বসে গেছে। তাছাড়া কিছু যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকায় কয়েকদিন আমাদের কাজ থেমে ছিল। এখন দ্রæত আমরা খননকৃত জায়গায় বালি ভরাটের কাজ শুরু করবো। তখন বাড়িঘরের আর ক্ষতি হবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন