সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ফের পাহাড় ধস, ফের প্রাণহানি

| প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গত ১২ ও ১৩ জুন রাঙ্গুনিয়া, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে পাহাড় ধসে দেড় শতাধিক মানুষের করুণ মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতে আবারও পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটল। গত বৃহস্পতিবার রাত ৩ টার দিকে সীতাকুÐ উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জঙ্গল সলিমপুরের ছিন্নমূল এলাকায় মাটিচাপায় নিহত হয়েছে একই পরিবারের পাঁচ সদস্য। আহত হয়েছে চারজন। এ নিয়ে এ বছর পাহাড় ধসে নিহত হলো ১৬৫ জন। বিশেষজ্ঞরা পাহাড় ধসে মানুষের মৃত্যুকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের গাফিলতি এবং বসবাসকারিদের অসচেতনতাকে দায়ী করছেন। পাহাড় রক্ষা, সেখানে মানুষের বসবাস নিরুৎসাহিত করা এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে একের পর এক পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। এর প্রাকৃতিক কারণ যেমন রয়েছে, তেমনি মনুষ্য সৃষ্ট অনাচারকেও দায়ী করা হচ্ছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, পাহাড় ধসে মর্মান্তিক মৃত্যুর পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। নামকাওয়াস্তে মাইকিং করে দায় সারছে। এসব মাইকিং পাহাড়ে বসবাসকারিদের খুব একটা আলোড়িত করতে পারছে না। তারা ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করছে।
প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ পাহাড়। এর কোনোরূপ ক্ষতি হলে বিপর্যয় অনিবার্য। পাহাড় রক্ষা এবং পরিচর্যার ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটলে তা ভারসাম্য হারাবে এটাই স্বাভাবিক। আমাদের যে পার্বত্য অঞ্চল রয়েছে সেখানে দশকের পর দশক ধরে চলছে ধ্বংসযজ্ঞ। বসতি স্থাপন, গাছ কেটে উজাড় করা থেকে শুরু করে হেন কোনো ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম নেই, যা চলছে না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বরাবরই উদাসীন। প্রশাসন যেমন নির্লিপ্ত, তেমনি অবৈধভাবে পাহাড় দখলকারী প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কেউ টুঁ শব্দ করছে না। বছরের পর বছর ধরে বিনাশী কর্ম অব্যাহত থাকায় পাহাড় ভারসাম্য হারিয়ে ধসে যাচ্ছে। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মানবিক বিপর্যয়ও ঘটছে। পাহাড় ধসের ভূতাত্তি¡ক তিনটি কারণের মধ্যে রয়েছে, পাহাড়ের গঠন, বালুর বিন্যাস এবং পাহাড়ের ঢালুতা। ভারী বর্ষণ হলে পাহাড়ের ফাটল দিয়ে ভেতরে পানি প্রবেশ করে। এতে পাহাড়ের বালু গলে ভারি হয়ে যায় এবং ধসের মতো ঘটনা ঘটে। কাছাকাছি সময়ে দুটি নি¤œচাপ সৃষ্টির ফলে বৃষ্টিপাতের হার অনেক বেড়েছে। এ হার আরও বাড়তে পারে। ফলে আগস্ট পর্যন্ত পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। কি কি কারণে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটতে পারে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অজানা থাকার কথা নয়। আমরা দেখেছি, পাবর্ত্য অঞ্চলে এ পর্যন্ত যে ধসের ঘটনা ও প্রাণহানি হয়েছে, তার অতি সাম্প্রতিক নজির থাকার পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হুশ হয়নি। মাইকিং করে সতর্ক করাকেই তারা বড় কাজ হিসেবে ধরে নিয়েছে। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের সরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেনি। ফলে ভারী বর্ষণ হলে পাহাড় ধসের আরও ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। ২০০৭ সালে ভয়াবহ পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সমস্যা থেকে উত্তরণে কমিটি ৩৬টি সুপারিশ করে। এতে পাহাড় ধসের ২৮টি কারণ চিহ্নিত করা হয়। বিভিন্ন সংস্থার জটিলতা ও সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছা ও সমন্বয়ের অভাবে সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। এগুলো বাস্তবায়ন হলে নিশ্চয়ই পাহাড় ধসে এত মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটত না। এ কথাও বলতে হয়, পাহাড় যারা কাটে, দখল করে এবং বসতি স্থাপন করে কোটি কোটি টাকা ভাড়া আদায় করে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা কমতো। বলা বাহুল্য, এসব অপকর্মের সাথে প্রভাবশালী মহল ও রাজনৈতিক শক্তিধর ব্যক্তিরা জড়িত। প্রশাসনের একশ্রেণীর লোকজনের প্রশ্রয়ও রয়েছে।
পাহাড় ধস ঠেকাতে সবার আগে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অপরিহার্য। পাহাড় কাটা, বসতি স্থাপন করা যে কোনো উপায়ে বন্ধ করতে হবে। পাহাড়ি এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা যায় কিনা, তা বিশেষভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। পাহাড়ের স্থিতি স্থাপনে মাটি ধরে রাখতে পারে এমন গাছপালা রোপন করতে হবে। ভারী বৃষ্টিপাতে পানি যাতে দ্রæত নেমে যেতে পারে এ ব্যবস্থা করতে হবে। পাহাড়ে যেসব বসতি স্থাপিত হয়েছে, তা সরিয়ে অন্যত্র পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। পাহাড় ও এর গাছপালা কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। ভারী বৃষ্টিপাতের শুরুতেই পাহাড়ে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে জোর করে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে হবে। পাহাড় ধসের যেসব কারণ চিহ্নিত ও সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন