শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

অবশেষে ছড়ালো সৌরভ

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

‘দুঃখিত মুমিনুল। বাকরুদ্ধ! জানিনা এমন কোনো শব্দ আছে কিনা যা মেধাবী এবং পরিশ্রমী ছেলেটিকে সান্ত¡না দিতে পারে। অবশ্য আমার ক্যারিয়ারেও আমি অনেক অবিচারের সাক্ষী হয়েছি। তবে মুমিনুলের সাথে যা হয়েছে সেটি সবচেয়ে ভয়ানক।’ বুলবুল আরো লিখেন, ‘আর কতদিন আমরা এভাবে কুঁড়ি প্রতিভা ধ্বংস করবো, যখন তারা প্রস্ফুটিত হয়ে সৌরভ ছড়ানোর অপেক্ষায় থাকে অথচ তাদের হত্যা করা হয়?’ গতকাল নিজের ফেসবুক পেইজে দেয়া সাবেক অধিনায়ক, টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুলের পোস্ট।
‘টেস্টে মুমিনুল বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যন। ওকে মিস করবো’- বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের উপলব্ধি। এমনই হাজারো পোস্ট, ছবি আর পরিসংখ্যানে গত ২৪টা ঘন্টা ছেয়ে ছিল বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। শুধু তাই নয়, অস্ট্রেলিয়ার বিপেক্ষে প্রথম টেস্টের দল থেকে মুমিনুল হককে বাদ দেয়ার পর থেকেই প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, ফেসবুকসহ সর্বত্রই একই আলোচনা ‘কেন মুমিনুলকে বাদ দেয়া হলো’! ২২ টেস্টে যার গড় ৪৬.৮৮, রান ১৬৮৮ এবং সেঞ্চুরি ৪টি, সর্বোচ্চ ১৮১ এবং হাফসেঞ্চুরি ১১টি। যা আবার টানা ১১ টেস্টে! পরিসংখ্যান বলে দেশ সেরা টেস্ট ক্রিকেটার মুমিনুল।
দল নির্বাচন করতে গিয়ে মুমিনুলকে বাদ দেয়ার পক্ষে যে সব যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন প্রধান নির্বাচক নান্নু ও কোচ হাতুরুসিংহে, সেসবে আস্থা পায়নি দেশবাসী। তাই সমালোচনার ঝড় বয়েছে দেশব্যাপী। আর সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য নির্বাচক প্যানেলকে আড়াল করে তুলোধুনো করা হচ্ছে হাতুরুসিংহেকে। সবাই বলেছেন ‘গুডবুকে’ নেই বলে কোচ ছেটে ফেলেছেন মুমিনুলকে।
এই বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানকে বাদ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই দলে ফিরলেন মুমিনুল। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেনের চোখের সংক্রমণ না সারায় বাদ দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দলে ফেরানো হলো তাঁকে।
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্য সবচেয়ে বেশি ব্যাটিং গড় মুমিনুলের। কিন্তু দুটি টেস্টে খারাপ করার কারণে তাঁকে দল থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল। গত মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে প্রথম টেস্টে খেললেও দ্বিতীয় টেস্টে একাদশের বাইরে রাখা হয় তাঁকে। তবে ২০১৩ সালে টেস্ট অভিষেকের পর গতকালই প্রথম জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছিলেন তিনি। তবে মোসাদ্দেকের চোখের সমস্যা সেটি হতে দিল না। মুমিনুলকে দলে ফিরিয়ে ঝড়টা আপাতত থামিয়ে দিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান।
মুমিনুল কেন দলে নেই---এ নিয়ে চারদিক তোলপাড় হওয়ায় গতকাল বিকেলে নির্বাচক ও বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে এক সভায় বসেছিলেন বিসিবি সভাপতি। মুমিনুলের অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে সেখানেই। তবে স্কোয়াড ১৪ জনেরই থাকছে। মুমিনুল সুযোগ পাচ্ছেন চোখের সংক্রমণে আক্রান্ত মোসাদ্দেক হোসেনের জায়গায়। মুমিনুলকে দলে নেওয়া প্রসঙ্গে নাজমুল বললেন, ‘মুমিনুল দলে আসছে, সৈকত (মোসাদ্দেক) খেলছে না। ওর চোখের সমস্যা আছে। এখনো সে সেরে ওঠেনি। এমন একটা সিরিজের আগে এই ঝুঁকি আমরা কেন নেব? শেষ মুহূর্তে ও (মোসাদ্দেক) যদি না খেলতে পারে, তখন কী হবে?’
তবে শুরুতেই মুমিনুলকে দলের বাইরে রাখাটা দুঃখজনক মনে করছেন বিসিবি সভাপতি, ‘সে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান, তাতে সন্দেহ নেই। তাকে যখন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি থেকে বাদ দিলাম, তখন চিন্তা করেছিলাম ও শুধু টেস্টে মনোযোগ দেবে। কিন্তু সে যদি টেস্ট দলেই না থাকে, তাতে খারাপ লাগবেই। মুমিনুল বাদ পড়ার মতো খেলোয়াড় হতে পারে না। তাকে নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। সে দেশের সম্পদ। ওকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন।’
প্রধান নির্বাবচক মিনহাজুল আবেদীনকে আগের দিনই মনে করিয়ে দেয়া হয়েছিল ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের কথা। যেবার তাকে দলে না রাখা নিয়ে সমালোচলার পর ঠাঁই মেলে নান্নুরও। কাকতালীয় হলেও সৌরভের (মুমিনুল) বেলায়ও তাই হলো। এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচকের বক্তব্য, ‘আমরা আগেই বলেছিলাম যখন যাকে দরকার লাগবে তাকেই দলে নেয়া হবে। মোসাদ্দেকের ইনজুরির কারনেই মুমিনুলকে দলে নেয়া সম্ভব হয়েছে।’
আগেও সৌরভ ছাড়িয়েছেন ব্যাট হাতে, এবার হয়তো চ্যালেঞ্জটা আরেকটু বেড়ে গেল। সৌরভ কি পারবেন আস্থার প্রতিদান দিতে?
তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, নাসির হোসেন, মেহেদী মিরাজ, সাব্বির রহমান, মুস্তাফিজুর রহমান, লিটন দাস, শফিউল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ এবং তাইজুল ইসলাম।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন