শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দখলে

ত্রাণের চাল নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম

হোসাইন আহমদ হেলাল | প্রকাশের সময় : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রতিবেদন দিয়েছে এলিট ফোর্স র‌্যাব। এছাড়া কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদাম থেকে উদ্ধার হওয়া দুর্নীত-অনিয়মের নথিপত্র ও জমা দেয়া হয়েছে দুদকে। গত ১২ সেপ্টেম্বর নথিপত্র হাতে পাওয়ার পর ত্রানের চাল নিয়ে অনিয়ম দুর্নীতি তদন্তে নেমেছে দুদক। এদিকে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিন খাদ্য কর্মকর্তা ও ২১ শ্রমিককে বরখাস্ত করেছে কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদাম কর্র্তৃপক্ষ। বরখাস্তকৃত বলেন, উপ-খাদ্য পরিদর্শক পাপিয়া সুলতানা উপ-খাদ্য পরিদর্শক মোহাম্মদ হোসেন মামুন, উপ-খাদ্য পরিদর্শক নান্নু মিয়া।
অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন যাবত ত্রাণের চালসহ নানা অনিয়ম চলে আসছে কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদামে। এক শ্রেনীর দুর্নীতবাজ কর্মকর্তারা ফ্রী স্টাইলে দুর্নীতি করে চলছেন। এসব দুর্নীতির অর্থ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হাতে যেতো। আর উর্ধ্বেতন কর্তৃপক্ষের সহায়তা পেয়ে কেন্দ্রীয় গুদামের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির লাগাম কেউ ধরে রাখতে পারেনি। অবশেষে র‌্যাবের অভিযানে ধরা পড়লো কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদামের দুর্নীতি অনিয়মের নানা তথ্য। এ বিষয়ে দুদক ও র‌্যাব পৃথক পৃথকভাবে ও কর্মচারীদের বাচাতে তৎপর হয়ে উঠেছেন অনেকেই। এদিকে এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তর দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। গতকাল শুক্রবার একটি তদন্ত কমিটি কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম পরিদর্শন করেছেন।
কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদাম সংরক্ষিত একটি প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্তে¡ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এখানে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সব অনিয়ম অবাধে করে চলছেন এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা পরিবেশ সৃষ্টি করে আসছেন। গুদামের বাউন্ডারী ওয়ালের ভিতরেই ২শ’ টাকা হারে প্রতিদিন ট্রাক ভাড়া দিয়ে আসছে। প্রতিদিন ৪০/৫০টি ট্রাক অবস্থান করতো। সংরক্ষিত এলাকার বহিরাগত ট্রাক থাকা গুদামের জন্য হুমকি বলে অনেকে মনে করছেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা যায়, এসব ট্রাক একদিকে স্ট্যান্ড হিসেবে ভাড়া দেয়া হতো, অন্যদিকে রাতের অন্ধকারে চোরাই চাল নিয়ে চলে যেতো। এভাবে ত্রাণের চালসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর চাল বস্তা কেটে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা লুটপাট করে আসছেন।
উপ-স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানা ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার খাদ্য কর্মকর্তা নান্নু মিয়া মানিক জেলার সিংগাইর উপজেলার খাদ্য কর্মকর্তা হিসেবে থাকলেও তারা দু’জনই কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদামে ডিপুটেশনে চাকুরী করছেন।
এসব অনিয়মের বিষয়ে কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদামের ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবির এর সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ৩ কর্মকর্তা ও ২১ শ্রমিককে বরখাস্ত করা হয়েছে। ট্রাকের গ্যারেজ ভাড়ার বিষয়টি সঠিক নয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাল নিয়ে আসা ট্রাকগুলো র‌্যাব অবস্থানের অনুমতি দেয়া হতো।
এ বিষয়ে ঢাকার একজন জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ গুদাম থেকে ত্রাণের চাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। প্রতি বস্তায় চাল কম ছিল।
র‌্যাব সূত্র জানায় মৃত দরিদ্র মানুষের ত্রাণের চাল নিয়ে এ ধরনের অনিয়ম মেনে নেয়া যায় না, এর সঙ্গে জড়িতদের কোন ছাড় দেয়া হবে না।
গত ৬ সেপ্টেম্বর তেঁজগাও কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদামে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেছে র‌্যাব। ত্রানের জন্য বরাদ্দ ৩০ মে. টন চালের মধ্যে ২০ মে: টন চাল যায়। ঢাকা জেলা আনসারকে ৭০ টন চাল দিয়ে রেজিষ্টারে উল্ল্যেখ করা হয় ২৫৮ মে: টন, এসব অনিয়মের বিষয়ে উপস্থিত খাদ্য কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যা লিখিতভাবে র‌্যাব কর্তৃপক্ষ দুদককে সরবরাহ করেছে। অভিযুক্ত কর্মকর্তারা সরকারী চাকুরীজীবী হওয়ায় তাদেরকে দুদকে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সরওয়ার আলম বলেছেন সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন