সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নিবন্ধ

এশিয়ার আকাশে অ্যারোসল

আব্দুর রহমান লাবু | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ও ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো যৌথভাবে জানিয়েছে, অ্যারোসল আবরনে ঢাকা এশিয়ার আকাশ। প্রকৃতি ও মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই বিষাক্ত গ্যাসীয় স্তর ঘন কালো মেঘের ন্যায় ট্রপোমন্ডল অর্থাৎ ভূ-পৃষ্ঠ হতে ১৬ কিলোমিটার উপরে অবস্থান করছে। স্যাটেলাইট চিত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, অ্যারোসলের সাথে মিশ্রিত রয়েছে নাইট্রেট। মূলতঃ শিল্প-কারখানার নির্গত কার্বন ও জ¦ালানি হিসেবে তেল গ্যাস কাঠ পুড়ানোর কারণে বায়ুমন্ডলে উক্ত ভয়ানক আবরন সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির সাথে যদি নাইট্রেট মিশ্রিত অ্যারোসল পতিত হয়, তবে চরম হুমকিতে পড়বে প্রকৃতি ও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মানুষের জীবনে। ত্বকে ক্যান্সারসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হবে মানবদেহ। এর আগে আমরা দেখেছিলাম, মেক্সিকোসহ কয়েকটি দেশে এসিড বৃষ্টি হতে। আশঙ্কা, উন্নত বিশে^র কার্বন ও অতিরিক্ত জ¦ালানি ব্যবহারে সৃষ্ট অ্যারোসল মেঘ অস্তিত্ব সংকটে ফেলতে পারে মানব সভ্যতাকে।
সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সমভাবে বেড়েছে মানুষের ভোগ বিলাসের চাহিদা। উন্নত দেশগুলো অর্থনৈতিক উচ্চাশা চরিতার্থে প্রতিনিয়ত গড়ে তুলছে নতুন নতুন শিল্প ও কল কারখানা। বিশ^ায়নের যুগে এগুলোই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবেশের জন্য। বিশে^র বিলাস আমাদের সর্বনাশ ঘটাচ্ছে। বায়ুমন্ডলে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে গ্রীন হাউজ এফেক্টের জন্য দায়ী গ্যাসসমূহ। কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড, মিথেন ও ক্লুরো ফ্লুরো কার্বন(সিএফসি) বায়ুতে যোগ হয়ে ক্রমশ তাপমাত্রা বাড়িয়েই চলেছে। ক্রমবর্ধিত তাপের কারণে উভয় মেরুতে অবস্থিত বরফের হিমবাহগুলো গলে গিয়ে বাড়াচ্ছে সমুদ্রের পানির উচ্চতা। কার্বন নিঃসরন না কমালে এক সময় সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গিয়ে উপকূলে অবস্থিত দেশগুলো সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। আবার সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে পৃথিবীকে রক্ষাকারী প্রাণী ও প্রকৃতির বন্ধু ওজোন মন্ডল সিএফসি গ্যাসে হচ্ছে ধ্বংস। আমরা জানি, একটি সিএফসি গ্যাসের অণু ৫’শ টি ওজোন অণুকে ধ্বংস করে বায়ুমন্ডলে ফুটো তৈরি করছে। সেই ফুটো দিয়ে সূর্যের ‘আলট্রা ভায়োলেট রে’ সরাসরি পৃথিবীর ওপর নিপতিত হয়ে একদিকে প্রকৃতির বারোটা বাজাচ্ছে অপরদিকে মানুষের শরীরে দানা বাঁধছে নানা রোগ বালাই। বৈষ্ণিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন এখন উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনোরিওতে প্রথমবারের মত ‘জলবায়ু ও উন্নয়ন’ শীর্ষক বিশ^ ধরিত্রী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিশে^র ১৯৭টি দেশ অংশগ্রহণ করে উক্ত সম্মেলনে। লক্ষ্য ছিল ধরিত্রী বাঁচাতে উন্নত দেশসমূহকে কার্বন নিঃসরন কমাতে রাজি করাতে চুক্তির আওতায় আনা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জন্য জলবায়ু তহবিল গঠন। এজন্য ইউএনএফসিসি অর্থাৎ ইউনাইটেড ন্যাশনস্ ফান্ড ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ নামে একটি দপ্তরও খোলা হয়।
গত ৬ অক্টোবর মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, তারা প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরোতে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে। বলে রাখা ভালো, ২০১৫ সালের জুলাইতে প্যারিসে বিশ^ জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৮৮টি দেশ অংগ্রহণ করে, যার লক্ষ্য ছিল পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি কমিয়ে আনা ও জলবায়ু তহবিলে উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড়ে অঙ্গীকার করা। তার মধ্যে ১০৯টি দেশ গেল বছরের ৪ নভেম্বর প্যারিস চুক্তি কার্যকর করে। কিন্তু চলতি বছর ১৫ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সম্মেলনে আমেরিকা চুক্তি অনুমোদনে অসম্মতি জানায়। আবার ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেবার ৩ দিনের মাথায় বহুল সমর্থিত পরিবেশ চুক্তি কিয়েটো প্রটোকল থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, এরপর জলবায়ু সংক্রান্ত উদ্যোগ ও কার্যক্রমে ভাটার টান পড়তে পারে। বজ্রপাতে এ বছর আমাদের দেশে ২৫৭ জন লোক মারা গেছে। একদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫৭ জনের বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। আর এ জন্য দায়ী অ্যারোসল স্তরসহ জলবায়ুর পরিবর্তন। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে ভয়াবহ ঘূর্নিঝড় বয়ে গেছে। এগুলোর অন্যতম কারণও জলবায়ুর পরিবর্তন ও ভারসাম্যহীন বায়ুমÐল। এমন বাস্তবতায় মানব সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে তেল ও জীবাশ্ম জ¦ালানির ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশবান্ধব জ¦ালানিতে ঝুঁকতে হবে সময় থাকতেই।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও কলামিস্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন