শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে

মোহাম্মদ আবু নোমান | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গতানুগতিক শিক্ষা থেকে অনেক আগেই উন্নত দেশগুলো বেরিয়ে গেছে। তারা কারিগরি শিক্ষাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশ্বের যত উন্নয়নশীল দেশ রয়েছে তারাও কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে উন্নত দেশের সারিতে ওঠার চেষ্টা করছে। আর আমাদের দেশের কারিগরি শিক্ষা সমাপ্তকারী বেকারদের আর্তনাদ শুনলে যে কারো বুক ফেঁটে যাবে। দেশে স্বল্পসংখ্যক সরকারি, বেসরকারি পলিটেকনিক ছাড়া বেশির ভাগেই মানের ঘাটতি রয়েছে। রয়েছে ল্যাবরেটরি, ওয়ার্কশপ ও দক্ষ শিক্ষকের অভাব। হাতে-কলমে আর যন্ত্রের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়ার যথেষ্ট ব্যবস্থা না থাকাসহ সরাসরি ব্যবহারিক কাজে অংশগ্রহণের সুবিধাও কম। কারিগরি শিক্ষায় সকল স্তরে আরো ব্যবহারিক বাস্তব জ্ঞান শিখনের ব্যবস্থা করা জরুরি। গ্রামের কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ল্যাবের ব্যবস্থা একেবারেই অপ্রতুল। উচ্চ কারিগরি জনশক্তি তৈরি ও কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সম্মিলিতভাবে এই খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহযোগিতা সরকারকেই করতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, মান উন্নয়ন, ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর লিংকেজ তৈরিসহ হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও ব্যবহারিকে সুযোগ করে দিতে হবে।
উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা কারিগরি শিক্ষায় যাচ্ছে না। এখনও কারিগরি শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র। সামাজিকভাবে এ পড়াশুনাকে মূল্যায়ন করা হয় না বলেই অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী এখানে আসতে চায় না। গবেষকরা বলেছেন, কারিগরি শিক্ষার প্রতি সমাজের অনেকেরই নেতিবাচক মনোভাব আছে। সামাজিকভাবে ধরে নেয়া হয়, যারা পড়াশুনায় ভালো নয় তারা টেকনিক্যাল এডুকেশনে আসবে। সামাজিক মনোভাব বদলালে আরো অনেকে কারিগরিতে আসতে উৎসাহিত হবে। এখনকার ছেলেদের লক্ষ্য বাংলা, ইংরেজি শিখবো, প্রশাসনে চাকরি নেব। অথচ চাকরির বাজারে এই শিক্ষা ও সনদের কতটুকু চাহিদা তার পরিসংখ্যান রাষ্ট্রীয়ভাবেও দেশে নেই। আমাদের কতজন শিক্ষিত হচ্ছে আর কতজন চাকরি পাচ্ছে তা জানা দরকার। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বাজার চাহিদার আলোকে নয়। ফলে কিছু সেক্টরে তৈরি হচ্ছে লাখ-লাখ শিক্ষিত বেকার ও কিছু সেক্টরে দক্ষ জনবলের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে উন্নয়ন, নির্ভর করতে হচ্ছে বিদেশি জনবলের উপর।
আমাদের শিল্প-কারখানা, গার্মেন্ট সেক্টর থেকে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বাইরের এক্সপার্টদের দিয়ে দিতে হয়। এখানে যদি আমাদের দেশের লোক কাজ করতে পারত তাহলে দেশের টাকা দেশেই রাখা সম্ভব হতো। তথ্য, প্রযুক্তি ও কারিগরি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, হল্যান্ডের একটি যন্ত্র যা আমাদের ক্রয় করতে লাগে ৬ থেকে ৮ কোটি টাকা। অথচ মাত্র ৪০ লাখ টাকায় পলিটেকনিক পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা তা তৈরি করেছে, যা একই পাওয়ারের, দক্ষতাসম্পন্ন ও একই কাজে ব্যবহার করতে পারছি।
দেশে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার বর্তমানে মাত্র ১৩.৬ শতাংশ। অথচ উন্নত দেশে এই হার ৩০ থেকে প্রায় ৭৫ শতাংশ। কারিগরি শিক্ষায় ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিংয়ে ১৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৪। আমরা মধ্যম আয়ের দেশ, উন্নত দেশ ও ডিজিটাল ডিজিটাল বলে গলা ফাটাই। অথচ একটি সেলাইয়ের সুই, বেøড, চাকু থেকে সবরকম খেলনা ও প্রশাধনী ক্রয়ে আমরা বিদেশের উপর নির্ভরশীল।
অর্থনীতির সঙ্গে যদি শিক্ষার সমন্বয় না থাকে তাহলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। ইলেকট্রনিকস ব্যবসা বলতে আমরা ভারত, চীন, কোরিয়া ও মালয়েশিয়াকেই বুঝি। আমাদের সমস্ত বাজারও তাদের দখলে। কারণ তারা তত্ত¡গত শিক্ষার চেয়ে ব্যবহারিক ও তথ্য প্রযুক্তির শিক্ষার ক্ষেত্রকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
বর্তমান যুগে শিক্ষা হতে হবে বাস্তব জীবনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কর্মমুখী ও জীবনমুখী শিক্ষা। যে শিক্ষা বাস্তব জীবনে কাজে লাগে না, সেই শিক্ষা অর্থহীন। বাংলাদেশের বিশাল সংখ্যক কর্মক্ষম জনশক্তিকে বাজারের চাহিদার আলোকে শিক্ষায় শিক্ষিত করা, ভাষাগত দক্ষতা এবং কারিগরি দক্ষতা দ্বারা যদি একটি দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করা যায়, তবেই বাংলাদেশকে ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তর করা সম্ভব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন