শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

গ্যাবা, যেখানে হারতে জানে না অজিরা

উত্তাপ টের পাচ্ছেন? শুরু হয়ে গেছে যে অ্যাশেজ লড়াই!

বিনোদন ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

টেস্টে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড লড়াই মানেই যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব চলে আসে ক্রিকেট বিশ্বে। অ্যাশেজ বলেই ক্রিকেট বিশ্বের বাতাসে আবেদন ও উন্মাদনার কমতি নেই। গত এক মাসের সব বিতর্ক পেছনে ফেলে ইতিহাসের এই আদি দ্বৈরথে আগুনের ফুলকি ছড়ানোর জন্য প্রস্তুত জো রুট ও স্টিভ স্মিথরা। সিরিজ শুরুর আগের মনস্তাত্তি¡ক লড়াইয়ের ইতি টেনে ব্রিসবেনের গ্যাবায় ভোর থেকেই সেই আগুনে ঝাপ দিয়েছে দুই দলের সদস্যরা।
অ্যাশেজের ছোট ট্রফিটি ইংলিশদের কাছে থাকলেও ইংলিশরাও জানে, অর্জনের চেয়ে ধরে রাখা কঠিন। বিশেষ করে সিরিজটি যখন অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে, তখন গলা উঁচু করে ইংলিশদের ফেভারিট বলা যুক্তিযুক্ত নয়। বিশেষ করে ২০১৩-১৪ অ্যাশেজে ৫-০ ব্যবধানে হারের তিক্ত অভিজ্ঞতা সহজে ভুলবার নয়। ডাউন আন্ডারে ধবল ধোলাইয়ের পুনরাবৃত্তি করতে চাইবে স্মিথ অ্যান্ড কোং। মিচেল স্টার্ক, জস হেজেলউড, প্যাট কামিন্সরা জনসনের অ্যাশেজ ফিরিয়ে আনার সামর্থ্য রাখে।
প্রথমবারের মত এই তিন ফাস্ট বোলারকে লেলিয়ে দিতে যাচ্ছে অজিরা। মিচেল স্টার্ক ও জস হেজেলউড, নিউ সাউথ ওয়েলসের এই ফাস্ট বোলার এক সাথে বেড়ে উঠলেও অপেক্ষাকৃত তরুন কামিন্সের অন্তর্ভুক্তি অজিদের শক্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে। ব্যাটিংয়ে ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভ স্মিথ ছাড়া অজি দলে বাজি ধরার মত কেউ না থাকলেও বোলিং আক্রমন ও নিজেদের কন্ডিশনের বিচারে এক পা এগিয়ে রেখে ব্রিসবেনের মাঠে নামবে অস্ট্রেলিয়ানরা।
গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসও হতে পারে ইংলিশদের ভীতির কারন। ১৯৮৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত গ্যাবায় হারে নি অস্ট্রেলিয়ানরা। ২৮ টেস্টের ২১টিতেই জয় পেয়েছে চ্যাপেল-বর্ডারদের উত্তরসূরিরা। অন্যদিকে স্টার অলরাউন্ডার বেন স্টোকস ছাড়াই ক্রিকেটের সবচাইতে বড় পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত ইংলিশরা। অভিজ্ঞ জিমি অ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রডের সাগর সমান অভিজ্ঞতায় বিশ্বাস রাখতে বাধ্য হতে হচ্ছে রুট বাহিনীকে। একের পর এক ইনজুরিতে পছন্দের পেসারদের বেশিরভাগকেই হারিয়ে বসেছে ইংলিশরা। যার কারনে গত গ্রীষ্মে ইংলিশদের মাটিতে দুর্দান্ত পারফর্ম করা ক্রিস ওকসকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে।
তার উপর মইন আলির অফ স্পিন কাজে লাগাতে চাইবে জো রুট। ব্যাটিংয়ে অজিদের মতই দুই খুঁটির উপর দাঁড়িয়ে ইংলিশরা। টপ অর্ডারে টেস্টে এগারো হাজার রানের মালিক অ্যালিস্টার কুক ও কাপ্তান রুট ব্যাতিত কেউই পূর্বে অ্যাশেজ সিরিজে খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নয়।
তবে ইংল্যান্ডের মূল শক্তি পুঞ্জীভূত লোয়ার মিডেল অর্ডারে। মইল আলি, জনি বেয়ারস্টো ও ক্রিস ওকসরা গত দুই বছরে ইংলিশদের দেয়ালের দায়িত্ব পালন করে আসছে। তবে এই তালিকায় বেন স্টোকসের অভাব হাড়েহাড়ে টের পাবে ইংলিশরা। সব মিলিয়ে হাড্ডাহাড্ডি ক্রিকেট ও স্নায়ুর লড়াইয়ের দেখার অপেক্ষায় আছে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব।
মুখোমুখি ১৪০ বছরের লড়াইয়ে দুই দলই পাল্লা দিয়ে এসেছে সমানে সমানে। ৬৯ টি সিরিজ খেলে একে অপরের বিপক্ষে ৩২ টি সিরিজ জিতেছে। তাইতো এবারের অ্যাশেজে সিরিজে জয় দিয়েই দুই দলই চাইবে মর্যাদার লড়াইয়ে নিজেদের এগিয়ে নিতে। শেষ পাঁচবারের অ্যাশেজ লড়াইয়ে ৪ বার জয় পায় ইংলিশরা। তবে ২০১৩ অ্যাশেজে অজিদের মাঠে ইংলিশদের ধবল-ধোলাইয়ে সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে।
সিরিজে ৩৭ উইকেট নিয়েছিলেন মিচেল জনসন। অসি এই পেসারের আগুনে ফর্মেই পুড়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। এবার তাহলে আগুন ঝরাবেন কে? অসি অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ অবশ্য ময়দানী যুদ্ধের আগে রণ হুঙ্কার দিয়ে রাখলেন এ নিয়ে। জানালেন তার পুরো পেস আক্রমণই এবার মাতবে ধ্বংসলীলায়! জনসন যুগের পর এবার মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্সেই আস্থা স্মিথের, ‘অনুশীলনে ওদের ভালো করেই দেখলাম। ওদের দেখতে পারাটা ছিল উত্তেজনায় ভরপুর।’ গতি দিয়ে ইংল্যান্ড শিবিরে কাঁপন ধরিয়ে দিতে চান অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। উত্তেজনার সেই রেণু এবার অনুশীলনেই উড়তে দেখেছেন স্মিথ। তাই রোমাঞ্চটা আর চেপে রাখলেন না, ‘নেটে ওদের সেশনগুলোর মুখোমুখি হয়েছিলাম। কামিন্স ও স্টার্ক যেভাবে বল করেছে সেটা ছিল আতঙ্কজনক। যেটা দেখে আমরা সবাই রোমাঞ্চিত ছিলাম।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমার বোলাররা খেলতে মুখিয়ে আছে। তারা এতই দ্রæততার সঙ্গে বোলিং করছে যে, পুরো দলই তাতে রোমাঞ্চ অনুভব করছে।’
দলটির অস্ট্রেলিয়ান কোচ ট্রেভর বেলিস বলেছেন যে কোন কিছুর জন্যই প্রস্তুত তারা, ‘ অস্ট্রেলিয়া শুরুতেই প্রতিপক্ষকে আঘাত হানতে পছন্দ করে এবং আমরাও শক্তভাবেই মাঠে নামার বিষয়ে নিজেরা আলোচনা করেছি। একটা এ্যাশেজ টেস্টে আপনি যতটুকু সম্ভব আমাদের প্রবলতা দেখবেন। আমরা এখানে সংখ্যা বাড়াতে আসিনি। আমরা এখানে জিততে এসেছি। আমরা আত্মবিশ্বাসী।’
দু’দলের লড়াইয়ের ইঙ্গিত, উপভোগ্য কিছুই অপেক্ষা করছে ক্রিকেট বিশ্বের জন্য!

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন